“যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে…

“যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে।

আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের মধ্যে সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।”

[সহীহ] [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

الشرح

নবীজি (সা.) ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মহত্যা করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কারণ, কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনে সে একইভাবে শাস্তি পাবে, যেমনভাবে সে দুনিয়াতে নিজেকে হত্যা করেছিল। যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পাহাড় থেকে উপত্যকায় পড়তে থাকবে, সেখানে চিরকাল থাকবে। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করে, তার হাতে বিষ থাকবে এবং সে জাহান্নামের আগুনে তা পান করতে থাকবে, সেখানে চিরকাল থাকবে। আর যে ব্যক্তি লোহার অস্ত্র দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করে আত্মহত্যা করে, তার হাতে সেই লোহার অস্ত্র থাকবে এবং সে জাহান্নামের আগুনে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে, সেখানে চিরকাল থাকবে।

فوائد الحديث

মানুষের নিজেকে হত্যা করা হারাম, এবং এটি এমন একটি বড় পাপ যার জন্য সে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রাপ্য।

হাদীসে আত্মহত্যার কিছু পদ্ধতির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু যে কোনো পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করলে সে একইভাবে শাস্তি পাবে। সহীহ বুখারিতে নবীজি (সা.) বলেছেন: "যে ব্যক্তি নিজেকে শ্বাসরোধ করে মারে, সে জাহান্নামে শ্বাসরোধ করবে এবং যে ব্যক্তি নিজেকে ছুরিকাঘাত করে মারে, সে জাহান্নামে ছুরিকাঘাত করবে।”

ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন: নবীজি (সা.)-এর বাণী "সে জাহান্নামে চিরকাল থাকবে" সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। প্রথম মত হলো: এটি এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে এ কাজটি জেনে-শুনে এবং হারাম জেনেও হালাল মনে করে করেছে। এ ধরনের ব্যক্তি কাফির এবং এর শাস্তি হলো চিরস্থায়ী জাহান্নাম। দ্বিতীয় মত হলো: এখানে 'চিরস্থায়ী' বলতে দীর্ঘ সময় এবং দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান বোঝানো হয়েছে, প্রকৃত অর্থে চিরস্থায়ী নয়। যেমন বলা হয়: "আল্লাহ সুলতানের রাজত্বকে চিরস্থায়ী করুন।" তৃতীয় মত হলো: এটি মূলত তার উপযুক্ত শাস্তি, কিন্তু আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করে জানিয়েছেন যে, কোনো মুসলিম চিরকাল জাহান্নামে থাকবে না।

এটি দুনিয়ার অপরাধের সাথে আখিরাতের শাস্তির সামঞ্জস্য বোঝায়। এ থেকে বোঝা যায় যে, মানুষ নিজের উপর যে অপরাধ করে তা অন্যের উপর অপরাধ করার মতোই পাপ; কারণ তার নিজের জীবন তার মোটেও মালিকানাধীন নয়, বরং তা আল্লাহ তাআলার। তাই সে তার জীবন নিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর অনুমতি অনুযায়ীই কাজ করতে পারে।

التصنيفات

অপরাধসমূহ, পাপের নিন্দা