ইবাদাত বিষয়ক ফিকহ - الصفحة 5

ইবাদাত বিষয়ক ফিকহ - الصفحة 5

17- আবুল আব্বাস সাহল ইবন সা’দ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, আমর ইবন আউফ গোত্রের মাঝে অনিষ্ট (ঝগড়া-বিবাদ) সংঘটিত হয়েছে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে কিছু লোককে নিয়ে তাদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা ক’রে দেওয়ার জন্য সেখানে হাজির হলেন। সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেলেন। অপর দিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। সুতরাং বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট এসে বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি কি সালাতে লোকেদের ইমামতি করবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি চাও।’ অতঃপর বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালাতের ইকামত দিলেন আর আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এগিয়ে গিয়ে (তাহরীমার) তকবীর বললেন লোকেরাও তকবীর বলল। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম ক’রে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালাতরত অবস্থায় কোন দিকে তাকাতেন না, কিন্তু লোকেদের অধিক মাত্রায় হাততালির কারণে তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হাতের ইশারায় (নিজের জায়গায় থাকতে) নির্দেশ দিলেন। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর হাত উপরে তুলে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পিছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে গিয়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত শেষ ক’রে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, “হে লোক সকল! কি ব্যাপার যে, সালাত অবস্থায় কিছু ঘটতে দেখে তোমরা হাততালি দিতে শুরু করলে? (জেনে রেখো, সালাতে) হাততালি দেওয়া তো মহিলাদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কারণ, এটা শুনলে কেউ তার দিকে ভ্রুপেক্ষ না ক’রে পারবে না। হে আবূ বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন ইমামত করতে তোমার কিসের বাধা ছিল?” তিনি বললেন, ‘আবূ কুহাফার ছেলের জন্য সঙ্গত ছিল না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে লোকেদের ইমামত করবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

37- আবুল আসওয়াদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মাদীনায় আসলাম এবং আমি ‘উমার ইব্নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বসলাম। এ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা অতিক্রম করল। তখন জানাযার লোকটি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেলে। অতঃপর অপর একটি (জানাযা) অতিক্রম করল, তখন সে লোকটি সম্পর্কেও প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। (এবারও) তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। অতঃপর তৃতীয় একটি (জানাযা) অতিক্রম করল, লোকটি সম্বন্ধে নিন্দাসূচক মন্তব্য করা হল। তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। আবুল আসওয়াদ বলেন, আমি বললাম, হে আমীরুল মু‘মিনীন! কি ওয়াজিব হয়ে গেল। তিনি বললেন, আমি তেমনই বলেছি, যেমন নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যে কোন মুসলিম সম্পর্কে চার ব্যক্তি ভাল বলে সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন আমরা বলেছিলাম, তিনজন হলে? তিনি বললেন, তিনজন হলেও। আমরা বললাম, দু’জন হলে? তিনি বললেন, দু’জন হলেও। অতঃপর আমরা একজন সম্পর্কে আর তাঁকে জিজ্ঞেস করিনি। এটি বর্ণনা করেছেন বুখারী।

87- আবূ যার থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন যদি তার সামনে শিবিকার খুঁটির ন্যায় কোন জিনিস থাকে সেটা তাকে আড়াল করে রাখবে। আর যদি শিবিকার খুঁটির ন্যায় কোন জিনিস না থাকে তখন নারী, গাধা ও কালো বর্ণের কুকুর তার সলাত নষ্ট করে দেয়। আমি বললাম, হে আবূ যার! লাল ও হলদে বর্ণের কুকুর থেকে কালো বর্ণের কুকুরের পার্থক্য কি? তিনি বলেন, হে ভাতিজা, তুমি আমাকে যেরূপ জিজ্ঞেস করলে আমিও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তদ্রুপ জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, “কালো কুকুর হলো শয়তান।” সহীহ মুসলিম। অপর একটি হাদীসে এসেছে—“ঋতুবতী নারী ও কুকুর সালাত নষ্ট করে দেয়।” সুনানু আবূ দাউদ।

98- রিফা‘আহ ইবন রাফে‘ আয-যুরাকী থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগনের একজন ছিলেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আসল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বসা ছিল। সে তার কাছাকাছি স্থানে সালাত আদায় করল। তারপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে সালাম দিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি তোমার সালাত আবার পড়ো। কেননা তুমি সলাত পড়োনি। তিনি বলেন, তারপর সে ফিরে গেল এবং আগের মতো সালাত আদায় করলো। তারপর আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফিরে এলো। তিনি তাকে বললেন, তুমি তোমার সালাত আবার পড়ো। কেননা তুমি সলাত পড়োনি। সে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে শিখিয়ে দিন কীভাবে সালাত আদায় করবো। তিনি বলেন, “তুমি যখন কিবলামুখী হবে তাকবীর (তাহরীমা) বলো, এরপর তুমি সূরা ফাতিহা পড়ো। তারপর কুরআনের যে অংশ তোমার কাছে সহজ সেখান থেকে পাঠ করো। তারপর যখন তুমি রুকূ করবে তখন তুমি তোমার দুই হাত দুই হাঁটুর উপর রাখবে এবং তোমার পিটকে লম্বা করে বিছিয়ে দেবে। তুমি তোমার রুকূর জন্য ধীরস্থিরতা অবলম্বন করো। অতঃপর যখন তুমি তোমার মাথা উঠাবে তখন তুমি তোমার মেরুদন্ড সোজা কর। যাতে হাঁড়গুলো নিজ নিজ জোড়ার স্থানে ফিরে যায়। তারপর যখন সেজদা করবে তখন তুমি তোমার সেজদার জন্য ধীরস্থিরতা অবলম্বন করো। তারপর যখন তুমি তোমার মাথা উঠাবে তখন তুমি তোমার বাম উরুর ওপর বসো। অতঃপর প্রতি রুকু ও সেজদায় তা করো। মুসনাদে আহমাদ। অপর বর্ণনায় বর্ণিত। তিনি বলেন, “আল্লাহর নির্দেশ মত পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ না করলে তোমাদের কারো সালাত পরিপূর্ণ হবে না। সে তার মুখমণ্ডল ও দু’ হাত কনুইসহ ধৌত করবে, তার মাথা মাসহ করবে এবং দু’পা গোছা পর্যন্ত ধৌত করবে। তারপর তাকবীর বলবে এবং আল্লাহর প্রশংসা করবে। তারপর তাকে যতটুকু অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং তার জন্য যা সহজ হয় তা থেকে কুরআন পড়বে। তারপর তাকবীর বলবে এবং সেজদা করবে। তারপর চেহারাকে বা কপালকে যমীনে এমনভাবে রাখবে যাতে তার শরীরের জোড়াগুলো স্থীর হয়ে পড়ে এবং ঝুঁকে পড়ে। তারপর তাকবীর বলবে এবং সোজা হয়ে তার আসনে বসবে এবং মেরুদন্ডকে সোজা করবে। এভাবে চার রাকা‘আত সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এ সব কর্মসমূহ সম্পাদন করা ছাড়া তোমাদের কারো সালাত পূর্ণ হবে না।” সুনানে আবূ দাউদ। অপর বর্ণনায় বর্ণিত: “তারপর তুমি আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে ওযূ কর। তারপর তাশাহুদ পড়। ইকামত দাও এবং তাকবীর বলো। যদি তোমার কাছে কুরআন জানা থাকে তা থেকে পড়ো। অন্যথায় আল্লাহর প্রশংসা কর, তার তাকবীর বল এবং তাহলীল পড়ো।” সুনানু আবূ দাউদ।