বনী আদম আমাকে মিথ্যারোপ করেছে, অথচ এরূপ করার তার পক্ষে বৈধ নয়।

বনী আদম আমাকে মিথ্যারোপ করেছে, অথচ এরূপ করার তার পক্ষে বৈধ নয়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “বনী আদম আমাকে মিথ্যারোপ করেছে, অথচ এরূপ করা তার পক্ষে বৈধ নয়। আর সে আমাকে গালমন্দ করেছে, অথচ এরূপ করাও তার পক্ষে বৈধ নয়। আমাকে তার মিথ্যারোপ করার একটি রূপ হচ্ছে, যেমন সে বলে: আমাকে পুনরায় উত্থিত করা হবে না, যেমন আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ দ্বিতীয়বার উত্থিত করা থেকে প্রথমবার সৃষ্টি করা বেশি কঠিন। আর আমাকে তার গালমন্দ হচ্ছে, যেমন তার কথা: আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, অথচ আমি এক ও অমুখাপেক্ষী, আমি সন্তান জন্ম দিই না এবং আমাকেও জন্ম দেওয়া হয় নি, আর আমার সমকক্ষ কেউ নেই।”

[সহীহ] [এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

এটি হাদীসে কুদসী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিচ্ছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “বনী আদম আমাকে মিথ্যারোপ করেছে, অথচ এরূপ করা তার পক্ষে বৈধ নয়।" অর্থাৎ বনু আদমের একটি গ্রুপ আমাকে মিথ্যারোপ করেছে। এখানে উদ্দেশ্য পরকাল অস্বীকারকারী আরবের মুশরিক ও অন্যান্য মুর্তিপূজক ও খ্রিস্টান। হাদীসের সামনের অংশে এ ব্যাপারে আরো আলোচনা আসছে। অথচ আল্লাহকে মিথ্যারোপ করা তাদের জন্যে উচিত নয়, অনুরূপভাবে আল্লাহরও মিথ্যা বলা উচিত নয়। “আর সে আমাকে গালমন্দ করেছে, অথচ এরূপ করাও তার পক্ষে বৈধ নয়।" অর্থাৎ গালি হচ্ছে কোনো বস্তুকে এমনভাবে বিশেষিত করা, যাতে তার অসম্মান ও ত্রুটি ধরা পরে। এখানে উদ্দেশ্য কতক বনী আদম আল্লাহকে এমনভাবে বিশেষিত করেছে যেখানে তার ত্রুটি প্রকাশ পায়। যেমন তারা আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করেছে, যার বর্ণনা সামনে আসছে। অথচ আল্লাহকে গালমন্দ করা তাদের উচিৎ হয় নি এবং আল্লাহর পক্ষেও গালমন্দ করা শোভা পায় না। অতঃপর সংক্ষেপিত কথাকে বিস্তারিতভাবে বলছেন, আমাকে তার মিথ্যারোপ করার ধরণ হচ্ছে, যেমন সে বলে: আমাকে আবার সৃষ্টি করা হবে না, যেমন আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ বান্দা আল্লাহকে মিথ্যাবাদী বলার অর্থ হচ্ছে, তার ধারণা করা যে, আল্লাহ তাকে মৃত্যুর পর পুনরায় উত্থিত করবেন না, যেমন নাস্তি থেকে তিনি তাকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। এটাই কুফুরী ও মিথ্যারোপ। অতঃপর তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “দ্বিতীয়বার উত্থিত করার চেয়ে প্রথমবার সৃষ্টি করা অধিক সহজ ছিল না।” অর্থাৎ মৃত্যুর পর জীবিত করার চেয়ে নাস্তি থেকে সৃষ্টি করা বেশি সহজ নয়, বরং দু’টিই আমার কুদরতের সামনে বরাবর, বরং পুনরায় উঠানো আরো সহজ। কারণ, মূল উপাদান ও তার চিহ্ন বিদ্যমান আছে। আর তার বাণী: «وأما شتمه إياي فقوله: اتخذ الله ولدا» “অর্থাৎ আল্লাহর জন্যে সন্তান সাব্যস্ত করেছে। যেমন আল্লাহর বাণী: “ইয়াহুদিরা বলেছে উযাইর আল্লাহর ছেলে এবং খ্রিস্টানেরা বলেছেন মাসীহ আল্লাহর ছেলে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩০] এটাই আল্লাহকে গালি দেওয়া, হেয় করা ও তাকে মাখলুকের স্তরে নিয়ে আসা। অতঃপর তাদের প্রতিবাদ করে আল্লাহ বলেছেন: “আমি সত্ত্বা ও গুণগতভাবে একক।” সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র ও সকল পরিপূর্ণগুণে গুণান্বিত। «الصمد» যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, আর তিনি ব্যতীত সবাই তার মুখাপেক্ষী। তিনিই সম্মান ও মর্যাদার সব শাখায় পূর্ণভাবে অধিষ্ঠিত। “আমি কাউকে জন্ম দেয় নি।” অর্থাৎ আমি কারো বাবা নই। “আমাকে জন্ম দেওয়া হয় নি” অর্থাৎ আমি কারো সন্তান নই। কারণ, তিনি শুরু ছাড়াই প্রথম এবং শেষ ছাড়াই সর্বশেষ। অর্থাৎ আমার কোনো উদাহরণ ও সমকক্ষ নেই। এখানে সমকক্ষ নেই বলতে পিতৃত্ব, কারো সন্তান হওয়া, স্ত্রী থাকা প্রভৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এগুলো কিছুই তার নেই।

التصنيفات

তাওহীদুল আসমা ও সিফাত