সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যদি তোমরা সর্বদা এ অবস্থায় থাকতে, যে অবস্থাতে তোমরা আমার নিকটে থাক এবং…

সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যদি তোমরা সর্বদা এ অবস্থায় থাকতে, যে অবস্থাতে তোমরা আমার নিকটে থাক এবং সর্বদা আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকতে, তাহলে ফিরিশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের পথে তোমাদের সঙ্গে মুসাফাহা করতেন। কিন্তু হে হানযালাহ! (সর্বদা মানুষের এক অবস্থা থাকে না।) কিছু সময় (ইবাদতের জন্য) ও কিছু সময় (সাংসারিক কাজের জন্য)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সচিব আবূ রিব‘ঈ হানযালাহ ইবন রাবী‘ আল-উসাইয়িদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘হে হানযালাহ! তুমি কেমন আছ?’ আমি বললাম, ‘হানাযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে!’ তিনি (আশ্চর্য হয়ে) বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! এ কি কথা বলছ?’ আমি বললাম, ‘আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে থাকি, তিনি আমাদের সামনে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করেন, যেন আমরা তা স্বচক্ষে দেখছি। অতঃপর যখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে বের হয়ে আসি, তখন স্ত্রী, সন্তান, ও অন্যান্য কারবারে ব্যস্ত হয়ে অনেক কিছু ভুলে যাই।’ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমাদেরও এই অবস্থা হয়।’ সুতরাং আমি ও আবূ বকর গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির হলাম। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! হানযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সে কি কথা?” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যখন আপনার নিকটে থাকি, তখন আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনান; যেন আমরা তা প্রত্যক্ষভাবে দেখছি। অতঃপর আমরা যখন আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যাই এবং স্ত্রী, সন্তান ও কারবারে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন অনেক কথা ভুলে যাই। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যদি তোমরা সর্বদা এই অবস্থায় থাকতে, যে অবস্থাতে তোমরা আমার নিকটে থাক এবং সর্বদা আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকতে, তাহলে ফিরিশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের পথে তোমাদের সঙ্গে মুসাফাহা করতেন। কিন্তু ওহে হানযালাহ! (সর্বদা মানুষের এক অবস্থা থাকে না।) কিছু সময় (ইবাদতের জন্য) ও কিছু সময় (সাংসারিক কাজের জন্য)।” তিনি এ কথা তিনবার বললেন।

[সহীহ] [এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

হানযালাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবূ বকর সিদ্দিককে এ সু-বংবাদ দেন যে, তিনি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থাকেন তখন তার যে অবস্থা হয়, অন্য সময় সেই অবস্থা হয় না। কারণ, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ-যিকির করার অবস্থায় থাকেন। আর যখন তারা ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও দুনিয়াদারিতে লিপ্ত হন, তখন তাদের অবস্থা পরিবর্তন হয়। তিনি ধারণা করলেন এটি কপটতা বা নিফাক। কারণ, নিফাকের হাকীকত হচ্ছে অভ্যন্তর যে অবস্থা আছে বাইরে তার বিপরীত প্রকাশ করা। তারপর যখন তারা বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালো, তিনি তাদের বললেন, আমার নিকট থাকার সময় তোমাদের যে অবস্থা হয় তা যদি তোমাদের সব সময় থাকতো, তাহলে ফিরিশতাগণ হাত দ্বারা সালাম করত, এবং তোমাদের সর্বাবস্থায়। কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা হওয়াই উচিত। কিছু সময় স্বীয় রবের জন্য আর কিছু সময় পরিবার পরিজন ও দুনিয়ার জন্য।

التصنيفات

যিকিরের ফযীলত