হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক,…

হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এতে কোন পরওয়া করব না

আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছিঃ “বারাকাতময় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এতে কোন পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাক, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব।

[হাসান] [এটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।]

الشرح

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, মহান আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে বলেছেন: হে আদম সন্তান, যতক্ষণ তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার রহমতের আশা করবে এবং নিরাশ হবে না; আমি পরোয়া করা ছাড়াই তোমার পাপকে ঢেকে দিব এবং মুছে দিব, যদিও এই পাপ ও অবাধ্যতা বড় গুনাহ হয়। হে আদম সন্তান: তোমার পাপ যদি এত বেশি হয় যে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে এমনভাবে পূর্ণ করে নেয় যে তার দিগন্ত পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং তার পার্শ্বকে ছুঁয়ে যায়, তাপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর; আমি তোমার সবগুনাহ মুছে দিব ও তোমাকে ক্ষমা করে দিব, তার আধিক্যের পরোয়া করব না। হে আদম সন্তান: তুমি যদি মৃত্যুর পর আমার কাছে পৃথিবীর সমান পাপ ও অবাধ্যতা নিয়ে আস আর তুমি যদি আমার সাথে শরীক না করা অবস্থায় মারা গিয়ে থাক, তাহলে আমি এই পাপ এবং অবাধ্যতাকে পৃথিবীর সমান ক্ষমা নিয়ে মোকাবিলা করব; কারণ আমি সুপ্রশস্ত ক্ষমাশীল এবং আমি শিরক ব্যতীত সকল গুনাহ মাফ করি।

فوائد الحديث

আল্লাহ তা‘আলার করুণা, ক্ষমা এবং তার অনুগ্রহের বিশালতা।

তাওহীদের ফযীলত এবং আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদের ধারকদের ক্ষমা করেন।

শিরকের বিপদ এবং আল্লাহ মুশরিকদের ক্ষমা করবেন না।

ইবনু রজব বলেন: এই হাদীসে তিনটি কারণ রয়েছে যার মাধ্যমে পাপ ক্ষমা করা হয়: প্রথমটি: আশা সহকারে প্রার্থনা করা। দ্বিতীয়টি: ক্ষমা চাওয়া এবং তাওবা করা। তৃতীয়টি: তাওহীদের অবস্থায় মৃত্যু।

এই হাদীসকে যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন হাদীসে কুদসী বা ইলাহী বলা হয়। এই হাদীসের শব্দ ও অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে, তবে তাতে কুরআনের বৈশিষ্ট্য নেই, যার কারণে কুরআন সবকিছু থেকে আলাদা, যেমন তার তিলাওয়াতের মাধ্যমে ইবাদত আঞ্জাম দেওয়া হয় এবং তার জন্য পবিত্রতা হাসিল করতে হয় এবং তার দ্বারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে এবং এটি অলৌকিক ইত্যাদি।

পাপ তিন প্রকার: প্রথমটি: আল্লাহর সাথে শিরক করা; এটি আল্লাহ ক্ষমা করেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন: {إنه من يشرك بالله فقد حرم الله عليه الجنة} {নিশ্চয়ই, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন} দ্বিতীয়টি: বান্দার নিজের নফসের ওপর তার এবং তার রবের মধ্যে সংঘটিত পাপ ও সীমালঙ্ঘন। আল্লাহ যদি চান তা ক্ষমা করেন এবং তা এড়িয়ে যান। তৃতীয়টি: এমন পাপ যা থেকে আল্লাহ কিছুই ছাড় দেন না। এটা বান্দাদের একে অপরের প্রতি অবিচার, তাই প্রতিশোধ গ্রহণ করা আবশ্যক।

التصنيفات

তাওহীদুল আসমা ও সিফাত, আত-তাওবাহ