হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত পাইনি, পরে আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন?…

হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত পাইনি, পরে আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমরা ছিলে অভাবগ্রস্ত, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবন যায়দ ইবন আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের দিবসে আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গনীমতের সম্পদ দান করলেন, তখন তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলেন, যাদের হৃদয়কে ঈমানের ওপর সুদৃঢ় করার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে তিনি কিছুই দেননি। ফলে তারা যেন নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যান্য লোক যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, “হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত পাইনি, পরে আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমরা ছিলে অভাবগ্রস্ত, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন। এভাবে যখনই তিনি সেদিন কোনো কথা বলেছেন তখন আনসারগণ জবাবে বলেছেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই আমাদের ওপর অধিক অনুগ্রহকারী। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূলের জবাব দিতে তোমাদেরকে বাধা দিচ্ছে কিসে? তারা তখনও তিনি যা কিছু বলছেন তার উত্তরে বলে গেলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই আমাদের ওপর অধিক অনুগ্রহকারী। তিনি বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে বলতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন সময়ে এসেছেন (লোকেরা যখন আপনাকে মিথ্যুক বলেছিল তখন আমরা আপনাকে সত্যায়ন করেছি, আপনি আমাদের কাছে এসেছেন অসহায় অবস্থায়, অতঃপর আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি...)। কিন্তু তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা বকরী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহর নবীকে সাথে নিয়ে? আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি আমাকে হিজরত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তা হলে আমি আনসারদেরই একজন হতাম। লোকজন যদি কোনো উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তাহলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। আনসারগণ হলো আমার দেহ সংযুক্ত গেঞ্জি আর অন্যান্য লোক হল উপরের জামাস্বরূপ। আমার বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্যধারণ করবে। অবশেষে তোমরা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।”

[সহীহ] [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

الشرح

আল্লাহ যখন তার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুনাইয়েন যুদ্ধে অনেক গনীমত দান করলেন এবং তিনি তায়েফ অবরোধ প্রত্যাহার করার পরে গনীমতের মালের দিকে মনোনিবেশ করলেন। গণীমতের অধিকাংশ ছিল গৃহপালিত পশু। তাতে চল্লিশ হাজার উট এবং এক লক্ষ বিশ হাজার বকরী গণীমত হিসাবে জমা হয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন মুসলিমদের একদল লোককে তা দান করলেন। যাতে তাদের হৃদয়কে ঈমানের ওপর সুদৃঢ় করা যায়। এটা কতিপয় আনসার অপছন্দ করলেন। তবে তাদের বিশিষ্টজনরা জানতেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বণ্টন যথার্থ বণ্টন। যখন তাদের কথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছল, যেমন তাদের কেউ বলেছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সব লোকদের গনীমত দেন যাদের রক্ত এখনও আমাদের তলোয়ার থেকে টপকে পড়ছে; অথচ তিনি আমাদেরকে পরিহার করছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এক প্রশস্ত জায়গায় একত্রিত হতে নির্দেশ দিলেন। তারা একত্র হলো। তিনি বললেন তোমাদের এ কি কথা আমার নিকট পৌঁছেছে...! তাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং তাদেরকে ভর্ৎসনা করলেন। আর তারা তাঁর জন্য ও তার আনীত ইসলামের জন্য যে সাহায্য করেছে তাও তিনি স্বীকার করলেন। ফলে তাদের অন্তর খুশী হলো। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য যে মহা প্রতিদান সঞ্চয় করে রেখেছেন, তারা তাও জানতে পারলো। জানতে পারলো নবীর সাহচর্য পেয়ে ধন্য হওয়ার কথা ও তাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মহা প্রতিদানের বিষয়টি। সাথে সাথে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যে অবদান রেখেছেন ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার বিনিময়ে আখিরাতে আল্লাহর সঞ্চিত অশেষ নি‘আমতের কথাও জানলো। তাই তার পরে তারা যে অগ্রাধিকার দেখবে সে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ধৈর্যধারণ করতে আদেশ দিলেন। দেখুন, তাইসীরুল আল্লাম, পৃ. ৩০৬; তানবীহুল আফহাম, (৩/৪০৩); তা’সীসুল আহকাম, (৩/১৯৭)।

التصنيفات

সাহাবীগণের ফযীলত, জিহাদের বিবিধ বিধান ও মাসআলা