হে আল্লাহর রাসূল! আমি খায়বারে এমন একটি যমীন পেয়েছি, ইতোপূর্বে আমি কখনো তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন সম্পদ লাভ করি নি,…

হে আল্লাহর রাসূল! আমি খায়বারে এমন একটি যমীন পেয়েছি, ইতোপূর্বে আমি কখনো তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন সম্পদ লাভ করি নি, আপনি তার বিষয়ে আমাকে কি নির্দেশনা দেন? তিনি বললেন: যদি চাও তুমি তার মালিকানা রেখে তার উৎপাদন সদকা করতে পার।

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খায়বারে একটি যমীন লাভ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তার ব্যাপারে পরামর্শ চান। যেমন তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি খায়বারে একটি যমীন পেয়েছি, ইতোপূর্বে আমি কখনো তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো সম্পদ লাভ করি নি, আপনি তার বিষয়ে আমাকে কি নির্দেশনা দেন? তিনি বললেন: যদি চাও তুমি তার মালিকানা রাখতে পার এবং উৎপাদনটা দান করতে পার। তিনি বললেন, তিনি তা সাদকা করে দিলেন। তবে মুল মালিকানা বিক্রি করা যাবে না, হেবা করা যাবে না এবং তার উত্তরাধিকারীও হওয়া যাবে না। তিনি বললেন, তারপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা ফকীর-মিসকীন, নিকটাত্মীয়কে, মুক্তিপণ আদায়ে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফির ও মেহমানদেরকে দান করে দেন। যে ব্যক্তি এ সম্পদের অভিভাবকত্ব করবে, তার জন্য জমা করার উদ্দেশ্য ব্যতীত তা থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ভক্ষণ করা বা বন্ধুকে খাওয়ানোতে কোনো অসুবিধা নেই।

[সহীহ] [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

الشرح

উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খায়বারে একটি যমীন লাভ করেন। তার পরিমাণ একশ অংশ। এটি ছিল তার নিকট তার সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে মুল্যবান। কারণ, যমীনটি খুবই ভালো ও উর্বর ছিল। আর সাহাবীগণ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম তো চিরন্তন কল্যাণের প্রতি আগ্রহী ও প্রতিযোগী ছিলেন। তাই তিনি আল্লাহর বাণী: {لَنْ تَنَالوا البِرً حَتًى تُنْفِقُوا مِمًا تُحِبونَ } “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণ লাভ করবে না যতক্ষণ না তোমরা যা মহব্বত কর তা থেকে ব্যয় কর।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত:৯২] বাস্তবায়ন কল্পে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে সদকা করার পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। তিনি তাকে সাদকার উত্তম প্রদ্ধতি বললেন, আর তা হলো মুল সম্পদ ধরে রেখে তার উৎপাদন ওয়াকফ করা। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাই করলেন, ফলে তার জমি ওয়াকফ হয়ে গেল। অতএব, তাতে বিক্রি অথবা দান অথবা উত্তরাধিকার ইত্যাদি কোনো প্রকার কর্তৃত্ব যাতে মালিকানা হস্তান্তর হয় বা তার কারণ হয় করা যাবে না। বরং তার উৎপাদন ফকীর, মিসকীন, নিকটাত্মীয় ও রক্তের সম্পর্কীয় আত্মীয়ের স্বার্থে, এবং তার দ্বারা গোলামী থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিপণ হিসেবে অথবা যাদের ওপর দিয়ত ওয়াজিব হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে দিয়ত হিসেবে এবং যারা আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত রাখতে ও তার দীনকে সাহায্য করতে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে তাদের স্বার্থে; অথবা মুসাফির যার খাদ্য ও পানীয়ের খরচা অপরিচিত শহরে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে ও মেহমানদেরকে মেহমানদারীর উদ্দেশ্যে খাওয়ানো ইত্যাদি কল্যাণমুলক কাজে ব্যয় করবে। মেহমানের মেহমানদারী করা আল্লাহর ওপর ঈমানের একটি অংশ। এ ছাড়াও এ সম্পদ তাদের প্রয়োজনে ব্যয় হবে যারা এই ওয়াকফের দায়-দায়িত্ব নেয় ও তার যত্ন করে। তারা তার থেকে ন্যায় সঙ্গতভাবে ভক্ষণ করবে। ফলে নিজের জন্যে সঞ্চয় করার উদ্দেশ্য পরিহার করে তা থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ভক্ষণ করতে ও বন্ধুকে খাওয়ানোতে কোনো অসুবিধা নেই। এ সম্পদ একমাত্র কল্যাণ ও ইহসানের পথে ব্যয় করার জন্যই নির্ধারণ করা হয়েছে, কারো সম্পদ বৃদ্ধি বা পুঁজি বানানোর জন্য নয়। জ্ঞাতব্য: ওয়াকফ হচ্ছে, মুসলিম কোনো একটি কল্যাণকর ক্ষেত্রে তার এমন সম্পদকে সদকা করবে যার উৎপাদন রয়েছে, ফলে তার উৎপাদন ওই খাতে ব্যয় করবে আর মূল সম্পদ অক্ষত থাকবে। তার দৃষ্টান্ত: ফকীরদের জন্যে কোনো একটি ক্ষেত ওয়াক্ফ করা হলো, তখন যে সব ফল ও ফসল তা থেকে উৎপন্ন হবে, তা ফকীরদের দেওয়া হবে এবং ক্ষেতটি মালিকানাধীন থেকে যাবে।

التصنيفات

ওয়াকফ