ইবাদাত বিষয়ক ফিকহ

ইবাদাত বিষয়ক ফিকহ

6- ‘উসমান ইবনু ‘আফফান -এর মুক্ত করা দাস হুমরান হতে বর্ণিত। সে দেখেছে, ‘উসমান ইবনু আফফান উযূর পানি নিয়ে ডাকলেন। তারপর তিনি পানির পাত্র হতে তাঁর উভয় হাতের উপর ঢাললেন এবং তাঁর দুই হাত তিনবার ধুলেন। অতঃপর তাঁর ডান হাত পানিতে ঢুকালেন। অতঃপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন ও নাক ঝাড়লেন। অতঃপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার ও তাঁর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, অতঃপর তাঁর মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর প্রত্যেক পা তিনবার ধুলেন; তারপর বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এই উযূর ন্যায় উযূ করতে দেখেছি। এবং তিনি বলেছেন, “@যে ব্যক্তি আমার এই উযূর ন্যায় উযূ করল, তারপর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করল তাতে সে তার মনে কনো কিছু উদয় করলো না, আল্লাহ্ তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন*”।

8- “মুনাফিকদের ওপর সবচেয়ে কঠিন সালাত হলো এশা ও ফজরের সালাত। তারা যদি তার ফযিলত জানতো তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত*। আর আমি ইচ্ছে করেছি, সালাতের আদেশ দিব তারপর ইকামাত দেয়া হবে তারপর একজনকে মানুষদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বলব। অতঃপর আমি কতক মানুষ যাদের সাথে লাকড়ির বোঝা থাকবে তাদেরকে নিয়ে সেসব লোকদের কাছে যাবো যারা সালাতে উপস্থিত হয় না এবং তাদের ওপর তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিব।”

15- “যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করলো সে আল্লাহর যিম্মাদারিতে থাকলো*। অতএব আল্লাহ যেন আপন যিম্মাদারীর কোন বিষয় সম্পর্কে তোমাদের বিপক্ষে বাদী না হন। কারণ তিনি যার বিপক্ষে আপন দায়িত্বের কোন ব্যাপারে বাদী হবেন, তাকে (নিশ্চিত) ধরতে পারবেনই। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে ফেলবেন।”

18- ইবনু যুবায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতে সালাম ফিরানোর পর বলতেন: («لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، ‌وَلَا ‌نَعْبُدُ ‌إِلَّا إِيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ») অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবূদ নেই। তিনি একক ও তাঁর কোন শরীক নেই। তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সব প্রশংসা তারই প্রাপ্য। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রিবর্তন হওয়ার কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবূদ নেই। তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না; তাঁরই যত নেয়ামত, তাঁরই অনুগ্রহ ও তাঁরই উত্তম যত প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া আর সত্য কোন মাবূদ নেই, তাঁরই জন্য খালেস দীন যদিও কাফিরদের তা পছন্দ নয়। আর তিনি (ইবনুয যুবায়র) বলেছেন: @রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের পরে কথাগুলো বলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন।

19- “এমন কোন দিন নাই যাতে নেক আমল করা আল্লাহর নিকট এ দিনগুলো অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের নেক আমল অপেক্ষা অধিক প্রিয় হবে।* সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর পথে জিহাদও কি তদপেক্ষা প্রিয় হবে না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না; আল্লাহর পথে জিহাদও তদপেক্ষা অধিক প্রিয় নয়। তবে কোন ব্যক্তি যদি জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে বের হয়ে যায় এবং দুটির কিছু নিয়ে আর ফিরে না আসতে পারে তবে তার কথা স্বতন্ত্র।”

24- উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর হাবশায় দেখা ‘মারিয়া’ নামক একটা গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। তিনি সেখানে যে সব ছবি দেখেছিলেন, সেগুলোর বর্ণনা দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “@এরা এমন সম্প্রদায় যে, এদের মধ্যে কোন সৎ বান্দা অথবা বলেছেন কোন সৎ লোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ নির্মাণ করত।* আর তাতে ঐ সব ব্যাক্তির ছবি তৈরী করে স্থাপন করতো। এরা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট সৃষ্টি।”

27- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার (ইস্তিগফার) ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তারপর এ দু’আ পড়তেন: اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ @অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনিই সালাম। আপনার পক্ষ থেকেই শান্তি। আপনি বরকতময়, হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত।* বর্ণনাকারী ওয়ালিদ রহ. বলেন, আমি আওযা‘ঈ রহ.কে জিজ্ঞেস করলাম: ইসতিগফার কীভাবে করব? তিনি বললেন: তুমি এভাবে বলবে: أَسْتَغْفِرُ اللهَ، أَسْتَغْفِرُ اللهَ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

