“অচিরেই ফিতনা দেখা দিবে। জেনে রাখ, এটার পর নানা ধরনের ফিতনা এসে পড়বে। সে সময় বসা অবস্থায় থাকা ব্যক্তি চলমান…

“অচিরেই ফিতনা দেখা দিবে। জেনে রাখ, এটার পর নানা ধরনের ফিতনা এসে পড়বে। সে সময় বসা অবস্থায় থাকা ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির তুলনায় উত্তম এবং চলমান ব্যক্তি উক্ত ফিতনার দিকে দ্রুতগামী ব্যক্তির তুলনায় উত্তম।

উসমান আশ-শাহহাম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও ফারকাদ সাবাখী মুসলিম ইবনু আবূ বকরাহ (রহ.) এর নিকট গেলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি তার স্বীয় ভূমিতে বসা ছিলেন। তার নিকট প্রবেশ করলাম। আমরা তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি আপনার আব্বাকে ফিতনা সম্পর্কে কোন হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমি আবূ বকরাহ রদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে এ কথা বর্ণনা করতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “অচিরেই ফিতনা দেখা দিবে। জেনে রাখ, এটার পর নানা ধরনের ফিতনা এসে পড়বে। সে সময় বসা অবস্থায় থাকা ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির তুলনায় উত্তম এবং চলমান ব্যক্তি উক্ত ফিতনার দিকে দ্রুতগামী ব্যক্তির তুলনায় উত্তম। সাবধান যখন ফিতনাহ আপতিত হবে অথবা সংঘটিত হবে, এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি উটের মালিক সে তার উট নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। আর যার বকরী আছে সে তার বকরী নিয়ে ব্যস্ত থাকুক এবং যার জমিন আছে সে তার জমিন নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। এ কথা শুনে তখন জনৈক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যার উট, বকরী ও জমিন কিছুই নেই, সে কি করবে? জবাবে তিনি বললেন: “সে তার তরবারি হাতে ধারণ করতঃ প্রস্তরাঘাতে সেটার ধারালো তীক্ষ অংশ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলবে। অতঃপর সে নিরাপদে থাকা সম্ভব হলে নিরাপদে থাকুক। অতঃপর তিনি বললেন: হে আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়ে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি পৌছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়ে দিয়েছি?” এ সময় জনৈক লোক বলল: হে আল্লাহর রাসূল! যদি চাপ সৃষ্টি করে দু’ সারির কোন একটিতে অথবা দু’ দলের কোন এক দলে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়, আর কোন এক লোক তার তরবারি দিয়ে আমাকে আঘাত করে বা তীর এসে আমার গায়ে লাগে এবং আমাকে সে মেরে ফেলে, তবে আমার অবস্থা কি হবে? উত্তরে তিনি বললেন: “তবে সে তার এবং তোমার পাপের বোঝা বহন করবে এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামে পতিত হবে।”

[সহীহ] [এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

উসমান আশ-শাহহাম ও ফারকাদ আস-সাবখী মুসলিম ইবনে আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন: তিনি তাঁর পিতা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো হাদীস শুনেছেন কি না, যা মুসলিমদের মধ্যে সংঘটিত ফিতনা ও যুদ্ধ সম্পর্কে। তিনি বললেন: হ্যাঁ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে তাঁর মৃত্যুর পর ফিতনা সংঘটিত হবে। এই ফিতনায় অজ্ঞ ও অসচেতন ব্যক্তি, যে এর দিকে ঝুঁকছে না এবং তা খুঁজছে না, সে ফিতনায় জড়িত ব্যক্তির চেয়ে উত্তম। আর ফিতনায় জড়িত ব্যক্তি, যে তাতে ধীর পায়ে হাটছে, সে তার চেয়ে উত্তম সে ব্যক্তি যে এর দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে এবং তাতে অংশ নিচ্ছে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ব্যক্তিকে পথনির্দেশ দিয়েছেন যার যুগে বা যার কাছে ফিতনা সংঘটিত হয়েছে, যদি সে কোনো আশ্রয়স্থল পায়, তাহলে সে যেন সেখানে আশ্রয় নেয়। যার উট চরছে, সে যেন তার উটের কাছে চলে যায়, যার ছাগল চরছে, সে যেন তার ছাগলের কাছে চলে যায়, আর যার জমি ও খামার আছে, সে যেন তার জমিতে চলে যায়। এক ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, যার উট, ছাগল বা জমি নেই, তার ব্যাপারে আপনার কী মত? তিনি বললেন: সে যেন তার অস্ত্র নেয় এবং তা ভেঙে ফেলে বা নষ্ট করে দেয়, তারপর পালিয়ে যায় এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে নিজেকে এবং তার সন্তানদের বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যাবে। তারপর তিনি তিনবার সাক্ষ্য দিলেন এবং বললেন: হে আল্লাহ, আমি কি আপনার বার্তা পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ, আমি কি আপনার বার্তা পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ, আমি কি আপনার বার্তা পৌঁছে দিয়েছি? তখন এক ব্যক্তি বললেন: "হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমাকে বাধ্য করা হয় দুই পক্ষের যেকোনো এক পক্ষে যোগদান করতে, এবং কোনো ব্যক্তি তরবারি দিয়ে আমাকে আঘাত করে বা কোনো তীর এসে আমাকে হত্যা করে, তাহলে এর হুকুম কী?" তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: সে তার নিজের গুনাহ এবং যাকে হত্যা করেছে তার গুনাহ বহন করবে, এবং কিয়ামতের দিন সে জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে গণ্য হবে।

