“ঐ সম্প্রদায়ের কি হলো যে, তারা এ ধরনের কথা বলে? কিন্তু আমি সালাত আদায় করি এবং নিদ্রাও যাই, সাওম পালন করি, ইফতার করি…

“ঐ সম্প্রদায়ের কি হলো যে, তারা এ ধরনের কথা বলে? কিন্তু আমি সালাত আদায় করি এবং নিদ্রাও যাই, সাওম পালন করি, ইফতার করি এবং নারীদেরও বিয়ে করি। সুতরাং যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।”

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত: সাহাবীগণের একটি জামা‘আত নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে তাঁর গোপন ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন? তাদের মধ্যে একজন বললেন, আমি কখনো বিবাহ করবো না, অপরজন বললেন, আমি কখনো গোস্ত খাবো না, অপর জন বললেন, আমি কখনো বিছানায় ঘুমাবো না। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছলে, তিনি আল্লাহর হামদ ও প্রসংশা করেন এবং বলেন: “ঐ সম্প্রদায়ের কি হলো যে, তারা এ ধরনের কথা বলে? কিন্তু আমি সালাত আদায় করি এবং নিদ্রাও যাই, সাওম পালন করি, ইফতার করি এবং নারীদেরও বিয়ে করি। সুতরাং যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।”

[সহীহ] [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]

الشرح

সাহাবীদের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাড়িতে এসেছিলেন, তাঁর ঘরের ভিতরে তাঁর গোপন ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে, যখন তাদের জানানো হল, তখন তারা এটা খুব কম মনে করল এবং বলল: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থানের মোকাবিলায় কোথায় আছি? আল্লাহ তাঁর অতীত এবং ভবিষ্যতের পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন তার বিপরীতে যে নিজের ক্ষমা প্রাপ্তি জানে না, তাই তাকে ইবাদতে কঠোর হতে হবে এই আশায় যে হয়ত সেও তা হাসিল করবে। তখন তাদের কেউ বলল: আমি নারীদের বিয়ে করব না। কেউ বলল: আমি মাংস খাব না। কেউ বলল: আমি বিছানায় ঘুমাব না। এই কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছালে তিনি রাগান্বিত হয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন, তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন ও বললেন: যারা অমুক অমুক কথা বলেছে, তাদের কী হয়েছে?! আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহভীরু এবং আল্লাহ-সচেতন। কিন্তু আমি রাতে কিয়াম করার শক্তি অর্জনের জন্য ঘুমাই, সিয়ামের শক্তি অর্জনের জন্য সিয়াম ভাঙি। আর আমি নারীদের বিয়ে করি, কাজেই যে আমার পদ্ধতি (সুন্নাত) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অন্য কিছুতে পরিপূর্ণতা দেখে আর আমার ছাড়া অন্য কারো তরিকা গ্রহণ করে, তাহলে সে আমার পক্ষের নয়।

فوائد الحديث

কল্যাণের প্রতি সাহাবীদের ভালোবাসা এবং তাতে ও তাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করার জন্য তাদের আগ্রহ।

এই শরীয়তের উদারতা ও সহনশীলতা, যা এর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম ও নির্দেশনা থেকে গৃহীত।

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ অনুসরণ এবং তাঁর মহৎ পথ অনুসরণ করাই কল্যাণ ও বরকত।

ইবাদতের ক্ষেত্রে নিজের উপর অতিরিক্ত কঠোর হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্কীকরণ, কারণ এই অবস্থা বিদআতীদের।

ইবনু হাজার বলেন: ইবাদতে কঠোরতা অবলম্বন করলে একঘেয়েমি আসে যা মূল ইবাদত পরিত্যাগ করা এবং উদাহরণস্বরূপ কেবল ফরজ কাজগুলিতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখার দিকে নিয়ে যায়। অথচ নফল সালাত ত্যাগ করা ইবাদতে অলসতা ও নিষ্ক্রিয়তার দিকে ধাবিত করে। আর সর্বোত্তম জিনিস হল মধ্যপন্থা।

এর মধ্যে রয়েছে মহান ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড অনুকরণ করার জন্য তাদের অবস্থা অন্বেষণ করা এবং যদি পুরুষদের কাছ থেকে তা জানা অসম্ভব হয়, মহিলাদের কাছ থেকে তা জানা বৈধ।

এর মধ্যে রয়েছে ওয়াজ, ইলমী বিষয় নিয়ে আলোচনা, দায়িত্বশীলদের কাছে বিধান ব্যাখ্যা করা ও ইবাদতে পরিশ্রমিদের সন্দেহ দূর করা।

ইবাদতের ক্ষেত্রে কোমলতা অবলম্বন করার নির্দেশ, একই সাথে তা সংরক্ষণ করা এবং ফরজ ও নফল ইবাদতসমূহও সংরক্ষণ করার নির্দেশ, যেন মুসলিম অন্যের অধিকার রক্ষা করতে পারে।

হাদিসটি বিবাহের ফজিলত নির্দেশ এবং তাতে উৎসাহিত করে।

التصنيفات

নববী আদর্শ