রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তিন সময়ে আমাদের মৃতদের জানাযা পড়তে এবং তাদেরক কবরস্থ করতে…

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তিন সময়ে আমাদের মৃতদের জানাযা পড়তে এবং তাদেরক কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেন

‘উকবা ইবন ‘আমের আল জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তিন সময়ে আমাদের মৃতদের জানাযা পড়তে এবং তাদেরক কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেন: সূর্য উদয়কালে যতক্ষণ না তা উপরে ওঠে যায়, সূর্য যখন বরাবর থাকে যতক্ষণ না পশ্চিমাকাশে ঢলে যায় এবং যখন অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় যতক্ষণ না তা ডুবে যায়।

[সহীহ] [এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনের তিন সময় নফল সালাত পড়তে এবং তাতে মৃত ব্যক্তিকে দাফন ও কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেন: প্রথমবার: যখন সূর্য উপরে ওঠে, অর্থাৎ যখন এটি প্রথম প্রথম উদয় হয় যতক্ষণ না তা একটি বর্শার দৈর্ঘ্যে ওঠে, যা আনুমানিক এক-চতুর্থাংশ ঘন্টা। দ্বিতীয়বার: যখন সূর্য আকাশের মাঝখানে থাকে, তখন পূর্ব বা পশ্চিম দিক থেকে তার ছায়া হয় না যতক্ষণ না এটি আকাশের মাঝখান থেকে অতিক্রম করে। তারপর পূর্ব দিক থেকে ছায়াটি দেখা যায়, তখন থেকে যোহরের সালাতের সময় শুরু হয়, যা খুব অল্প সময়। এটি প্রায় পাঁচ মিনিটের মত। তৃতীয়বার: যখন সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে এবং অস্ত যায়।

فوائد الحديث

এই হাদিস এবং অন্যান্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত সালাত আদায়ের নিষিদ্ধ সময়গুলো হল: প্রথমত: ফজরের সালাতের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। দ্বিতীয়ত: সূর্যোদয়ের সময় যতক্ষণ না সূর্য চোখের দেখায় বর্শার উচ্চতায় ওঠে। অর্থাৎ, প্রায় পনেরো মিনিট। তৃতীয়ত: যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে ঠিক মাথার উপরে থাকে, অর্থাৎ যখন দুপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির পূর্ব বা পশ্চিমে আর কোন ছায়া থাকে না। কেউ কেউ অনুমান করেছেন যে এটি প্রায় পাঁচ মিনিট। চতুর্থত: আসরের সালাতের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত। পঞ্চমত: যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে হলুদ হয়ে যায়।

এই পাঁচটি নিষিদ্ধ সময়ে সালাত আদায় করার নিষেধাজ্ঞা, তবে এর থেকে বাদ যাবে ফরজ সালাত এবং কারণ বিশিষ্ট সালাত।

হাদিসে বর্ণিত এই তিনটি সংক্ষিপ্ত সময় পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে দাফন বিলম্বিত করা নিষেধ এবং এ ছাড়া দিন বা রাতের যেকোনো সময় দাফন করার বৈধতা।

এই সময়গুলোতে সালাত নিষিদ্ধ করার পেছনের হিকমত:

মূলনীতি হলো, একজন মুসলিম আল্লাহর আদেশের প্রতি আত্মসমর্পণ করবে এবং আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে তাঁর নিষেধগুলো এড়িয়ে চলবে। সে যতক্ষণ না কোন কিছু করার আদেশ বা নিষেধের পিছনের হিকমত বা যুক্তি অবগত হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত বন্ধ করতে পারে না। বরং, তার উপর আবশ্যক হল তা মেনে নেওয়া।

হ্যাঁ, অন্যান্য হাদীসে এর হিকমত বর্ণিত হয়েছে:

প্রথমত: দুপুরে সূর্য ঢলে যাওয়ার ঠিক আগে জাহান্নামকে শক্তিশালীভাবে প্রজ্বলিত করা হয়।

দ্বিতীয়ত: সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত পড়ার নিষেধাজ্ঞার পেছনের হিকমত মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য। কারণ তারা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে সিজদা করে।

তৃতীয়ত: ফজরের সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের সালাতের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সালাত পড়ার নিষেধাজ্ঞার কারণ হল মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্যের সম্ভাবনা বিলুপ্ত করা; যাতে মুসলিমরা কাফেরদের সাথে তাদের শিরকে সাদৃশ্য না রাখে, কারণ তারা সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে সিজদা করে।

التصنيفات

সালাত নিষিদ্ধের সময়সমূহ