“(এক) স্বামী কিংবা মাহরাম(যার সাথে কখনো বিবাহ জায়েয নেই) ব্যতীত কোন মহিলা দু’দিনের পথ সফর করবে না।* (দুই)‘ঈদুল ফিতর…

“(এক) স্বামী কিংবা মাহরাম(যার সাথে কখনো বিবাহ জায়েয নেই) ব্যতীত কোন মহিলা দু’দিনের পথ সফর করবে না।* (দুই)‘ঈদুল ফিতর এবং ‘ঈদুল আযহা- এ দুই দিন কেউ সাওম পালন করবে না। (তিন)‘আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের পর সূর্য উদয় পর্যন্ত কেউ কোন সালাত আদায় করবে না। (চার)আর মাসজিদে হারাম,মাসজিদে আকসা এবং আমার এই মাসজিদ (মাসজিদে নাববী) এ তিন মাসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মাসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে না।”

আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত: (যিনি নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন) তিনি বলেন, চারটি বিষয় যা আমি আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি এ বিষয়গুলো আমাকে আশ্চর্যান্বিত করেছে। তিনি বলেন: “(এক) স্বামী কিংবা মাহরাম(যার সাথে কখনো বিবাহ জায়েয নেই) ব্যতীত কোন মহিলা দু’দিনের পথ সফর করবে না। (দুই)‘ঈদুল ফিতর এবং ‘ঈদুল আযহা- এ দুই দিন কেউ সাওম পালন করবে না। (তিন)‘আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের পর সূর্য উদয় পর্যন্ত কেউ কোন সালাত আদায় করবে না। (চার)আর মাসজিদে হারাম,মাসজিদে আকসা এবং আমার এই মাসজিদ (মাসজিদে নাববী) এ তিন মাসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মাসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে না।”

[সহীহ] [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

الشرح

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন: প্রথমত: মহিলাদেরকে তাদের স্বামী বা কোনো মাহরাম অর্থাৎ যার সাথে চিরস্থায়ীভাবে বিবাহ নিষিদ্ধ, যেমন পিতা,পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, চাচা, মামা ইত্যাদি ব্যতীত দু'দিনের পথের সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন সাওম পালনে নিষেধ করা হয়েছে। এটি মানত, নফল বা কাফফারা যে ধরনের সাওমই হোক না কেন, এই দুই দিন সাওম পালন করা নিষিদ্ধ। তৃতীয়ত: আসরের সালাতের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত এবং ফজরের সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত নফল সালাত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। চতুর্থত: এই তিনটি মসজিদ (মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা) ছাড়া অন্য কোনো স্থানের বিশেষ ফযীলত বা সেখানে নেকি বৃদ্ধির বিশ্বাস করে সেখানে সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে। এই তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে অধিক নেকির আশায় সালাত পড়ার উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না, কারণ নেকি কেবল এই তিন মসজিদে বৃদ্ধি পায়।

فوائد الحديث

নারীর জন্য মাহরাম ছাড়া ভ্রমণ নিষিদ্ধ।

নারীর জন্য অন্য নারী মাহরাম নয়; যেমন হাদীসে বলা হয়েছে: "তার স্বামী বা মাহরাম পুরুষ।"

যে ভ্রমণকে সফর বলা হয়, নারীকে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া সে সফর থেকে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসটি প্রশ্নকারীর অবস্থা ও তার অবস্থান অনুযায়ী বর্ণিত হয়েছে।

নারীর মাহরাম হলো তার স্বামী বা এমন ব্যক্তি যার সাথে চিরতরে তার বিবাহ নিষিদ্ধ, যেমন পিতা, পুত্র, চাচা, মামা, বা দুধ সম্পর্ক যেমন দুধ সম্পর্কীয় পিতা বা দুধ সম্পর্কীয় চাচা, অথবা বিবাহ সম্পর্কিত মাহরাম যেমন, শ্বশুর। মাহরাম ব্যক্তি অবশ্যই মুসলিম, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন, বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ হতে হবে। কারণ মাহরাম থাকার উদ্দেশ্য হলো নারীর নিরাপত্তা দেয়া, তাঁকে রক্ষা করা ও তার বিষয়ে দেখাশোনা ও প্রয়োজনিয় দায়িত্ব পালন করা ।

ইসলামী শরীয়ত নারীর যত্ন, নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।

ফজর ও আসরের সালাতের পর সাধারণ নফল সালাত পড়া জায়েয নয়। তবে ফরয সালাতের কাজা বা বিশেষ কারণযুক্ত সালাত, যেমন মসজিদে প্রবেশের সালাত (তাহিয়্যাতুল মসজিদ), এগুলো পড়া জায়েয।

সূর্যোদয়ের পরপরই সালাত পড়া নিষিদ্ধ। সূর্য কিছুটা উপরে উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যা প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় নেয়।

আসর সলাতের সময় সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।

তিন মসজিদে ভ্রমণের বৈধতা রয়েছে।

তিন মসজিদের বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা জায়েয নয়, এমনকি যদি নবী (সা.)-এর কবরের উদ্দেশ্যেও হয়। তবে মদিনায় অবস্থানকারীর জন্য বা শরীয়তসম্মত বা বৈধ উদ্দেশ্যে মদিনায় আগমনকারীর জন্য তার কবর যিয়ারত করা জায়েয।

التصنيفات

মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুন নবী ও বায়তুল মাকদিসের বিধানাবলি, নারীদের বিধানাবলি, মক্কা, মদিনা ও আল-আকসার ইতিহাস