আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (আমীরের) কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো দাস…

আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (আমীরের) কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো দাস আমীর হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধর এবং তা মাড়ির দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধর।

ইরবাদ বিন সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এ যেন বিদায়ী ভাষণ। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন। তিনি বললেন: “আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (আমীরের) কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো দাস আমীর হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধর এবং তা মাড়ির দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধর। আর তোমরা দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাক। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”

[সহীহ]

الشرح

একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে তাদের অন্তরসমূহ ভীত হলো এবং চোখ দিয়ে অশ্রু সিক্ত হলো। ফলে তারা বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ওয়াজে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। ফলে তারা তাঁর কাছে অন্তিমকালীন উপদেশ চাইল, যাতে তারা তাঁর মৃত্যুর পরে সেগুলো আঁকড়িয়ে ধরে রাখতে পারেন। তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি তোমাদেরকে মহান আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করতে অসিয়াত করছি। আর তা অর্জিত হবে ওয়াজিব কাজসমূহ করা ও হারাম কাজসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। এছাড়াও আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার ব্যাপারে; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। অর্থাৎ তোমাদের মধ্যকার নিম্নস্তরের কোন লোকও যদি আমীর হয়, তবুও তোমরা তার আনুগত্য লজ্জা পেয়ো না; বরং তোমরা তার আনুগত্য করো, যাতে ফিতনা ছড়িয়ে না পড়ে। কেননা তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখতে পাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব ফিতনা ও মতানৈক্য থেকে বেঁচে থাকার পন্থা বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো নবীর সুন্নাত ও তাঁর মৃত্যুর পরে সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে। তারা হলেন: আবূ বকর সিদ্দীক, উমার ইবন খাত্তাব, উসমান ইবন আফফান ও আলী ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমা‘ঈন। তাদের সুন্নাত মাড়ির দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধরে থাকবে অর্থাৎ তাদের সুন্নাতের উপর অটল থাকা এবং তা মজবুতভাবে আঁকড়িয়ে ধরা। তিনি দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকতে সতর্ক করেছেন। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।

فوائد الحديث

সুন্নাহ আঁকড়িয়ে ধরা এবং এর অনুসরণ করার গুরুত্ব হাদীসটিতে বর্ণিত হয়েছে।

উত্তম নসীহাহ ও অন্তরসমূহ নরমকারী কথার গুরুত্ব এ হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরে খুলাফায়ে রাশেদীনদের অনুসরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন: আবূ বকর সিদ্দীক, উমার ইবন খাত্তাব, উসমান ইবন আফফান ও আলী ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুম।

দ্বীনের মধ্যে কোন কিছু আবিষ্কার তথা বিদ‘আত সৃষ্টি করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা।

যিনি মুমিনদের কর্তৃত্বের অধিকারী হবেন, ভালো কাজে তার কথা শোনা ও তার আনুগত্য করা।

সর্বদা সকল কাজে মহান আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করার গুরুত্ব হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

এ ‍উম্মতের মধ্যে নানা মতানৈতক্য সংঘটিত হয়েছে। এসব মতানৈক্যের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও খুলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়া অত্যবশ্যক।

التصنيفات

সুন্নতের গুরুত্ব ও তার মর্যাদা, সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের ফযীলত, নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রপ্রধাণের অধিকার, খোলাফায়ে রাশেদীন-রাদিয়াল্লাহু আনহুম-এর ফযীলতসমূহ