দুই প্রকার জাহান্নামী আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করি নি (অর্থাৎ আমার পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে): (১) এমন এক সম্প্রদায়…

দুই প্রকার জাহান্নামী আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করি নি (অর্থাৎ আমার পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে): (১) এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এমন এক শ্রেণির মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মতো। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করি নি (অর্থাৎ, আমার পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে): (১) এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এমন এক শ্রেণীর মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মতো। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে।”

[সহীহ] [এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

হাদীসটির অর্থ, “দুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করি নি। অর্থাৎ তার যুগ পবিত্র হওয়ার কারণে তিনি তাদের সে যুগে দেখেননি। বরং এরা তার যুগের পরে দেখা দিয়েছে। এটি তার মুজিযা যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার নবীকে সহায়তা করেছেন। উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে- ১-এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। আলেমগণ বলেন, এরা হলো পুলিশ যারা অন্যায়ভাবে মানুষকে প্রহার করে। তাদের কাছে থাকবে গরুর লেজের মতো চাবুক। অর্থাৎ, লম্বা লাঠি যার দ্বারা অন্যায়ভাবে মানুষকে আঘাত করবে। ২-এমন এক শ্রেণির মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। এর ব্যাখ্যায় অনেকে বলেছেন: তারা তাদের বাস্তবিক কাপড় পরিধান করবে কিন্তু তাকওয়া থেকে উলঙ্গ হবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, (আর তাকওয়ার লিবাস, তাই উত্তম) এ কথার ভিত্তিতে হাদীসটি প্রত্যেক অন্যায়কারী ও অশ্লীল নারীদের শামিল করে যদিও তাদের পরনে মোটা কাপড় থাকে। কারণ, কাপড় দ্বারা উদ্দেশ্য বাহ্যিক কাপড় ও তাকওয়াহীন স্বাভাবিক পরিধেয়। কারণ, তাকওয়া থেকে উলঙ্গ ব্যক্তিই প্রকৃত উলঙ্গ। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ( ولباس التقوى ذلك خير) “আর তাকওয়ার লিবাসই উত্তম লিবাস।” আবার কেউ কেউ বলেছেন, “পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকবে।” অর্থাৎ ‘তাদের পরনে বাহ্যিক কাপড় থাকবে কিন্তু তাদের শরীর ঢাকবে না।’ কাপড় অস্বাভাবিক চিপা বা পাতলা বা খাটো হওয়ার কারণে শরীর ঢাকবে না তাই তারা উলঙ্গ থাকবে। যে সব মহিলারা এ ধরনের কাপড় পরিধান করবে তাদের সবাইকে কাপড় পরহিতা বলা হবে ঠিকই তবে উলঙ্গ। “ঝুলিয়ে রাখা/আকর্ষণ করা।” অর্থাৎ বেণী ঝুলে থাকবে, কেউ কেউ এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে, সেটা হচ্ছে ঝুলানো সিঁতা/বেণী, যার কারণে চিরুনী এক পাশেই নিয়ে রাখবে, (সেটা বারবার আঁচড়ানোর জন্যে)। এটাও এক প্রকার ঝুলানো। কারণ, সে তার চুলের সীতা দ্বারা অন্যদের অন্তর তার প্রতি ঝুলিয়ে রাখে। এ ধরনের আকর্ষণ আমাদের নিকট পৌঁছেছে অমুসলিম নারীদের