“আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের উত্তম আমলসমূহের সন্ধান দেব না? যা তোমাদের মালিকের কাছে সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সবচেয়ে…

“আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের উত্তম আমলসমূহের সন্ধান দেব না? যা তোমাদের মালিকের কাছে সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সবচেয়ে মর্যাদা বৃদ্ধিকারী,

আবুদ দারদা রদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের উত্তম আমলসমূহের সন্ধান দেব না? যা তোমাদের মালিকের কাছে সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সবচেয়ে মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, সোনা ও রুপা দান করার চেয়ে উত্তম এবং শত্রুর সম্মুখীন হয়ে তাদের গর্দান কাটা ও তোমাদের গর্দান কাটানোর চেয়ে শ্রেয়।” তারা সকলে বললেন: “অবশ্যই”, তিনি বললেন: “আল্লাহ তা’আলার যিকির।”

[সহীহ]

الشرح

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: - তোমরা কি চাও যে আমি তোমাদেরকে তোমাদের মালিক আল্লাহ তা‘আলার নিকটে তোমাদের সবচেয়ে উত্তম, সবচেয়ে সম্মানিত, সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং সবচেয়ে পবিত্র কাজ সম্পর্কে জানিয়ে দেব? - আর জান্নাতে তোমাদের অবস্থানের দিক থেকে সর্বোচ্চ স্থান (দানকারী) সম্পর্কে? এবং যেটি সোনা ও রোপা দান করার থেকেও উত্তম? আর তোমরা শত্রুদের সাথে লড়াই এর জন্য মিলিত হয়ে তাদেরকে হত্যা করা এবং নিজেরা নিহত হওয়ার থেকেও উত্তম বিষয় সম্পর্কে? সাহাবারা বললেন: হ্যাঁ, আমরা সেটা চাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: প্রতিটি সময়, অবস্থান ও পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা।

فوائد الحديث

প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা নৈকট্যের সবচেয়ে বড় পন্থা এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে সবচেয়ে উপকারী বিষয়গুলির অন্যতম।

আল্লাহর যিকর কায়েম করার উদ্দেশ্যেই সকল আমল চালু করা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي “এবং আমার যিকিরের জন্য সালাত কায়েম কর।” রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়াতে সায়ী করা, পাথর নিক্ষেপ করা সবগুলোই আল্লাহ তা‘আলার যিকির কায়েমের উদ্দেশ্যে।” আবু দাঊদ ও তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

ইযয ইবনু আব্দিস সালাম তার কাওয়ায়েদ-এ বলেছেন: এ হাদীসটি ইঙ্গিত করে যে, সাওয়াব সবসময় সকল ইবাদাতের ক্ষেত্রে কষ্টের পরিমাণের উপরে নির্ভর করে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা কখনো কখনো অল্প আমলের জন্য এতটা সাওয়াব দেন, যা তার থেকে বেশী আমলের জন্যও দেন না। সুতরাং সাওয়াব মর্যাদাগত পার্থক্যের উপরেও নির্ভর করে।

আল-মুনাউয়ী তার ফাইদুল ক্বাদীর গ্রন্থে বলেছেন: এ হাদীসটি যাদের সম্বোধন করে বলা হয়েছে তাদের অবস্থার ওপর প্রোয়াগ করা হবে, যদি কোন সাহসী-নির্ভিক বীরকে উদ্দেশ্য করা হয় এবং তার দ্বারা যুদ্ধের ক্ষেত্রে ইসলামের উপকার হয়, তাহলে তাকে জিহাদের কথাই বলা হবে। অথবা যদি কোন ধনী ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করা হয়, যার সম্পদ দ্বারা গরীবদের উপকার হয়, তাহলে তাকে সদকা করার কথা বলা হবে। যদি হজ্জের সামর্থবানকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে বলা হবে হজ্জ। অথবা যার পিতামাতা রয়েছে এমন কাউকে উদ্দেশ্য করা হলে, বলা হবে তাদের উভয়ের প্রতি সদাচরণ বলা হবে। আর এভাবেই [বিভিন্ন] বর্ণনার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হবে।

পরিপূর্ণ যিকির হচ্ছে যা মুখে বলার পাশাপাশি অন্তরের চিন্তাভাবনার সাথে সংযুক্ত থাকে, তারপরে যা শুধুমাত্র অন্তরে থাকে, যেমন: চিন্তা-ভাবনা করা, তারপরে যা শুধুমাত্র মুখের কথায় হয়ে থাকে। এগুলোর প্রতিটির জন্যই পুরষ্কার রয়েছে -ইনশা আল্লাহ-।

মুসলিম ব্যক্তির জন্য আবশ্যক যে, সে বিভিন্ন অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট যিকিরগুলোর ওপর আমল করবে, যেমন: সকাল ও সন্ধ্যার যিকির, মসজিদ, বাড়ী, টয়লেট ইত্যাদি স্থানে প্রবেশ করা ও বের হওয়াসহ অন্যান্য যিকিরসমূহ এগুলো একজন মুমিনকে আল্লাহর অধিক যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে তোলে।

التصنيفات

যিকিরের ফযীলত