মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন…

মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।’ তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ, “কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।”

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।’ তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ, “কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।” সাহাল ইবন সা‘আদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম, যেখানে মজলিসের শেষ পর্যন্ত জান্নাতের আলোচনা করা হয়েছিল। আলোচনার শেষে তিনি বললেন, “জান্নাতে এমন নিয়ামত (সুখ-সামগ্রী) বিদ্যমান আছে যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের মনে তার ধারণার উদ্রেকও হয়নি. তারপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন, যার অর্থ হল, ‘তারা শয্যাত্যাগ করে আকাঙ্খা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি তা হতে তারা দান করে। কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।” [সূরা সাজদাহ, আয়াত: ১৬-১৭]

[সহীহ] [এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

الشرح

হাদীসটির অর্থ: যারা আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকে এমন নেক বান্দাদের জন্য আল্লাহ তৈরি করেছেন এমন সুন্দর ও উত্তম জান্নাত যা কোন চুক্ষু দেখেনি এবং এমন সুন্দর আওয়ায ও আশ্চর্য গুণাবলি যা কোন কর্ণ শোনেনি। এখানে শুদু দেখা ও শোনা উল্লেখ করেছেন কারণ, অধিকাংশ ইন্দিয় বস্তু এ দুটি দ্বারা অনুভব করা যায়। আর জিহবা, নাশিকা ও ত্বক দ্বারা অনুভব করা যায় এমন বস্তুর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। “যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি”। অর্থাৎ জান্নাতে তাদের জন্য যে সব স্থায়ী নি‘আমত প্রস্তুত করা হয়েছে তা কারো অন্তর কখনো চিন্তাও করেনি। জান্নাতে যা রয়েছে তা মানুষ যা চিন্তা করে তার চেয়ে উত্তম। কারণ, মানুষ তাই চিন্তা করে যা তারা চিনে এবং তাদের অন্তরে সে সব বস্তুর উদ্রেক হয় যা তারা চিনে। আর জান্নাতের নি‘আমতসমূহ তারও উর্ধ্বে। আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন এবং নিষিদ্ধ কর্মসমূহ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর রাস্তায় কষ্ট বরদাশত করার কারণে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান। এতে বিনিময় আমলের ধরণ অনুযায়ী হলো। “যদি তোমরা চাও এ আয়াত তিলাওয়াত কর”। অপর বর্ণনায় এসেছে, তারপর এ আয়াত তিলাওয়াত কর। “কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।” [সূরা সেজদাহ, আয়াত: ১৭] কেউ জানে না এ কথার অর্থ, সমস্ত সৃষ্টির আত্মা। কারণ, এটি নাফীর পরে নাকিরাহ অর্থাৎ কেউ জানে না। “তার জন্য তার নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে”। অসংখ্য কল্যাণ, মহান নি‘আমত, আনন্দ ও খুশি এবং মজা ও স্বাদ লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তারা যেমনিভাবে রাতে সালাত আদায় করেছে, দো‘আ করেছে এবং তারা তাদের আমলকে গোপন করেছেন তিনি তাদের আমলের ধরন অনুযায়ী বিনিময় প্রদান করেছেন এবং তাদের বিনিময়কে গোপন করেছেন। এ কারণেই তিনি বলেন, তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ।

التصنيفات

জান্নাত ও জাহান্নামের গুণাগুণ