থেকে। নাঊযুবিল্লাহ। কতক মহিলা তাদের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ল। ফলে তারা তাদের চুলকে আঁচড়িয়ে একপাশ দিয়ে ছেড়ে দেওয়াতে তা এক ধরনের আকর্ষণীয় চিরুনি করণ হয়। আবার কেউ কেউ এর অর্থে বলেন, ফিতনায় নিপতিত কারিণী। কারণ, তাদের নির্লজ্জ হয়ে এবং অস্বাভাবিক সাজ-সজ্জা ইত্যাদি গ্রহণ করে বের হওয়া অন্যদেরকে ফিতনায় ফেলে। "مُمِيَلات" শব্দটি দুটি অর্থই শামিল করে। কারণ, নিয়ম হলো যখন কোনো শব্দে দুটি অর্থের সম্ভাবনা থাকে এবং কোনটি প্রাধান্য দেওয়ার কোনো আলামত না থাকে তখন দুটি অর্থের ওপরই তার প্রয়োগ করা যাবে। এখানে প্রাধান্য দেওয়ার কোনো আলামত নেই এবং উভয় অর্থের ওপর প্রয়োগ করাতে কোনো বাধা নেই। তাই উভয় অর্থকেই শামিল করবে। আর তার বাণী: " مَائِلات " অর্থাৎ হক থেকে বিচ্যুত এবং তাদের ওপর যে লজ্জা শরম থাকা উচিৎ ছিল সেটা থেকেও বিচ্যুত। তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে বাজারে ও রাস্তা-ঘাটে তারা পুরুষের মতে দৌড়ে ও বেধড়ক হাঁটতে থাকে। এমনকি অনেক সময় দেখতে পাবে, অনেক পুরুষও তাদের মতো এ ধরনের হাঁটা হাঁটতে পারবে না। কঠিনভাবে হাঁটা, যমীনে কঠিন আঘাত করা এবং কাউকে পরোয়া না করার কারণে তাকে মনে হবে একজন সৈনিক। অনুরূপভাবে তার সাথী সঙ্গীদের সাথে এমন বড় আওয়াজে হাঁসি ঠাট্টা ও কথা-বার্তা বলে যা কেবল ফিতনাকেই উসকিয়ে দেয়। এ ছাড়াও তারা দোকানে গিয়ে দোকানদারদের সাথে দ্বিধাহীন কেনা-বেচা করা, তাদের সাথে হাসাহাসি করা এবং নানা ধরনের অন্যায়-অনাচারে জড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের মহিলারা নিঃসন্দেহে সত্য বিমুখ। আমরা আল্লাহর কাছে সুরক্ষা চাচ্ছি। তার বাণী: " رُؤُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ البُخْتِ المائِلة " “তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুজের মতো।” আল-বুখত: এক ধরনের উট যার রয়েছে লম্বা কুঁজো, ডান দিকে একবার হেলে আবার বাম দিকে একবার হেলে। এ সব মহিলারাও তাদের মাথার চুলগুলোকে উঁচা করে বাঁধে যা উটের কুঁজোর মতো একবার ডানে আরেকবার বামে হেলে। কোনো কোনো আলেম বলেন, এ সব মহিলারা তাদের মাথার উপর পুরুষদের মতো পাগড়ী লাগায় যাতে ওড়না উঁচা হয়ে থাকে এবং তা উটের কুঁজোর মতো হয়। মোট কথা, এ ধরনের মহিলারা এমন সাজ-সজ্জা গ্রহণ করে যা অন্যদেরও ফিতনায় নিপতিত করে। এ সব মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। নাঊযু বিল্লাহ। অর্থাৎ, জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের কাছেও যেতে পারবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক দূর তথা সত্তর বছরের দূরত্বের পথ বা তার থেকেও অধিক দূর থেকে পাওয়া যাবে। তা সত্বেও এ ধরনের মহিলা জান্নাতের কাছেও যেতে পারবে না। নাঊযুবিল্লাহ। কারণ, তারা সঠিক পথ থেকে খারিজ হয়ে গেছে। তারা এমন এক শ্রেণির মহিলায় পরিণত হয়েছে, “যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে।” তার মাথার উপর এমন সাজ সজ্জা রয়েছে যা মানুষকে ফিতনা জড়িত হওয়া এবং সৌন্দর্য প্রদর্শনের দিকে আহ্বান করে। মিরাকাতুল মাফাতীহ (২৩০২/৬) ইবনে উসাইমীনের রিয়াদুস সালেহীনের ব্যাখ্যা। (৩৭২/৬)

التصنيفات

জান্নাত ও জাহান্নামের গুণাগুণ