তোমাদের পূর্বেকার (মু’মিন) লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে…

তোমাদের পূর্বেকার (মু’মিন) লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে (পুঁতে) রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খণ্ড ক’রে দেওয়া হত এবং দেহের মাংসের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। কিন্তু এই (কঠোর পরীক্ষা) তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না।

খাব্বাব ইবন আরাত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলাম (এমতাবস্থায়) যে, তিনি কা’বা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম যে, ‘আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দু‘আ করবেন না?’ তিনি বললেন, “(তোমাদের জানা উচিত যে,) তোমাদের পূর্বেকার (মু’মিন) লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে (পুঁতে) রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খণ্ড ক’রে দেওয়া হত এবং দেহের মাংসের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। কিন্তু এই (কঠোর পরীক্ষা) তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ নিশ্চয় এই ব্যাপারটিকে (দ্বীন ইসলামকে) এমন সুসম্পন্ন করবেন যে, একজন আরোহী সানআ’ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে; কিন্তু সে (রাস্তায়) আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের উপর নেকড়ের আক্রমণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ।” একটি বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরকে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম করছিলেন এবং আমরা মুশরিকদের দিক থেকে নানা যাতনা পেয়েছিলাম।

[সহীহ] [এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

এ হাদীসে খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরাইশের কাফিরদের পক্ষ থেকে মুসলিমগণ মক্কায় যে কষ্ট পেয়েছেন তা বর্ণনা করেন। তারা অভিযোগ নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন। তখন তিনি কা‘বার ছায়ায় একটি চাদরকে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন যে, যারা আমাদের পূর্বের উম্মত ছিল, তারা তাদের দীনের ব্যাপারে আমাদের চেয়ে আরো বেশি কষ্টের সম্মূখীন হত। তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে (পুঁতে) রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খণ্ড ক’রে দেওয়া হত এবং দেহের মাংসের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। এ ছিল মহা কষ্ট। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপথ করে বলেন, আল্লাহ নিশ্চয় এই ব্যাপারটিকে সু-সম্পন্ন করবেন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইসলামের দা‘ওয়াত নিয়ে এসেছেন তা আল্লাহ সু-সম্পন্ন করবেন। এমনকি একজন আরোহী সানআ’ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে; কিন্তু সে (রাস্তায়) আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের উপর নেকড়ের আক্রমণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের তাড়াহুড়া পরিহার করার দিক নির্দেশনা দেন। তিনি তাদের বলেন, কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ।” অর্থাৎ, তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যের অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আল্লাহ এ ব্যাপারটিকে সু-সম্পন্ন করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সপথ করেছিলেন ব্যাপারটি সে রকমই হয়েছিল।

التصنيفات

মাক্কী জীবন