আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “যারা আমার জন্যে পরম্পরকে মহব্বত করে, আমার খাতিরে পরস্পর বসে, আমার খাতিরে পরস্পর সাক্ষাৎ…

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “যারা আমার জন্যে পরম্পরকে মহব্বত করে, আমার খাতিরে পরস্পর বসে, আমার খাতিরে পরস্পর সাক্ষাৎ করে ও আমার খাতিরে একে অপরের জন্যে খরচ করে তাদের জন্য আমার মহব্বত ও ভালবাসা ওয়াজিব হয়ে গেল।

আবূ ইদ্রীস খাওলানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি দিমাশ্কের মসজিদে প্রবেশ করে এক যুবককে দেখতে পেলাম, তাঁর সামনের দাঁতগুলি খুবই চকচকে এবং তাঁর সঙ্গে কিছু লোকও (বসে) রয়েছে। যখন তারা কোন বিষয়ে মতভেদ করছে, তখন (সিদ্ধান্তের জন্য) তাঁর দিকে রুজু করছে এবং তাঁর মত গ্রহণ করছে। সুতরাং আমি তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম (যে, ইনি কে)? (আমাকে) বলা হল যে, ‘ইনি মু`আয বিন জাবাল।’ অতঃপর আগামী কাল আমি আগেভাগেই মসজিদে গেলাম। কিন্তু দেখলাম সেই (যুবকটি) আমার আগেই পৌঁছে গেছেন এবং তাঁকে নামাযরত অবস্থায় পেলাম। সুতরাং তাঁর সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সামনে এসে তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর বললাম, ‘আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম।’ অতঃপর তিনি আমার চাদরের আঁচল ধরে আমাকে তাঁর দিকে টানলেন, তারপর বললেন, ‘সু-সংবাদ নাও।’ কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “যারা আমার জন্যে পরম্পরকে মহব্বত করে, আমার খাতিরে পরস্পর বসে, আমার খাতিরে পরস্পর সাক্ষাৎ করে ও আমার খাতিরে একে অপরের জন্যে খরচ করে তাদের জন্য আমার মহব্বত ও ভালবাসা ওয়াজিব হয়ে গেল”।

[সহীহ] [এটি আহমাদ বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

এ হাদীসটিতে আল্লাহর জন্যে পরস্পরকে ভালোবাসার ফযীলত রয়েছে। অর্থাৎ এসব কর্ম সম্পাদনকারী দু’পক্ষের প্রত্যেকে, যেমনটি তাফঊলের ছিগা প্রমাণ করে, যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ক্ষণস্থায়ী ও দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে ত্যাগ করে এসব কর্ম আঞ্জাম দেয়, তখন তার জন্যে মাওলার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়। এটি মহান প্রতিদান, যা আল্লাহর জন্য সম্পাদিত কোনো কাজের মহত্বকে প্রমাণ করে। বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্যে ভালোবাসে ও দুশমণি করে এবং যে আল্লাহর জন্যে দান করে ও বারণ করে সে ঈমান পূর্ণ করে নিল। তার বাণীতে “আমি বললাম ‘আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম? আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম”। প্রমাণ রয়েছে যে, সংবাদকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের মুখে কসমের প্রচলন ছিল। বারবার কসম খাওয়া ও তলব করা সংবাদকে আরও শক্তিশালী করে। আর তার বাণী: “অতঃপর তিনি আমার চাদরের আঁচল ধরেন”। অর্থাৎ, যে চাদর দ্বারা দেহ আবৃত করে তার দুই পাশ। তার বাণী : “আমাকে তাঁর দিকে টানলেন”। অর্থ তাকে কাছে আনা, তাকে মহব্বত করা ও তার সংবাদকে গ্রহণ করা; এবং তার মত আমলকারী ব্যক্তির জন্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সু সংবাদ প্রদান করা। তাই তিনি বললেন, ‘সু-সংবাদ নাও।’ অর্থাৎ, তুমি যার ওপর আছো তার ওপর। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন” আবূ ইদ্রীস যাতে পুরোপুরি বিশ্বাস করে এবং তার জন্য সুসংবাদটি পরিপূর্ণ হয়, তাই রাসূল যিনি পরম সত্যবাদী তার কথার সাথে এ কথা যোগ করেছেন যে, তিনি (রাসূল) আল্লাহর পক্ষ থেকে বলেছেন। এটি মু‘আযের নিজস্ব মতামত নয়। “আমার মহব্বত ও ভালবাসা ওয়াজিব হয়ে যায়”। অর্থাৎ তাদের জন্য আমার মুহাব্বত অবধারিত হয়ে যায়। “যারা পরম্পরে মহব্বত রাখে ও একে অপরের সঙ্গে আমার সন্তুষ্টির জন্য বসে” অর্থাৎ তাদের বসার উদ্দেশ্য আল্লাহর যিকিরে, তার বিধান বাস্তবায়নে, তার ওয়াদা পূর্ণ করণে, তার নির্দেশ পালনে, তার শরী‘আতের সংরক্ষণে, তার আদেশসমূহের অনুসরণ ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে দূরে থাকার ক্ষেত্রে একে অপরকে সাহায্য করা। আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ কারী” এ দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহ ভালো জানেন-একে অপরের সাথে সাক্ষাত করা আল্লাহর জন্যে, আল্লাহর সত্ত্বার ক্ষেত্রে ও তার চেহারার মহব্বতে তার সন্তুষ্টি কামনা করা অথবা তার আনুগত্যের ওপর একে অপরকে সহযোগীতা করা। আল্লাহর বাণী: “এবং একে অপরের জন্য খরচ করে” তারা আল্লাহর সন্তষ্টিতে তাদের জীবনকে তার দুশমনদের বিরুদ্ধে জিহাদে উৎসর্গ করে ইত্যাদি যার প্রতি তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তাকে তার সম্পদ দেয় যদি প্রয়োজন পড়ে।

التصنيفات

ভালো লোকদের অবস্থাসমূহ