إعدادات العرض
হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে নূর (বা আলো) দান করুন, আমার চোখে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার ডানে…
হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে নূর (বা আলো) দান করুন, আমার চোখে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার ডানে নূর দান করুন, আমার বামে নূর দান করুন, আমার উপরে নূর দান করুন, আমার নিচে নূর দান করুন, আমার সামনে নূর দান করুন, আমার পেছনে নূর দান করুন, আমার জন্য নূর দান করুন।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাইমুনাহর নিকট রাত যাপন করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাহ ওঠে প্রয়োজন পূরণ করলেন, তাপর দুইহাত ও চেহারা ধুইলেন। তারপর ঘুমালেন অতঃপর ঘুম থেকে উঠলেন। তার জন্য পানির পাত্রটি আনা হলো তিনি পাত্রের মুখ খুললেন। অতঃপর তিনি দুইটি ওযূর মাঝে মধ্যপন্থী ওযূ করলেন, যাতে বাড়ালেন না অথচ পরিপূর্ণ ওযূ করলেন। তিনি সালাত আদায় করলেন। আমি তাকে পর্যবেক্ষণ করছি দেখে ফেলবেন অপছন্দ করে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উঠলাম। আমি ওযূ করলাম। তিনি সালাতে দাড়ালে আমিও তার বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার কান ধরে আমাকে তার ডান পাশে ঘুরিয়ে দিলেন। তারপর তের রাকা‘আত সালাত পূর্ণ করলেন। তারপর তিনি কাত হয়ে নাক ডেকে ঘুমালেন। তার অভ্যাস ছিল যখন ঘুমাতেন নাক ডাকতেন। তারপর বিলাল সালাতের ঘোষণা দিলে তিনি সালাত আদায় করেন তবে ওযূ করলেন না। তিনি দো‘আয় বলতেন, “হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে নূর (বা আলো) দান করুন, আমার চোখে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার ডানে নূর দান করুন, আমার বামে নূর দান করুন, আমার উপরে নূর দান করুন, আমার নিচে নূর দান করুন, আমার সামনে নূর দান করুন, আমার পেছনে নূর দান করুন, আমার জন্য নূর দান করুন”।
الترجمة
العربية Bosanski English Español فارسی Français Bahasa Indonesia Русский Tagalog Türkçe اردو हिन्दी 中文 Kurdîالشرح
এ হাদীসটিতে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সংবাদ দেন, তিনি তার খালা ও রাসূলের স্ত্রী মাইমুনাহর নিকট রাত যাপন করেন। “তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করলেন”। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা পেশাবের প্রয়োজন সারলেন। “তাপর দুইহাত ও চেহারা ধুইলেন। তারপর ঘুমালেন”। প্রয়োজন পুরণ করার পর সে তার চেহারা দুইলেন উদ্যোমী হওয়ার জন্য এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য হাত ধুইলেন। “তারপর ঘুম থেকে উঠে পানির পাত্রের নিকট আসলেন ও তার মুখ খুললেন”। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে ওঠার পর পাত্রের নিকট গেলেন এবং পাত্রের ভিতরের পানি বা অন্য কিছু সংরক্ষণের জন্য সে রশি দিয়ে মুখ বাঁধা হয় তা খুললেন। “অতঃপর ওযূ করলেন” সালাতের ওযূর মতো। “দুইটি ওযূর মাঝে মধ্যপন্থী ওযূ করলেন” তাতে কোন কমতি ও বাড়াবাড়ি ছিল না” তা ছিল মাঝামাঝি। এ কারণেই তিনি বলেন, বেশি করলেন না অর্থাৎ তিনবারের কমের মধ্যে সারলেন। এটি জায়েয আছে তবে সুন্নাত হলো তিনবার। “অথচ তিনি পরিপূর্ণ ওযূ করলেন”। অর্থাৎ যেখানে পানি পৌঁছানো ওয়াজিব সেখানে পানি পৌঁছালেন। এতটুকু স্থানে পানি পৌঁছানো ওয়াজিব। “তিনি সালাত আদায় করলেন” অর্থাৎ রাতের সালাত। “আমি দাঁড়ালাম ও গোপনীয়তা অবলম্বন করলাম” ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইিহ ওয়াসাল্লামের কর্মগুলো পর্যবেক্ষণ করতে ছিলেন, তবে তিনি তা ছাপিয়ে গেলেন ও তার বিপরীত প্রকাশ করলেন যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না বুঝেন যে সে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। এ জন্যে তিনি বলেছেন: “আমি তাকে পর্যবেক্ষণ করছি সেটা অপছন্দ করে” অর্থাৎ আমি তাকে দেখছি ও তার কর্মগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। এ কারণে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ছাপিয়ে গেছেন এবং দেখে না-দেখার ভান করেছেন। কারণ মানুষ নিজের ঘরে একাকি হলে এমন কিছু কাজ করে যা কেউ দেখুক সেটা সে চায় না, অথবা তার পর্যবেক্ষণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেনে ফেললে হয়তো তিনি কিছু আমল ছেড়েও দিতে পারেন, কারণ তার অভ্যাস ছিল উম্মতের ওপর ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি কতক আমল ছেড়ে দিতেন। ইবন আব্বাস তার কর্মগুলো গোপন রাখতে চাইলেন যেন সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘুম থেকে ওঠা হতে সালাতের জন্যে আহ্বানকারীর আসা পর্যন্ত সকল আমল খুটিয়ে খুৃটিয়ে দেখতে পারেন। এটা তার সরাসরি ইলম অর্জন করার প্রবল আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন “আমি ওযূ করলাম” অপর বর্ণনায় বর্ণিত: “আমি ওযূ করলাম তিনি যেভাবে ওযূ করলেন”। সহীহ বুখারীর অপর বর্ণনায় বর্ণিত: “আমি উঠে দাড়ালা এবং তিনি যা করলেন আমিও তা করলাম”। “তিনি সালাতে দাড়ালে আমিও তার বাম পাশে দাঁড়ালাম”। অর্থাৎ ইবন আব্বাস যখন দেখলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে প্রবেশ করলেন তখন তিনি নিজেও ওযূ করলেন এবং রাসূলের সাথে সম্পৃক্ত হলেন। তবে তিনি তার বাম পাশে দাড়ালেন। “তাই তিনি আমার কান ধরেন” অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কান ধরলেন এবং তাকে বাম দিক থেকে ঘুরিয়ে তার ডান পাশে নিয়ে গেলেন। অপর বর্ণনায় বর্ণিত: “তার ডান হাত আমার মাথার ওপর রাখলেন এবং স্বীয় হাত দ্বারা আমার ডান কান ধরলেন এবং মলতে লাগলেন”। প্রথমে হাত রাখলেন যাতে কান ধরতে পারেন অথবা হাত প্রথমে মাথাই পড়ছিল অথবা যাতে হাতের বরকত তার ওপর অবতীর্ণ হয় যার দ্বারা সে এ মজলিশ ও অন্যান্য মজলিশের সব আমল সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়। সে বলল, “এবং তা মোছড়ালেন”। হয় সুন্নাতের খেলাফ করার কারণে সর্তক করতে, অথবা এ সব কর্মসমূহ সংরক্ষণে তার সতর্কতা বৃদ্ধি করার জন্য, বা তার তন্দ্রাচ্ছন্নতা দূর করার জন্য, অথবা বাম থেকে ডানে ঘুরানোর জন্য, অথবা বিষয়টি রাতের অন্ধকারে হওয়াতে তার নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য যেমন সহীহ বুখারির বর্ণনায় বিষয়টি ইবন আব্বাস নিজেই স্পষ্ট করেন, অথবা তাকে জাগানোর জন্য বা তার প্রতি মহব্বত প্রকাশ করার জন্য। কারণ, কম বয়স হওয়ার কারণে তার অবস্থা এরই দাবিদার। “তারপর তিনি আমাকে তার ডান দিকে ঘুরিয়ে দিলেন”। অর্থাৎ তাকে বাম দিক থেকে ঘুরিয়ে তার ডান পাশে নিয়ে গেলেন। মুক্তাদী একজন হলে এটিই তার দাড়ানোর স্থান। “তার সালাত পূর্ণ হল”। এ কথার ব্যাখ্যা তিনি করেন। “তের রাকা‘আত সালাত পূর্ণ করলেন”। অর্থাৎ এ রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরসহ তের রাকা‘আত সালাত আদায় করেন। প্রতি দুই রাকা‘আতের পর সালাম দ্বারা ব্যবধান করেন। যেমনটি সহীহ বুখারীর বর্ণনায় বর্ণিত: প্রতি দুই রাকা‘আতে সালাম ফিরাতেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় বর্ণিত: “তারপর তিনি দুই রাকা‘আত পড়েন, তারপর দুই রাকা‘আত, তারপর দুই রাকা‘আত, তারপর দুই রাকা‘আত, তারপর দুই রাকা‘আত, তারপর দুই রাকা‘আত, তারপর এক রাকা‘আত বিতির আদায় করেন। অর্থাৎ দুই রাকাত থেকে পৃথক করে এক রাতাক আদায় করেন। কারণ, দুই রাকা‘আত, দুই রাকা‘আত করে ছয় বার পড়লে বিতিরের এক রাকা‘আত ছাড়া মোট বারো রাকা‘আত হবে। রাসূলের মোট সালাত ছিল তের রাকা‘আত। তাহলে বিতির কেবল এক রাকা‘আত বাকী ছিল। “তারপর তিনি কাত হয়ে নাক ডেকে ঘুমালেন”। অর্থাৎ. তিনি এমন আওয়াজে নিঃশ্বাস ছাড়তেন তার নাক ডাকার আওয়াজ শোনা যেত। আর তার অভ্যাস ছিল যখন ঘুমাতেন নাক ডাকতেন। “তারপর বিলাল সালাতের ঘোষণা দিলেন” অর্থাৎ তিনি তাকে ফজরের সালাত সম্পর্কে অবহিত করলেন। “ফলে তিনি প্রথমে ফজরের সুন্নাত পড়লেন। তারপর তিনি মসজিদে গমন করলেন এবং ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করলেন। তবে ওযূ করলেন না। বরং পূর্বে ওযূ দ্বারা সালাত আদায় করলেন”। এটি তার বৈশিষ্ট্য। তার ঘুম ওযূ ভঙ্গকারী নয়। কারণ, তার চোখ ঘুমায় কিন্তু তার অন্তর জাগ্রত থাকে। যদি কোন নাপাকী বের হতো তবে তিনি অবশ্যই অনুভব করতেন। কিন্তু অন্যান্য মানুষ তার মতো নয়। এ কারণেই আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যখন বললেন, “আপনি বিতির পড়ার আগে ঘুমান? তিনি বলেন, (হে আয়েশা আমার দুই চোখ ঘুমায় আমার অন্তর ঘুমায় না)। তিনি দো‘আয় বলতেন, অর্থাৎ এ রাতের দো‘আসমূহের মধ্যে এটি একটি দো‘আ “হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে নূর (বা আলো) দান করুন, আমার চোখে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার ডানে নূর দান করুন, আমার বামে নূর দান করুন, আমার উপরে নূর দান করুন, আমার নিচে নূর দান করুন, আমার সামনে নূর দান করুন, আমার পেছনে নূর দান করুন, আমার জন্য নূর দান করুন”। তিনি তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ও দিক সমূহে নূর কামনা করেন। এ দ্বারা উদ্দেশ্য হক ও তার রশ্নির বর্ণনা করা এবং তার প্রতি পথ দেখানো। ফলে তিনি তার সমগ্র অঙ্গ, দেহ, কার্যকলাপ, উঠবস, অবস্থা এবং ছয়টি দিকসহ সব বিষয়ে নূর কামনা করেন যাতে তার কোন কিছুই তার থেকে বিচ্যুত না হয়।