إعدادات العرض
“তোমাদের পূর্ববর্তী যামানায় এক বাদশাহ ছিল। তার ছিল এক যাদুকর
“তোমাদের পূর্ববর্তী যামানায় এক বাদশাহ ছিল। তার ছিল এক যাদুকর
সুহাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের পূর্ববর্তী যামানায় এক বাদশাহ ছিল। তার ছিল এক যাদুকর। বার্ধক্যে পৌছে সে বাদশাহকে বলল, আমি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, সুতরাং একজন যুবককে আপনি আমার কাছে প্রেরণ করুন, যাকে আমি যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিব। অতঃপর যাদুবিদ্যা শিক্ষা দেয়ার জন্য বাদশাহ তার কাছে এক যুবককে প্রেরণ করল। বালকের যাত্রা পথে ছিল এক ধর্মযাজক। যুবক তার কাছে বসল এবং তার কথা শুনল। তার কথা যুবকের পছন্দ হলো। তারপর যুবক যাদুকরের কাছে যাত্রাকালে সর্বদাই ধর্মযাজকের কাছে যেত এবং তার নিকট বসত। তারপর সে যখন যাদুকরের কাছে যেত তখন সে তাকে মারধর করত। ফলে যাদুকরের ব্যাপারে সে ধর্মযাজকের কাছে অভিযোগ করল। তখন ধর্মযাজক বলল, তোমার যদি যাদুকরের ব্যাপারে ভয় হয় তবে বলবে, আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে আসতে দেয়নি। আর যদি তুমি তোমার গৃহকর্তার ব্যাপারে আশঙ্কাবোধ করে তবে বলবে, যাদুকর আমাকে বিলম্বে ছুটি দিয়েছে। এমনিভাবে চলতে থাকাবস্থায় একদিন হঠাৎ সে একটি ভয়ানক হিংস্র প্রাণীর সম্মুখীন হলো, যা লোকেদের পথ আটকিয়ে রেখেছিল। এ অবস্থা দেখে সে বলল, আজই জানতে পারব, যাদুকর উত্তম না ধর্মযাজক উত্তম। অতঃপর একটি পাথর হাতে নিয়ে সে বলল, হে আল্লাহ! যদি যাদুকরের চাইতে ধর্মযাজক আপনার কাছে পছন্দনীয় হয়, তবে এ পাথরাঘাতে এ হিংস্র প্রাণীটি নিঃশেষ করে দিন, যেন লোকজন চলাচল করতে পারে। অতঃপর সে সেটার প্রতি পাথর ছুড়ে দিল এবং সেটাকে মেরে ফেলল। ফলে লোকজন আবার যাতায়াত শুরু করল। এরপর সে ধর্মযাজকের কাছে এসে তাকে সম্পূর্ণ ঘটনা বলল। ধর্মযাজক বলল, বৎস! আজ তুমি আমার থেকেও শ্রেষ্ঠ। তোমার মর্যাদা এ পর্যন্ত পৌছেছে যা আমি দেখতে পাচ্ছি। তবে শীঘ্রই তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যদি পরীক্ষার মুখোমুখি হও তবে আমার কথা গোপন রাখবে। এদিকে যুবক আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করতে লাগল এবং লোকেদের সমুদয় রোগ-ব্যাধির নিরাময় করতে লাগল। বাদশাহর পরিষদবর্গের এক লোক অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার সংবাদ সে শুনতে পেয়ে বহু হাদিয়া ও উপটৌকন নিয়ে তার নিকট আসলো এবং তাকে বলল, তুমি যদি আমাকে আরোগ্য দান করতে পার তবে এসব মাল আমি তোমাকে দিয়ে দিব। এ কথা শুনে যুবক বলল, আমি তো কাউকে আরোগ্য দান করতে পারি না। আরোগ্য তো দেন আল্লাহ তা’আলা। তুমি যদি আল্লাহর উপর ঈমান আনো তবে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করব, আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। তারপর সে আল্লাহর উপর ঈমান আনলো। আল্লাহ তা’আলা তাকে রোগ মুক্ত করে দিলেন। এরপর সে বাদশাহর কাছে এসে অন্যান্য দিনের ন্যায় এবারও বসল। বাদশাহ তাকে প্রশ্ন