فوائد الحديث

ফিতনার ঘটনার পূর্বাভাস দেওয়া যাতে মানুষ সেগুলি থেকে সাবধান থাকে, এবং সেগুলির মধ্যে না জড়িয়ে পড়ে, তারা যেন আল্লাহর কাছে ধৈর্য কামনা করে এবং তার অনিষ্ট থেকে মুক্তি প্রার্থনা করে।

ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী «القاعد فيها خير من القائم» এর অর্থ হলো এর ভয়াবহতা বর্ণনা করা এবং এ থেকে দূরে থাকা ও পালিয়ে যাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা। আর এর অনিষ্ট ও ফিতনা এর সাথে জড়িত হওয়ার মাত্রার উপর নির্ভর করে।

ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন: সেখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য জোরপূর্বক বাধ্য করা ব্যক্তির গুনাহ মাফ করা হয়েছে। তবে হত্যার ক্ষেত্রে জোরপূর্বক বাধ্য করলে তা জায়েয নয়, বরং ঐ ব্যক্তি গুনাহগার হবে, এ ব্যাপারে ইজমা (ঐকমত্য) রয়েছে।

ইবনে হাজার (রহ.) বলেছেন: অন্যরা বলেছেন, যদি কোনো দল ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অস্বীকার করে ও যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ওয়াজিব। অনুরূপভাবে, যদি দুটি দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তির উপর অপরাধী দলকে প্রতিহত করা এবং সঠিক দলকে সাহায্য করা ওয়াজিব। এটি জমহুরের (অধিকাংশের) মত। অন্যরা এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে বলেছেন, মুসলিমদের দুটি দলের মধ্যে যখন কোনো ইমাম (নেতা) না থাকে এবং তারা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন যুদ্ধ নিষিদ্ধ। এই অধ্যায় এবং অন্যান্য অধ্যায়ের এ মর্মের হাদীসগুলো এই অর্থে প্রযোজ্য।

ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন: ফিতনার সময় যুদ্ধ সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। একদল বলেছেন, মুসলিমদের ফিতনার সময় যুদ্ধ করা যাবে না, এমনকি যদি তারা তার ঘরে প্রবেশ করে এবং তাকে হত্যা করতে চায়, তবুও নিজেকে রক্ষা করা তার জন্য জায়েয হবে না; কারণ আক্রমণকারী তাওয়িল (ব্যাখ্যা) এর ভিত্তিতে কাজ করছে। এটি আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং অন্যান্য সাহাবীর মত। ইবনে উমর ও ইমরান ইবনুল হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এবং অন্যান্যদের মতে, ফিতনায় জড়ানো যাবে না, তবে যদি নিজেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এই দুটি মতই ইসলামের সকল ফিতনা থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে একমত। অধিকাংশ সাহাবা, তাবেঈন এবং সাধারণ ইসলামিক আলেমরা বলেছেন, ফিতনার সময় সত্যের পক্ষে থাকা ব্যক্তিকে সাহায্য করা ওয়াজিব এবং তার সাথে মিলিত হয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন: «فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ...» (সূরা হুজুরাত, আয়াত ৯)। এটি সঠিক মত। এবং হাদীসগুলোর ব্যাখ্যা করা হবে যে, এগুলো তাদের জন্য প্রযোজ্য যাদের কাছে সত্যের পক্ষ স্পষ্ট নয় বা দুটি জালিম দলের ক্ষেত্রে যাদের কোনো তাওয়িল (যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা) নেই।

التصنيفات

রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা