“আর যে কেউ রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট আনুগত্যের বাই‘আত করলো এবং তার হাতে হাত রাখলো ও নিজের অন্তরের একনিষ্ঠতা তাকে দিয়ে…

“আর যে কেউ রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট আনুগত্যের বাই‘আত করলো এবং তার হাতে হাত রাখলো ও নিজের অন্তরের একনিষ্ঠতা তাকে দিয়ে দিল, তার উচিত হবে যথাসম্ভব রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্য করা। অতঃপর অন্য কোনো ব্যক্তি যদি তার কাছ থেকে তা কেড়ে নিতে আসে, তবে তোমরা দ্বিতীয় সে ব্যক্তির গর্দান উড়িয়ে দিবে।”

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোনো এক সফরে ছিলাম। অতঃপর (বিশ্রামের জন্য) কোনো এক স্থানে অবতরণ করলাম। আমাদের কিছু লোক তার তাঁবু ঠিক করছিল, কিছু লোক তীরন্দাজিতে প্রতিযোগিতা করছিল ও কিছু লোক তাদের জন্তু নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষক ঘোষণা করল: “সালাতের জন্য জমায়েত হও।” সুতরাং আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সমবেত হলাম। তিনি বললেন, “আমার পূর্বে প্রত্যেক নবীর জন্য জরুরী ছিল তার উম্মতকে এমন কর্মসমূহের নির্দেশ দেওয়া, যা তিনি তাদের জন্য ভালো হিসেবে জানেন এবং এমন কর্মসমূহ থেকে হুশিয়ার করা, যা তিনি তাদের জন্য মন্দ হিসেবে জানেন। আর তোমাদের এ উম্মত এমন, যাদের প্রথমাংশে নিরাপত্তা রাখা হয়েছে এবং তাদের শেষাংশে রয়েছে পরীক্ষা (ফিতনা-ফ্যাসাদ) এবং এমন ব্যাপার সকল, যা তোমরা অপছন্দ করবে। এমন ফিতনা প্রকাশ পাবে যে, একটি অন্যটি হালকা করে দিবে (অর্থাৎ পরের ফিতনাটি আগের ফিতনা অপেক্ষা গুরুতর হবে)। ফিতনা এসে যাবে, তখন মুমিন বলবে, এটাই আমার ধ্বংসের কারণ হবে। অতঃপর তা দূরীভূত হবে। আবার ফিতনা এসে যাবে, তখন মুমিন বলবে, ‘এটাই (আমার ধ্বংসের কারণে)। অতএব, যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশ করতে পছন্দ করে, তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহ ও শেষ দিবসের ওপর ঈমান রাখে এবং লোকদের সাথে সেই ব্যবহার প্রদর্শন করে, যা সে তাদের থেকে নিজের জন্য প্রদর্শন পছন্দ করে। আর যে ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট বাই‘আত করল, সে নিজের হাতের চুক্তি ও অন্তরের ফল (একনিষ্ঠতা) তাকে দিয়ে দিল, অতএব যথাসম্ভব তার আনুগত্য করবে। অতঃপর দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি যদি তার (বাই‘আতকৃত রাষ্ট্রপ্রধানের) সাথে ঝগড়া করতে আসে, তাহলে তোমরা তার গর্দান উড়িয়ে দিবে।”

[সহীহ] [এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যেমনিভাবে নবীদের ওপর মানুষের জন্য যা কল্যাণ তা বর্ণনা করা, মানুষকে তার প্রতি পথ দেখানো এবং যা অকল্যাণ তা বর্ণনা করা ও তা থেকে সতর্ক করা ওয়াজিব, তেমনিভাবে দা‘ঈদের ওপরও তা ওয়াজিব। এ হাদীসে আরও বলা হয়েছে যে, এ উম্মতের প্রথম যুগের লোকগণ প্রচুর কল্যাণ এবং পরীক্ষা থেকে নিরাপত্তা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এ উম্মতের শেষাংশের লোকেরা এমন অকল্যাণ ও পরীক্ষার সম্মূখীন হবে যে, পরবর্তী ফিতনা পূর্ববর্তী ফিতনাকে হালকা করে দিবে। আর তার থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হচ্ছে, তাওহীদ ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা, মানুষের সাথে সদাচারণ করা, শাসকের বাই‘আতকে রক্ষা করা, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র না ধরা এবং যে মুসলিমদের জামা‘আতে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায় তার সাথে যুদ্ধ করা।

التصنيفات

শেষ দিবসের ওপর ঈমান, প্রশংসিত চরিত্রসমূহ, নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রপ্রধাণের অধিকার