করল, কে তোমার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে? সে বলল, আমার পালনকর্তা। এ কথা শুনে বাদশাহ তাকে আবার প্রশ্ন করল, আমি ছাড়া তোমার অন্য কোন পালনকর্তাও আছে কি? সে বলল, আমার ও আপনার সকলের প্রতিপালকই মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন। অতঃপর বাদশাহ্ তাকে পাকড়াও করে অবিরতভাবে শাস্তি দিতে লাগল, অবশেষে সে ঐ বালকের অনুসন্ধান দিল, অতঃপর বালককে নিয়ে আসা হলো। বাদশাহ তাকে বলল, হে প্রিয় বৎস! তোমার যাদু এ পর্যায়ে পৌছে গেছে যে, তুমি অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকেও নিরাময় করতে পার। বালক বলল, আমি কাউকে নিরাময় করতে পারি না। নিরাময় করেন আল্লাহ। ফলে বাদশাহ তাকে শাস্তি দিতে লাগল, অবশেষে সে ধর্মযাজকের (দরবেশের) কথা বলে দিল। এরপর ধর্মযাজককে ধরে আনা হলো এবং তাকে বলা হলো তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এসো। সে অস্বীকার করল, ফলে তার মাথার তালুতে করাত রেখে সেটাকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হলো। এতে তার মাথাও দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। অবশেষে ঐ যুবকটিকে আনা হলো এবং তাকেও বলা হলো তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এসো। সেও অস্বীকার করল। অতঃপর বাদশাহ তাকে তার কিছু সহচরের হাতে তাকে অর্পণ করে বলল, তোমরা তাকে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তাকে সহ পাহাড়ে আরোহণ করো। পর্বত শৃঙ্গে পৌছার পর সে যদি তার ধর্ম থেকে ফিরে আসে তবে ভাল। নতুবা তাকে সেখান থেকে ছুড়ে মারবে। তারপর তারা তাকে নিয়ে গেল এবং তাকে সহ পর্বতে আরোহণ করল। তখন সে দুআ করে বলল, হে আল্লাহ! তোমার যেভাবে ইচ্ছা আমাকে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করো। তৎক্ষণাৎ তাদেরকে সহ পাহাড় কেঁপে উঠল। ফলে তারা পাহাড় হতে গড়িয়ে পড়ল। আর সে হেঁটে হেঁটে বাদশাহর কাছে চলে এলো। এ দেখে বাদশাহ্ তাকে প্রশ্ন করল, তোমার সাথীরা কোথায়? সে বলল, আল্লাহ আমাকে তাদের চক্রান্ত হতে সংরক্ষণ করেছেন। আবারো বাদশাহ্ তাকে তার কতিপয় সহচরের হাতে সমর্পণ করে বলল, তোমরা তাকে নিয়ে নাও এবং নৌকায় উঠিয়ে তাকে মাঝ সমুদ্রে নিয়ে যাও। অতঃপর সে যদি তার দীন (ধর্ম) হতে ফিরে আসে তবে ভাল, নতুবা তোমরা তাকে সমুদ্রে ফেলে দাও। তারা তাকে সমুদ্রে নিয়ে গেল। এবারও সে দু’আ করে বলল, হে আল্লাহ! তোমার যেভাবে ইচ্ছা তুমি আমাকে তাদের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করো। তৎক্ষণাৎ নৌকাটি তাদেরসহ উল্টে গেল। ফলে তারা সকলেই পানিতে ডুবে গেল। আর যুবক হেঁটে হেঁটে বাদশাহর কাছে চলে এলো। এ দেখে বাদশাহ্ তাকে আবার প্রশ্ন করল, তোমার সঙ্গীগণ কোথায়? সে বলল, আল্লাহ আমাকে তাদের ষড়যন্ত্র হতে রক্ষা করেছেন। অতঃপর সে বাদশাহকে বলল, তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে না যে পর্যন্ত না তুমি আমার নির্দেশিত পদ্ধতি অবলম্বন করবে। বাদশাহ বলল, সে আবার কি? যুবক বলল, একটি ময়দানে তুমি লোকেদেরকে