কুরআনের তাফসীর

কুরআনের তাফসীর

2- “কিয়ামাত কায়েম হবে না, যতক্ষণ না সূর্য তার অস্তাচল থেকে উদয় হবে, যখন তা উদয় হবে আর সকল মানুষ তা প্রত্যক্ষ করবে, তখন সবাই ঈমান আনবে*, কিন্তু তখন হচ্ছে সেই সময়: لاَ يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ، أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا যার অর্থ: “সেদিন কোন ব্যক্তির ঈমান আনা কোন কাজে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান আনেনি অথবা যে ব্যক্তি ঈমানের মধ্যে কোন কল্যাণ অর্জন করেনি।” [আল-আন‘আম: ১৫৮]। অবশ্যই কিয়ামাত এতটা দ্রুত এসে যাবে যে, দুজন ব্যক্তি তাদের বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে একে অপরের কাছে কাপড় মেলে ধরবে, কিন্তু তারা ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ করতে পারবে না এমনকি তা ভাঁজও করতে পারবে না। অবশ্যই কিয়ামাত এত দ্রুত এসে পড়বে যে, এক ব্যক্তি তার উটনীর দুধ দোহন করে ফিরবে অথচ সে তা খেতে পারবে না। অবশ্যই কিয়ামাত এত দ্রুত এসে পড়বে যে, কোন ব্যক্তি তার পানির হাউয প্রস্তুত করবে কিন্তু সে সেখান থেকে পানি পান করতে পারবে না। অবশ্যই কিয়ামাত এত দ্রুত এসে পড়বে যে, তোমাদের একজন তার খাবারের লোকমা তার মুখের দিকে উঁচু করবে অথচ সে তা খেতে পারবে না।”

3- “মৃত্যুকে সাদা-কালো মিশ্রিত একটি ভেড়ার আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে*। তারপরে একজন ঘোষক ডেকে বলবেন: হে জান্নাতের অধিবাসীগণ! তখন তারা ঘাড় উঁচু করে তাকাবে আর উক্ত ঘোষক বলবেন: তোমরা কী একে চিনতে পারছ? তারা বলবে: জ্বী, এটা হচ্ছে মৃত্যু। আর এটা প্রত্যেক ব্যক্তিই দেখতে পাবে। তারপরে ঘোষক আবার ডেকে বলবেন: হে জাহান্নোমের অধিবাসীগণ! তখন তারাও ঘাড় উঁচু করে তাকাবে। আর উক্ত ঘোষক বলবেন: তোমরা কী একে চিনতে পারছ? তারা বলবে: জ্বী, এটা হচ্ছে মৃত্যু। আর এটা তাদের প্রত্যেকেই দেখতে পাবে। তারপরে ভেড়াটিকে যবাই করা হবে আর উক্ত ঘোষক বলবেন: হে জান্নাতের অধিাবসীগণ, স্থায়ীত্ব, আর কোন মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামের অধিবাসীগণ! স্থায়ীত্ব, আর কোন মৃত্যু নেই। এরপরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন: وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ যার অর্থ: “আর তাদেরকে পরিতাপ দিবসের ব্যাপারে সতর্ক কর, যখন ফয়সালা হয়ে যাবে অথচ তারা গাফিলতির মধ্যে থাকবে।” [মারইয়াম: ৩৯]। এবং এ সমস্ত লোকেরা দুনিয়াদার, যারা গাফিলতির মধ্যে থাকবে । {وَهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ} যার অর্থ: “আর তারা ঈমানও আনবে না।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩৯]।

6- একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন: {هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ، وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ، وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ} যার অর্থ: “তিনিই আপনার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন যার কিছু আয়াত ‘মুহকাম’, এগুলো কিতাবের মূল আর অন্যগুলো ‘মুতাশাবিহ’, সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে শুধু তারাই ফেৎনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। অথচ আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলে: আমরা এগুলোতে ঈমান রাখি, সবই আমাদের রবের কাছ থেকে এসেছে’; এবং জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা ছাড়া আর কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না।” [সূরা আলে-ইমরান: ০৭]। আয়িশাহ বলেছেন: তারপরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “@যখন তুমি কাউকে দেখবে সে এমন কিছুর অনুসরণ করছে, যার মধ্যে অস্পষ্টতা রয়েছে, তাহলে জেনে রাখবে, তারাই হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন- ‘তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাকবে*।’”

7- এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বসে বলল: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার কয়েকটি গোলাম রয়েছে। তারা আমাকে মিথ্যা বলে, আমার খিয়ানত করে এবং আমার অবাধ্য। আমি এদেরকে গাল-মন্দ ও মারধর করি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে আমি কেমন? তিনি বললেন: “@তোমার সাথে তারা যে খিয়ানত করেছে, অবাধ্য হয়েছে এবং মিথ্যা বলেছে আর তুমি এ সবের জন্য তাদের যে শাস্তি দিয়েছ তা হিসাব করা হবে।* যদি তোমার শাস্তি অপরাধের সমান হয় তবে তা যথেষ্ট। এতে তোমার লাভ বা ক্ষতি কোনটিই হবে না। আর শাস্তি যদি এদের অপরাধের চেয়ে কম হয়, তবে তা তোমার অতিরিক্ত মর্যাদা। আর তোমার শাস্তি যদি অপরাধের চেয়ে বেশি হয়, তবে অতিরিক্তটির পরিমাণে তাদের পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।” রাবী বলেন: লোকটি একপাশে সরে গিয়ে সজোরে কাঁদতে লাগল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি কি আল্লাহর কিতাব পাঠ কর না: ونَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلاَ تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ যার অর্থ: “এবং কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব মানদন্ড, সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না, যদি তা বিন্দুমাত্রও হয়ে থাকে।” লোকটি বলল: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আল্লাহর কসম! আমার এবং তাদের মধ্যে পৃথক করা ছাড়া উত্তম অন্য কিছু মনে হচ্ছে না। আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি: এরা সবাই মুক্ত।

8- কিছু মুশরিক লাক বহু হত্যা করে এবং বেশি বেশি ব্যভিচার করে। তারপর তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, @আপনি যা বলেন এবং যেদিকে আহবান করেন, তা অতি উত্তম। আমাদের যদি অবগত করতেন, আমরা যা করেছি, তার কাফ্ফারা কী*? এ প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়: (অর্থ) “এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন মাবূদ কে ডাকে না, আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন, তাকে না-হক হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না”। [ফুরকান:৬৮] আরো অবতীর্ণ হয়ঃ ’’হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।’’ [যুমার:৫৩]

9- মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং বলেনঃ “@হে জনমণ্ডলী! তোমাদের হতে আল্লাহ তা’আলা জাহিলিয়াত যুগের দম্ভ ও অহংকার এবং পূর্বপুরুষের অহংকার বাতিল করেছেন*। এখন মানুষ দুই অংশে বিভক্তঃ এক দল মানুষ নেককার, পরহেজগার, আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রিয় ও সম্মানিত এবং অন্য দল পাপিষ্ঠ, দুর্ভাগা, আল্লাহ তা’আলার নিকট অত্যন্ত নিকৃষ্ট, নিচু ও ঘৃণিত। সকল মানুষই আদম সন্তান। আল্লাহ তা’আলা আদম-কে মাটি দিয়ে তৈরী করেছেন। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “হে লোক সকল! তোমাদেরকে আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে তৈরী করেছি, তারপর বিভিন্ন বংশ ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, তোমরা যাতে একে অন্যকে চিনতে পার। যে লোক বেশি পরহেজগার সেই আল্লাহ তা’আলার নিকট বেশী মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ তা’আলা সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত, সব খবর রাখেন। [হুজুরাত ১৩]”।