আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হত, তবে অবশ্যই আমরা…

আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে খুশীর দিন হিসেবে পালন করতাম

‘উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত: জনৈক ইয়াহূদী তাঁকে বললঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে খুশীর দিন হিসেবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন্ আয়াত? সে বললঃ {اليَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا} [المائدة: 3] ‘‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম’’- (মায়িদাহ্ ৫/৩)। ‘উমার বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি; তিনি সেদিন ‘আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুমু‘আহর দিন।

[সহীহ] [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

الشرح

একজন ইহুদি ব্যক্তি আমীরুল মু’মিনীন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর কাছে এসে বলল: তোমাদের কিতাব কুরআনে একটি আয়াত আছে, সেটি যদি আমাদের (ইহুদিদের) কিতাব তাওরাতে নাযিল হতো, তাহলে আমরা সেই দিনটিকে একটি উৎসবের দিন হিসেবে পালন করতাম — এই মহান আয়াত নাযিল হওয়ার শুকরিয়ায়। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে জিজ্ঞেস করলেন: কোন আয়াত? তিনি বললেন, {اليَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا} “আজকের দিন আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করছি। আর তোমাদের ওপর আমার নিআমতকে সম্পন্ন করছি। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করছি।” উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: আমরা সেই দিন এবং সেই স্থান সম্পর্কে জানি, যেখানে এই মহামূল্যবান আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। এটি ঈদের দিন নাযিল হয়েছিল, আর তা ছিল জুমার দিন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই দুই দিন মুসলমানদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ

فوائد الحديث

উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আয়াত নাযিল হওয়ার স্থান ও সময় সম্পর্কে যে গুরুত্ব ও যত্ন দেখিয়েছেন তার বিবরণ।

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা যে নিয়ামত এই উম্মতের উপর দান করেছেন, তা প্রকাশ পেয়েছে—যেখানে তিনি তাদের দ্বীনকে পূর্ণ করেছেন এবং তাদের প্রতি তাঁর নিয়ামত সম্পূর্ণ করেছেন, যাতে দ্বীনের বিষয়ে আর কোনো কিছু সংযোজনের প্রয়োজন নেই। অতএব, আল্লাহ তা‘আলা যখন দ্বীনকে সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন, এরপর যেসব নতুন বিষয় চালু হয়েছে এবং যার কোনো শরঈ প্রমাণ নেই, সেগুলো সবই বিদআত ও ভ্রান্তি হিসেবে গণ্য হবে। যেমনটি প্রমাণিত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে: "من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه، فهو رد" “যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু করে যোগ করে, যা এর অংশ নয়—তা প্রত্যাখ্যাত।”

এই হাদীস থেকে এ কথাও বোঝা যায় যে, ঈদ বা উৎসব নিজের ইচ্ছা বা নতুন আবিষ্কারের ভিত্তিতে হতে পারে না, যেমনটি আমাদের আগের কিতাবধারীরা (ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা) করত; বরং ঈদ হতে হবে শরীয়তের অনুসরণ ও আনুগত্যের ভিত্তিতে। এই আয়াতে যখন আল্লাহ তাআলা দ্বীনকে পরিপূর্ণ করা এবং তাঁর নিয়ামত সম্পূর্ণ করার কথা উল্লেখ করেছেন, তখন তিনি এটি এমন এক দিনে নাযিল করেছেন, যেদিনকে তিনি এই উম্মতের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন—দুই দিক থেকে:

প্রথমত: এটি হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন, অর্থাৎ জুমার দিন।

দ্বিতীয়ত: এটি হলো হজের মৌসুমি ঈদের দিন, অর্থাৎ আরাফার দিন, যেদিন হজযাত্রীদের সবচেয়ে বড় জমায়েত ও সর্বোচ্চ অবস্থান হয়।

সা‘দী এই আয়াতের তাফসীরে বলেন: {اليَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ} “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম” — এর অর্থ হলো, বিজয়ের পূর্ণতা এবং দ্বীনের প্রকাশ্য ও গোপন শরীয়তসমূহ, মূলনীতি ও শাখাগুলোর পরিপূর্ণতা। এই কারণেই কিতাব ও সুন্নাহ দ্বীনের সকল বিধান, তার মূলনীতি ও শাখাসমূহ জানার জন্য সম্পূর্ণরূপে যথেষ্ট। অতএব, যে ব্যক্তি এই দাবি করে যে, মানুষের জন্য তাদের আকীদা-বিশ্বাস ও শরয়ী বিধান বুঝতে কিতাব ও সুন্নাহ ছাড়াও অন্য কোনো বিদ্যা (যেমন কালাম শাস্ত্র বা অন্য কিছু) জানাটা অপরিহার্য—সে একজন অজ্ঞ ব্যক্তি এবং তার এ দাবি বাতিল। সে দাবি করছে যে, দ্বীন কেবল তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন সে যা বলেছে ও যার দিকে আহ্বান করেছে, তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি সবচেয়ে বড় জুলুম ও অজ্ঞতা প্রকাশের নাম। {وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي} “এবং আমি তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম” — প্রকাশ্য ও গোপন উভয় নিয়ামত। {وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا} “এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম” — অর্থাৎ, আমি ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে নির্বাচন করেছি, যেমন আমি তোমাদেরকে ইসলামের জন্য পছন্দ করেছি। অতএব, তোমরা তোমাদের রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই দ্বীনকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করো এবং সেই আল্লাহর প্রশংসা করো, যিনি তোমাদেরকে সর্বোত্তম, সবচেয়ে মর্যাদাবান ও পরিপূর্ণ দ্বীন দান করেছেন।

التصنيفات

সূরা ও আয়াতের ফযীলতসমূহ