জমায়েত করে। অতঃপর একটি কাঠের শুলীতে আমাকে উঠিয়ে আমার তীরদানী হতে একটি তীর নিয়ে সেটাকে ধনুকের মাঝে রাখে। এরপর بِاسْمِ اللَّهِ رَبِّ الْغُلاَمِ "বালকের প্রভুর নামে" বলে আমার দিকে তীর নিক্ষেপ কর। এ যদি কর তবে তুমি আমাকে মেরে ফেলতে পারবে। তার কথা অনুসারে বাদশাহ লোকেদেরকে এক মাঠে জমায়েত করল এবং তাকে একটি কাষ্ঠের শূলীতে চড়ালো। অতঃপর তার তীরদানী হতে একটি তীর নিয়ে সেটাকে ধনুকের মাঝে রেখে بِاسْمِ اللَّهِ رَبِّ الْغُلاَمِ "বালকের প্রভুর নামে" বলে তার দিকে তা নিক্ষেপ করল। তীর তার কানের নিম্নাংশে গিয়ে বিধল। অতঃপর সে তীরবিদ্ধ স্থানে নিজের হাত রাখল এবং সাথে সাথে প্রাণত্যাগ করল। এ দৃশ্য দেখে রাজ্যের লোকজন বলে উঠল, آمَنَّا بِرَبِّ الْغُلاَمِ آمَنَّا بِرَبِّ الْغُلاَمِ آمَنَّا بِرَبِّ الْغُلاَمِ আমরা এ যুবকের পালনকর্তার উপর ঈমান আনলাম। এ সংবাদ বাদশাহকে জানানো হলো এবং তাকে বলা হলো, লক্ষ্য করেছেন কি? আপনি যে পরিস্থিতি হতে আশঙ্কা করছিলেন, আল্লাহর শপথ! সে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিই আপনার মাথার উপর চেপে বসেছে। সকল মানুষই যুবকের পালনকর্তার উপর ঈমান এনেছে। এ দেখে বাদশাহ সকল রাস্তার মাথায় গর্ত খননের নির্দেশ দিল। গর্ত খনন করা হলো এবং ওগুলোতে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হলো। অতঃপর বাদশাহ আদেশ করল যে, যে লোক তার ধর্মমত বর্জন না করবে তাকে ওগুলোতে নিপতিত করবে। কিংবা সে বলল, তাকে বলবে, যেন সে অগ্নিতে প্রবেশ করে। লোকেরা তাই করল। পরিশেষে এক মহিলা একটি শিশু নিয়ে অগ্নিগহবরে পতিত হবার ব্যাপারে ইতস্তত করছিল। এ দেখে দুধের শিশু তাকে (মাকে) বলল, ওহে আম্মাজান! সবর করুন, আপনি তো সত্য দীনের (ধর্মের) উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন"।
الترجمة
العربية Bosanski English Español فارسی Français Bahasa Indonesia اردو 中文 हिन्दी Kurdî Русский Tiếng Việt Magyar ქართული Kiswahili සිංහල Română অসমীয়া Hausa ไทย Português मराठी ភាសាខ្មែរ دری አማርኛالشرح
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে একজন বাদশাহ ছিলেন এবং তাঁর একজন জাদুকর ছিলেন। যখন জাদুকর বৃদ্ধ হল, সে রাজাকে বলল: আমি বৃদ্ধ হয়েগেছি, তাই আমার কাছে একজন যুবক পাঠাও আমি তাকে জাদু শেখাব। তাই রাজা শিক্ষা দেওয়ার জন্য একজন যুবককে তার কাছে পাঠালেন, যুবকটি যখন জাদুকরের কাছে যেত, তখন তার পথে একজন সন্ন্যাসীর অবস্থান ছিল। সে একবার তার কাছে বসল এবং তার কথাগুলো শুনল। তার কথাগুলো তার খুব পছন্দ হল। যখন সে জাদুকরের নিকট আসত, তখন সে সন্ন্যাসীর পাশ দিয়ে যেত এবং তার পাশে বসত। যখন জাদুকরের কাছে আসত, সে তাকে দেরি করে আসার জন্য মারধর করত। তাই সে সন্ন্যাসীর কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ করল। তিনি বললেন: যখন তুমি জাদুকরকে ভয় পাবে, তখন বলো: আমার পরিবার আমাকে আটকে রেখেছিল। আর যখন তুমি তোমার পরিবারকে ভয় পাবে, তখন বলো: জাদুকর আমাকে আটকে রেখেছিল। সে যখন এই