একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার পথে চলছিলেন, এরপরে তিনি ’জুমদান’ নামক একটি পাহাড় দিয়ে…

একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার পথে চলছিলেন, এরপরে তিনি ’জুমদান’ নামক একটি পাহাড় দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এরপর তিনি বললেন: “তোমরা খুব দ্রুত চলো এটি জুমদান পাহাড়। @মুফার্‌রিদগণ অগ্রগামী হয়েছে।*” সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রসূল, মুফার্‌রিদ কারা? তিনি বললেন: বেশি বেশি আল্লাহর যিকিরকারী পুরুষ ও নারীগণ।”

আবূ হুরাইরাহ রদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার পথে চলছিলেন, এরপরে তিনি ’জুমদান’ নামক একটি পাহাড় দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এরপর তিনি বললেন: “তোমরা খুব দ্রুত চলো এটি জুমদান পাহাড়। মুফার্‌রিদগণ অগ্রগামী হয়েছে।” সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রসূল, মুফার্‌রিদ কারা? তিনি বললেন: বেশি বেশি আল্লাহর যিকিরকারী পুরুষ ও নারীগণ।”

[সহীহ] [এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্বরণকারীদের মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, তারা জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা লাভের প্রতিযোগিতায় অন্যান্যদের থেকে এককভাবে অগ্রগামী হয়েছে, তিনি তাদেরকে জুমদান পাহাড়ের সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন,যা অন্যান্য পাহাড়ের তুলনায় একক ও অনন্য।

فوائد الحديث

অধিক হারে যিকির করা এবং তাতে মশগুল থাকা মুস্তাহাব; কেননা আখিরাতে অগ্রগামী হওয়ার ব্যাপারটি আনুগত্য (সৎকর্ম) এবং ইবাদাতের মধ্যে ইখলাসের উপরে নির্ভর করে।

আল্লাহর যিকির শুধু মুখে মুখে, অথবা শুধু অন্তরে অথবা মুখ ও অন্তর উভয় ক্ষেত্রে হতে পারে, আর শেষোক্তটিই সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ।

শরী‘আতে বর্ণিত নির্দিষ্ট যিকিরের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: সকাল-সন্ধ্যার যিকির, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরের যিকির সহ আরো অনুরূপ যিকিরসমূহ।

ইমাম নববী বলেছেন: জেনে রাখ! যিকিরের ফযীলত শুধুমাত্র

তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি যিকিরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় , বরং আল্লাহর আনুগত্যকারী প্রতিটি আমলকারী ব্যক্তিই আল্লাহ তা‘আলার যিকিরকারী।

আল্লাহর পথে অবিচল থাকার সবচেয়ে অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর যিকির, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ “হে ঈমানদারগণ, যখন তোমরা কোন দলের সম্মুখীণ হবে, তখন অবিচল থাকবে আর আল্লাহর যিকির বেশী পরিমাণে করবে, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।” [আল-আনফাল: ৪৫]

যিকিরকারীদের ও জুমদান পাহাড়ের মধ্যে সাদৃশ্যের দিক হচ্ছে স্বাতন্ত্রতা এবং অনন্য হওয়া; কেননা জুমদান পাহাড় অন্যান্য পাহাড়ের থেকে আলাদা, ঠিক অনুরূপভাবে যারা অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করে তারাও। অনন্য বা স্বতন্ত্র বলতে বোঝানো হয়েছে যাদের মুখ ও অন্তর তাদের রবের যিকিরে মশগুল থাকে, যদিও তারা মানুষের মধ্যে অবস্থান করে। আর তারা একাকী সময় কাটানোকে পছন্দ করে এবং অধিক পরিমাণে মানুষের মধ্যে থাকতে অপছন্দ করে। আবার সাদৃশ্য প্রদানের আরো একটি দিক থাকতে পারে তা হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলার যিকির মানুষকে দীনের উপর অবিচল রাখার মাধ্যম যেভাবে পাহাড় যমীনকে অবিচল রাখার একটি মাধ্যম। আবার এরকমও হতে পারে যে, দুনিয়া ও আখিরাতে ভালোকাজে অগ্রগামী হওয়া, যেভাবে একজন মুসাফির ব্যক্তি মদীনা থেকে মক্কার দিকে যেতে থাকে, যখন সে জুমদান পাহাড়ের কাছে পৌঁছে, তখন এটি তার মক্কায় পৌঁছে যাওয়ার আলামত হিসেবে বিবেচিত হয়, আর যে ব্যক্তি সেখানে পৌঁছে যায় সে অগ্রগামী হয়ে যায়, ঠিক অনুরুপভাবে আল্লাহ তা‘আলার যিকিরকারী ব্যক্তিও আল্লাহ তা‘আলাকে বেশী বেশী স্বরণ করার কারণে অন্যান্যদের তুলনায় অগ্রগামী হয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্বোজ্ঞ।

التصنيفات

যিকিরের ফযীলত