তোমরা তোমাদের পরবিারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝেই বসবাস কর । তাদেরকে শিক্ষা দান কর এবং তাদেরকে (ভাল কাজের) আদেশ…

তোমরা তোমাদের পরবিারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝেই বসবাস কর । তাদেরকে শিক্ষা দান কর এবং তাদেরকে (ভাল কাজের) আদেশ দাও। অমুক সালাত অমুক সময়ে পড়। অমুক সালাত অমুক সময়ে পড়। সুতরাং যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে।

আবূ সুলায়মান মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে রর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা প্রায় সমবয়স্ক কতিপয় নব যুবক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বেশি দিন অবস্থান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহ পরবশ ছিলেন। তাই তিনি ধারণা করলেন যে, আমরা আমাদের পরবিারের কাছে ফিরিয়ে যাবার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছি সেহেতু তিনি আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারের কাকে ছেড়ে এসেছি? সুতরাং আমরা তাঁকে জানালে তিনি বললনে, “তোমরা তোমাদের পরবিারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝেই বসবাস কর । তাদেরকে শিক্ষা দান কর এবং তাদেরকে (ভাল কাজের) আদেশ দাও। অমুক সালাত অমুক সময়ে পড়। অমুক সালাত অমুক সময়ে পড়। সুতরাং যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে।” বুখারীর বর্ণনায় এরূপ বাড়তি আছে যে, “আমাকে তোমরা যেভাবে নামায পড়তে দেখেছ, ঠিক সেইভাবেই নামায পড়।”

[সহীহ] [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

الشرح

মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা প্রায় সমবয়স্ক কতিপয় নব যুবক দীন জানার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম। এটি ছিল নবম হিজরী ওয়াফদের বছর। তারা সবাই যুবক ছিল। তারা বিশ দিন অবস্থান করল। মালেক বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দয়াপরবশ ও নম্র। তাই তিনি ধারণা করলেন যে, আমরা আমাদের পরবিারের কাছে ফিরে যাবার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছি সেহেতু তিনি আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারে কাকে ছেড়ে এসেছি? সুতরাং আমরা তাঁকে জানালে তিনি বললনে, “তোমরা তোমাদের পরবিারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝেই বসবাস কর । তাদেরকে শিক্ষা দান কর এবং তাদেরকে (ভাল কাজের) আদেশ দাও। অমুক সালাত অমুক সময়ে পড়। অমুক সালাত অমুক সময়ে পড়। সুতরাং যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে”। ইমাম বুখারী এ কথা বাড়ান যে, আর তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় কর। এ হাদীসটি প্রমান করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রহমত ও নম্রতায় প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়ালু ও নমনীয় ছিলেন। তাই তিনি যখন দেখতে পেলেন যে, তারা তাদের পরিবারের প্রতি উদগ্রীব হয়ে আছেন, তাই তিনি বাড়িতে তারা কাদেরকে রেখে এসেছেন তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং তারা তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করলে তিনি তাদের নির্দেশ দেন যে, তারা যেন তাদের পরিবারে ফিরে যায়। “আর তোমাদের মধ্যে যিনি বড় তিনি যেন তোমাদের ইমামতি করেন”। এতে প্রমাণিত হয় যে, বয়সে যারা বড় তারা ইমামতিতে প্রাধান্য পাবে। এটি রাসূলের বাণী—আল্লাহর কিতাবের কারীগণ কাওমের ইমামতি করবেন—এর পরিপন্থী নয়। কারণ, এ যুবকগুলো সবাই রাসূলের নিকট একই সময় উপস্থিত হয়েছিল। ফলে স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে যে, কুরআনের কারী হওয়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে স্পষ্ট কোন প্রার্থক্য ছিল না। তারা সবাই সম পর্যায়ের ছিল। তাদের কেউ অপরের চেয়ে অধিক কুরআন ওয়ালা ছিল না। এ কারণেই তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যিনি বড় তিনি তোমাদের ইমামতি করবেন। কারণ তারা কুরআনের ব্যাপারে সবাই সমান বা কাছাকাছি। অনুরূপভাবে তারা সবাই যদি ক্বিরাত, সুন্নাহ ও হিজরত বিষয়ে সমান হয়, তাহলে বয়সের দিক দেখবে এবং যিনি বয়স্ক তাকে অগ্রাধিকার দেবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী—“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ, সেভাবে সালাত আদায় কর।” এটি রাসূলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যে, তিনি মানুষকে কথা ও কর্ম উভয়ের মাধ্যমে শিক্ষা দান করতেন। তাই তিনি যে ব্যক্তি স্থীরতা ছাড়া সালাত আদায় করল, তাকে মৌখিকভাবে শিক্ষা দিলেন, বললেন, যখন তুমি সালাতে দাঁড়াও তুমি পরিপূর্ণ ওযূ কর। অতঃপর তুমি কিবলা মুখী হও, তাকবীর বল, তারপর তুমি তোমার নিকট যে কুরআন রয়েছে তা থেকে যা তোমার জন্য সহজ হয় পড়, অতঃপর তুমি রুকু কর...। আর এ সব যুবকদেরকে তিনি কর্মের মাধ্যমে বাস্তবিক শিক্ষা দান করেন।

التصنيفات

আযান ও ইকামাত, জামা‘আতের সাথে সালাতের ফযীলত ও তার বিধান, ইমাম ও মুক্তাদির বিধানাবলি