হে বনু সালেমা! তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই থাক। কারণ, তোমাদের সালাতের জন্য মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা…

হে বনু সালেমা! তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই থাক। কারণ, তোমাদের সালাতের জন্য মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়। তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই থাক। কারণ তোমাদের সালাতের জন্য মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়।

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত, (মসজিদে নববীর পাশে কিছু জায়গা খালি হলে) সালেমাহ গোত্র সেখানে এসে বসতি স্থাপন করতে মনস্থ করলো। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছলে তিনি তাদের (সালামাহ গোত্রের লোকদের) উদ্দেশ্যে বললেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা মসজিদের কাছে চলে আসতে চাও। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তাই মনস্থ করেছি। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে বনু সালেমাহ! তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই থাক। কারণ, তোমাদের সালাতের জন্য মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়।তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই থাক। কারণ, তোমাদের সালাতের জন্য মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়”। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে তোমাদের জন্য রয়েছে সাওয়াব।”

[সহীহ] [তার মতই এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

এ হাদীসের অর্থ: সালেমাহ গোত্র মসজিদে নববী থেকে দূরে অবস্থিত তাদের ঘর-বাড়ি থেকে কাছে চলে আসতে চাইল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাকে শূণ্য রেখে মসজিদে নববীর আশেপাশে সবার চলে আসা পছন্দ করলেন না; যেমনটি বুখারীর এক বর্ণনায় এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সেখানেই বসতি স্থাপনে উৎসাহিত করলেন যাতে বিস্তৃত বসতির কারণে মুনাফিক ও মুশরিকদের কাছে মুসলিমদের সংখ্যা অধিক মনে হয়। অতঃপর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা মসজিদের কাছে চলে আসতে চাও। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তাই মনস্থ করেছি। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই থাক। তোমাদের সালাতের জন্য মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়”। তিনি এ কথা দু’বার বলেছেন। তিনি তাদের সেখানে থাকার কারণ বর্ণনা করে বলেন, “সালাতের জন্য মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে তোমাদের জন্য সাওয়াব বা মর্যাদা রয়েছে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মাওকূফ সূত্রে বর্ণিত, “তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সাওয়াবের অধিকারী তারা যাদের ঘর-বাড়ি মসজিদ থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কেন? তিনি বললেন, অধিক পদক্ষেপের কারণে। মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৩৩। সুতরাং মসজিদ থেকে যার ঘর যত বেশি দূরে তার সাওয়াবও তত বেশি এবং গুনাহও ততবেশি মাফ হবে। ব্যক্তি এ মর্যাদার অধিকারী তখনই হবে যখন সে বাড়ি থেকে উত্তমরূপে অযু করে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে। মসজিদের দূরত্ব অনুসারে তার পদক্ষেপ কম হোক বা বেশি হোক। তার প্রতিটি পদক্ষেপে দু’টি জিনিস লেখা হয়। তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সাহাবী থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ভালোভাবে অযু করে সালাতের জন্য রওনা হয়, তখন সে তার ডান পা উঠানোর সাথে সাথেই তার আমলনামায় একটি সাওয়াব লিপিবদ্ধ হয়। অতঃপর তার বাম পা ফেলার সাথে সাথেই তার একটি গুনাহ মার্জনা করা হয়। এখন যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে, সে তার আবাসস্থান মসজিদের নিকটে রাখতে পারে অথবা দূরে করতে পারে। এটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন, হাদীস নং ৫৬৩। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ আবু দাউদে (৩/৯৭) হাদীস নং (৫৭২) সহীহ বলেছেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“গত রাতে আমার সুমহান রব আমার কাছে সুন্দরতম রূপে এসেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘স্বপ্নে’ কথাটি উল্লেখ করেছিলেন।) তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কী নিয়ে মালা’-এ-‘আলা তথা (ফিরিশতাদের) সর্বোচ্চ পরিষদে বিতর্ক হচ্ছে? আমি বললাম: হ্যাঁ, গুনাহের কাফফারা ও সাওয়াবের মর্যাদা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি বললেন: গুনাহের কাফফারা ও সাওয়াবের মর্যাদাটি কী? এরপর বললেন, তা হলো সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করা, জামা‘আতে সালাতের উদ্দেশ্যে পাঁয়ে হেঁটে যাওয়া এবং কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে অযু করা...। মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং (৩৪৮৪), আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ জামে‘উস সগীর ওয়াযিয়াদাতুহু (১/৭২)। সুতরাং উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যে, নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পরিপূর্ণ হলে সাওয়াব অর্জিত হবে: ১- পবিত্র অবস্থায় মসজিদে গমন করা। ২- সাওয়াবের নিয়াত করা; কেননা হাদীসে রয়েছে, “প্রত্যেক কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে”। মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। ৩- বাড়ি থেকে শুধু মসজিদের উদ্দেশ্যেই বের হতে হবে। ৪- পায়ে হেঁটে যেতে হবে। কোনো আরোহণে নয়, তবে ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। তবে কারো ওযর থাকলে সে গাড়িতে চড়ে মসজিদে আসতে কোনো অসুবিধে নেই। গাড়ির চাকার প্রতিবার ঘুরার দ্বারা সে প্রতিটি পদক্ষেপের সাওয়াব পাবে। কেননা গাড়ির চাকা একবার ঘুরলে মাটিতে একবার পদক্ষেপ ফেলানোর মতো হিসেব হয়। অতঃএব কেউ অসুস্থ বা অক্ষম হলে গাড়ি বা অন্য কোনো যানবাহনে আসতে অসুবিধে নেই। এভাবে আসলেও পায়ে হেঁটে আসার সমপরিমাণ সাওয়াবের অধিকারী হবে।

التصنيفات

জামা‘আতের সাথে সালাতের ফযীলত ও তার বিধান, মসজিদের বিধানসমূহ