অবস্থায় ছিল, তখন সে একটি বিশাল জন্তুর মুখোমুখি হল যা মানুষকে চলাচল করতে বাধা দিচ্ছিল। তখন সে বলল: আজ আমি জানবো জাদুকর ভালো না সন্ন্যাসী ভালো? তাই সে একটি পাথর নিল এবং বলল: হে আল্লাহ, যদি তোমার কাছে যাদুকরের কাজের চেয়ে সন্ন্যাসীর কাজ বেশি প্রিয় হয়, তাহলে এই জন্তুটিকে হত্যা করো যাতে মানুষ চলাচল করতে পারে। তাই সে পাথরটি ছুঁড়ে মারল আর তাকে হত্যা করে ফেলল। আর লোকেরা চলাচল করতে লাগল। সে সন্ন্যাসীর কাছে এসে তাকে খবরটি বলল, সন্ন্যাসী তাকে বললেন: হে আমার বৎস, আজ তুমি আমার চেয়ে উত্তম। আমি যা দেখছি তা হল তোমার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং তোমাকে পরীক্ষা করা হবে। যদি তোমার পরীক্ষা করা হয়, তাহলে আমাকে নির্দেশ করো না। ছেলেটি আল্লাহর ইচ্ছায় অন্ধ ও কুষ্ঠরোগীদের সুস্থ এবং সকল রোগের চিকিৎসা করতে করল। রাজার এক সঙ্গী, যে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল, এই কথা শুনল এবং অনেক উপহার নিয়ে তার কাছে এলো। সে ছেলেটিকে বলল: যদি তুমি আমাকে সুস্থ করো, তাহলে এই সব উপহার তোমার। তিনি বললেন: আমি কাউকে আরোগ্য করি না, কেবল আল্লাহই আরোগ্য দান করেন। যদি তুমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আন, আমি আল্লাহর নিকট দোআ করব এবং তিনি তোমাকে সুস্থ করে তুলবেন। তাই সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল এবং আল্লাহ তাকে সুস্থ করে তুললেন। তারপর সে রাজার কাছে এসে তার পাশে বসল যেমন সে আগে বসত। রাজা তাকে বললেন: কে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে? সে বলল: আমার রব, রাজা বলল: আমি ছাড়া কি তোমার অন্য কোন রব আছে? তিনি বললেন: আমার এবং আপনার রব হলেন আল্লাহ। তাই সে তাকে গ্রেফতার করল এবং ছেলেটির সন্ধান না দেওয়া পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করতে লাগল। তারপর ছেলেটিকে আনা হল এবং রাজা তাকে বললেন: হে আমার বৎস, তোমার জাদু এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তুমি অন্ধ এবং কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করতে পারো এবং তুমি আরও করো আরও করো। তিনি বললেন: আমি কাউকে আরোগ্য দেই না, কেবল আল্লাহই আরোগ্য দান করেন। তাই সে তাকে গ্রেফতার করল এবং যতক্ষণ না সে সন্ন্যাসীকে নির্দেশ করল ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করতে থাকল। সন্ন্যাসীকে আনা হল এবং বলা হল: তোমার দীন থেকে ফিরে যাও। সে অস্বীকৃতি জানালো, তাই সে একটি করাত ডেকে এনে তার মাথার মাঝখানে রাখলো এবং তাকে দুভাগ করে ফেললো। তারপর বাদশাহর সঙ্গীকে আনা হল এবং তাকে বলা হল: তোমার ধর্ম থেকে ফিরে যাও। সে অস্বীকৃতি জানালো, তাই করাতটি তার মাথার মাঝখানে রেখে তাকে দুই ভাগ করে ফেললো। তারপর ছেলেটিকে আনা হল এবং তাকে তার ধর্ম ত্যাগ করতে বলা হল, কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করল, তাই সে তাকে তার সঙ্গীদের মধ্য থেকে তিন থেকে দশজনের হাতে তুলে দিল। তিনি বললেন: তাকে অমুক অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তার সাথে পাহাড়ে আরোহণ করো। যখন তুমি চূড়ায় পৌঁছাবে, যদি সে তার ধর্ম ত্যাগ করে ভালো, তা না হলে তাকে ফেলে দেবে। তাই তারা তাকে নিয়ে গেল এবং তার সাথে পাহাড়ে আরোহণ করল। ছেলেটি বলল: اللهم اكفنيهم بما شئت “হে আল্লাহ, তুমি যেভাবে চাও, আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করো”। পাহাড়টি তাদেরকে নিয়ে কেঁপে উঠল এবং প্রচণ্ডভাবে নড়ল, তাই তারা পড়ে গেল। তারপর সে হেঁটে রাজার কাছে এলো। বাদশাহ তাকে বললেন: তোমার সঙ্গীদের কী হয়েছে? সে বলল: আল্লাহ আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। সে তাকে তার একদল সঙ্গীর হাতে তুলে দিয়ে বলল: তাকে নিয়ে যাও এবং একটি ছোট জাহাজে তুলে সমুদ্রের মাঝখানে নিয়ে যাও। যদি সে তার ধর্ম ত্যাগ করে, তাহলে ঠিক আছে। নইলে তাকে সমুদ্রে ফেলে দাও। তাই তারা তাকে ধরে নিয়ে গেল, আর সে বলল: اللهم اكفنيهم بما شئت “হে আল্লাহ, তুমি যেভাবে চাও, আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করো”। তারপর জাহাজটি উল্টে গেল এবং তারা ডুবে গেল, আর সে হেঁটে রাজার কাছে এলো। বাদশাহ তাকে বললেন: তোমার সঙ্গীদের কী হয়েছে? সে বলল: আল্লাহ আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। ছেলেটি রাজাকে বলল: তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে না যতক্ষণ না তুমি আমার আদেশ পালন করো। সে বলল: এটা কী? তিনি বললেন: লোকদের একটি সুপরিচিত স্থানে জড়ো করো এবং আমাকে গাছের চূড়ায় ক্রুশে চড়াও। তারপর আমার তূণ থেকে একটা তীর নিয়ে ধনুকের হাতলে তীরটা রাখো। তারপর বলো: ছেলেটির রব আল্লাহর নামে, তারপর আমাকে নিক্ষেপ করো। যদি তুমি এটা করো, তাহলে তুমি আমাকে মেরে ফেলতে পারবে। তাই সে লোকদের এক জায়গায় জড়ো করে তাকে গাছের গুঁড়িতে ক্রুশে দিল। তারপর সে তার তূণ থেকে একটি তীর বের করে ধনুকের মাঝখানে তীরটি রাখল। তারপর সে বলল: ছেলেটির রব আল্লাহর নামে, তারপর সে তাকে নিক্ষেপ করল। তীরটি তার চোখ এবং কানের মাঝখানে তার মাথার খুলিতে বিদ্ধ হল। সে তার হাত তার কপালে রাখল যেখানে তীরটি ছিল এবং সে মারা গেল। লোকেরা বলল: আমরা ছেলেটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম; আমরা ছেলেটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম; আমরা ছেলেটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। তারপর বাদশাহকে আনা হল এবং জিজ্ঞাসা করা হল: তুমি যা ভয় করতে তা কি দেখেছ? আল্লাহর কসম, তুমি যা আশঙ্কা করেছিলে তাই তোমার সাথে ঘটেছে, অর্থাৎ মানুষ সবাই ছেলেটির অনুসরণ করবে এবং তার রবের (প্রতিপালকের) প্রতি ঈমান আনবে। তাই তিনি রাস্তার প্রবেশপথগুলিতে মাটিতে খুড়ে বড় আয়তাকার ফাটল খনন করার নির্দেশ দিলেন এবং সেখানে আগুন জ্বালানো হল। তিনি বললেন: যে ব্যক্তি তার ধর্ম ত্যাগ না করে, তাকে সেখানে নিক্ষেপ করো। তাই তারা রাজার আদেশ অনুসারে কাজ করল, যতক্ষণ না একজন মহিলা তার ছোট ছেলেকে নিয়ে এলো এবং সে যেখানে ছিল সেখানেই থেমে গেল এবং আগুনে প্রবেশ করতে অপছন্দ করলো। তাই তার বাচ্চাটি তাকে বলল: হে মা, ধৈর্য ধরো, কারণ তুমি সঠিক পথে আছো।فوائد الحديث
অলীদের অলৌকিক কাজের প্রমাণ, যার মধ্যে রয়েছে ছেলের নিক্ষেপের ফলে বড় জন্তুটিকে হত্যা করা, দু’বার ছেলেটির দোআ কবুল হওয়া এবং একটি শিশুর কথা বলা।
যে আল্লাহু সুবহানাহুর উপর ভরসা করে তার বিজয়।
দীনের উপর অবিচলতা ও সবরের মর্যাদার বয়ান।
অল্প বয়সে শেখার হিকমত; কারণ তরুণরা প্রায়শই বয়স্কদের তুলনায় দ্রুত মুখস্থ করে।
এই ছেলেটির ঈমানের শক্তি এবং সে তার ঈমান থেকে বিচ্যুত হয়নি ও ফিরে যায়নি।
নিরুপায় ব্যক্তিরা যখন আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকে তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন।
মুসলিমদের জনস্বার্থে একজন ব্যক্তি নিজেকে বিসর্জন করতে পারেন। কারণ এই যুবক রাজাকে এমন কিছু কথা বলেছিল যা তাকে হত্যা করবে এবং তার জীবন ধ্বংস করবে। তা হল তার তূণ থেকে একটি তীর বের করে ধনুকের মধ্যে রাখবে এবং বলবে: যুবকের রব আল্লাহর নামে।
যুদ্ধ এবং অনুরূপ পরিস্থিতিতে এবং ধ্বংস থেকে নিজেকে রক্ষা করার স্বার্থে মিথ্যা বলার বৈধতা।
একজন মুমিনকে তার ঈমানের সততা এবং সত্য বলার ক্ষেত্রে অবিচলতার উপর পরীক্ষা করা হয়, যদিও তা তার জীবন ধ্বংস করে দেয়।
আল্লাহর দিকে ডাকা এবং সত্য প্রকাশের জন্য ত্যাগ করা।
বান্দাদের হৃদয় আল্লাহর হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। যেমন ছেলেটি জাদুকরের হেফাজতে এবং দুর্ভাগা রাজার তত্ত্বাবধানে থাকাকালীন হিদায়েত লাভ করেছে।
আল্লাহ তা‘আলার কাছে বান্দাকে এমন একটি নিদর্শন দেখানোর জন্য দোআ করা জায়েজ, যার দ্বারা সে সঠিক কী তা জানতে পারবে এবং তার নিশ্চয়তা অর্জন করবে।
মুমিনগণ আল্লাহর দেওয়া এবং দান করা সবকিছুই তাঁর দীনের সেবা করার জন্য এবং তাঁর পথে মানুষকে ডাকার জন্য ব্যবহার করে।
ধ্বংসের কারণগুলি আল্লাহর হাতে। তিনি ইচ্ছা করলে সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন, আর ইচ্ছা করলে সেগুলো নষ্ট করে ফেলবেন।
কাফিরদের ঈমান আনার জন্য যুক্তি ও প্রমাণের অভাব নেই, কিন্তু তাদের কুফরির কারণ হল একগুঁয়েমি এবং অহংকার।
অত্যাচারী ও তাগুতরা এই পৃথিবীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বেচে থাকার জন্য সকল মানুষকে হত্যা করতে প্রস্তুত।
যারা অন্যায় করে, আল্লাহ তাদের এমন জায়গা থেকে শাস্তি দেন যেখানে তারা কল্পনাও করেনি। যেমন লোকেরা যখন ছেলেটির দৃঢ়তা, তার আহ্বানের সত্যতা এবং আল্লাহর ক্ষেত্রে তিরস্কারকারীদের তিরস্কারকে ভয় না করা দেখল, তখন তারা তার রবের প্রতি আনল।
ঈসা আলাইহিস সালাম ছাড়া অন্যরাও দোলনায় কথা বলেছে। এই হাদীসটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্তির ব্যাখ্যা করে: "শুধুমাত্র তিনজন ছাড়া কেউ দোলনায় কথা বলেনি..." তিনি তাদের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদেরকে কেবল বনী ইসরাঈলদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন, অন্য কারো মধ্যে নয়।