নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ পড়তেন, اللهم إني أعوذ بك مِنَ البَرَصِ، والجُنُونِ، والجُذَامِ، وَسَيِّيءِ الأسْقَامِ অর্থাৎ,…

নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ পড়তেন, اللهم إني أعوذ بك مِنَ البَرَصِ، والجُنُونِ، والجُذَامِ، وَسَيِّيءِ الأسْقَامِ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট শেত, উম্মাদ, কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার কঠিন ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, «اللهم إني أعوذ بك من البَرَصِ، والجُنُونِ، والجُذَامِ، وَسَيِّئِ الأسْقَامِ» অর্থাৎ, হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট শ্বেতী, উম্মাদ, কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার কঠিন ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

[সহীহ] [এটি নাসাঈ বর্ণনা করেছেন। - এটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন। - এটি আহমাদ বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

হাদীসটিতে বলা হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তবে এ সব ব্যাধি থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আশ্রয় চাওয়া প্রমাণ করে এ ব্যাধিগুলো খুব বিপদ জনক ও মারাত্মক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতক ব্যাধি থেকে বিশেষভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। অতঃপর তিনি অন্যান্য ব্যাধির ক্ষতি থেকেও ক্ষমা ও নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে চেয়েছেন। ফলে এ দো’আ বিশেষ ব্যাধি ও ব্যাপক ব্যাধি দুটিকেই অন্তর্ভুক্ত করে। এক অংশ বিস্তারিত এবং অপর অংশ সামগ্রিক ও ব্যাপক। আর তার বর্ণনা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং তিনি বলেন, হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট শ্বেতী থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আর তা হলো দেহ সাদা হওয়া। এ ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষ থেকে অন্যান্য মাখলুক দূরে সরে থাকে, যার ফলে রোগী একাকী হয়ে যায় যা অনেক সময় আল্লাহর তাকদীরের ওপর তাকে অসন্তুষ্টি করে তুলে। নাঊযু বিল্লাহ। আর তিনি উন্মাদনা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। আর তা হলো মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি চলে যাওয়া। মানুষের জ্ঞানই হলো আল্লাহর বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্র। এর দ্বারাই একজন মানুষ তার রবের ইবাদত করে এবং তার মাখলুক ও মহান কালামের মধ্যে চিন্তা ও গবেষণা করে। একজন মানুষের জ্ঞান না থাকা মানে তার থাকাটাই অর্থহীন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তি থেকে কলম তুলে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন পাগল যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায়। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুষ্ঠরোগ থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। এটি এমন একটি ব্যাধি যা মানুষের অঙ্গে এমনভাবে আক্রান্ত হয় যার ফলে তার দেহের মাংস জরে পড়ে। নাঊযুবিল্লাহ। এটি একটি সংক্রামক ব্যাধি। এ কারণেই একটি হাদীসে এসেছে, তুমি কুষ্ঠরোগ থেকে এমনভাবে পলায়ন কর যেমনি-ভাবে বাঘ থেকে পলায়ন কর। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল প্রকার কঠিন ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। অর্থাৎ সকল প্রকার কঠিন ব্যাধি। আর তা হলো এমন সব ব্যাধি যা একজন মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করে, আক্রান্ত ব্যক্তি মানুষের মধ্যে ঘৃণিত হয়, যেমন প্যারালাইসিস, অন্ধত্ব ও ক্যান্সার ইত্যাদি। কারণ, এগুলো এতই মারাত্মক ব্যাধি যেগুলোর চিকিৎসায় অনেক সম্পদের প্রয়োজন হয়। আর অনেক ধৈর্য ধারণ করতে হয় যা একমাত্র আল্লাহ যাদের তাওফীক দিয়েছেন এবং যারা তাদের অন্তরকে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করেছেন তাদের দ্বারাই সম্ভব। এ হাদীসের মধ্যে ইসলামের মহত্ব প্রকাশ পায়, যাতে একজন মুসলিমের দেহ ও দীন উভয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

التصنيفات

কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত দো‘আসমূহ