29- এক অন্ধ ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার এমন কোন লোক নেই, যে আমাকে মসজিদে নিয়ে আসবে। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিজ ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। লোকটি চলে যাচ্ছিল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন: “@তুমি কি সালাতের আযান শুনতে পাও?” তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তবে তুমি (জামা’আতে) উপস্থিত হবে।”

33- এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন: @আপনি কী মনে করেন , যদি আমি ফরয সালাতসমূহ আদায় করি, রমাদানের সিয়াম পালন করি, হালালগুলোকে হালাল মানি এবং হারামসমূহকে হারাম মনে করি,* আর এর থেকে বেশি কিছু পালন না করি, তবুও কি আমি জান্নাতে যেতে পারব? তিনি উত্তর দিলেন: “হ্যাঁ।” তখন প্রশ্নকারী বললেন: আল্লাহর কসম! আমি এগুলোর থেকে বেশি কিছুই করব না।

35- এক সময় আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মক্কা থেকে মদীনায় ফিরছিলাম। পথিমধ্যে আমরা এক পানির স্থানে পৌঁছলে, কিছু সংখ্যক লোককে আসরের সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করতে দেখলামল। এরা ওযু করতে তাড়াহুড়া করল। আমরা তাদের কাছে পৌঁছে দেখলাম তাদের পায়ের গোড়ালিসমূহ এমনভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে, তাতে পানি পৌঁছেনি। এ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, @“পায়ের গোড়ালিসমূহের জন্য আগুনের শাস্তি। তাই তোমরা পূর্ণমাত্রাই ওযু করো।”

36- “মুওয়াযযিন যখন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলে, তোমাদের কোন ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে তখন তার জবাবে বলেঃ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার*’। যখন মুওয়াযযিন বলে ‘আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ এর জবাবে সেও বলেঃ ‘আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্লাহ’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্লাহ’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘হাইয়্যা আলাস সলাহ’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘লা-হাওলা ওয়ালা- কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘হাইয়্যা ’আলাল ফালাহ’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহ’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’। আযানের এ জবাব দেয়ার কারণে সে জান্নাতে যাবে”।

42- আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন এক লোক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে থাকে, আবার কেউ বংশ কৌলিন্যের কারণে যুদ্ধ করে আবার কেউ মানুষ দেখানোর জন্য যুদ্ধ করে থাকে, এদের মধ্যে কোনটি আল্লাহর রাস্তায় হয়েছে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: @“যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর কালিমাকেই উঁচু রাখার জন্য যুদ্ধ করবে, তার যুদ্ধই শুধু আল্লাহর রাস্তায় হবে।”

47- «إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْعَلْ فِي أَنْفِهِ ثُمَّ لِيَنْثُرْ، وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ، وَإِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلْيَغْسِلْ يَدَهُ قَبْلَ أَنْ يُدْخِلَهَا فِي وَضُوئِهِ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ». “@তোমাদের মধ্যে কেউ যখন অযু করে তখন সে যেন নাকে পানি দেয়, এরপর যেন নাক ঝেড়ে নেয়। আর যে ইস্তিঞ্জা করে সে যেন বেজোড় সংখ্যক ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করে।* আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে তখন সে যেন অযুর পানিতে হাত ঢুকানোর আগে তা ধুয়ে নেয়; কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে।” মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে: «إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلَا يَغْمِسْ يَدَهُ فِي الْإِنَاءِ حَتَّى يَغْسِلَهَا ثَلَاثًا، فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ». “তোমাদের কেউ যখন ঘূম থেকে উঠে, তখন সে যেন তার হাত তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত পাত্রে না ঢুকায়। কারণ সে জানেনা যে, তার হাত রাতে কোথায় ছিল।”

48- ”নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমি দশ রাক‘আত সালাত আমার স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে রেখেছি।* যুহরের পূর্বে দু’রাক‘আত, পরে দু’ রাক‘আত, মাগরিবের পরে দু’রাক‘আত তাঁর ঘরে, ‘ইশার পরে দু’রাক‘আত তাঁর ঘরে এবং দু’রাক‘আত সকালের (ফজরের) সালাতের পূর্বে। আর সময়টি ছিল এমন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট (সচরাচর) কোন লোককে প্রবেশ করতে দেয়া হতো না। তবে উম্মুল মু’মিনীন হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, যখন মুআয্‌যিন আযান দিতেন এবং ফজর (সুবহে-সাদিক) উদিত হতো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করতেন। অপর বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আর পরে দু’রাকা’আত সালাত আদায় করতেন।

56- আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন।* আর যখন রুকূ‘তে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন তখনও একইভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ(সামিয়াল্লাহু লিমান হামেদাহ,রব্বানা ওয়ালাকাল হামদু) বলতেন। কিন্তু সাজদার সময় তিনি এমন করতেন না।

57- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত তাঁর উভয় হতের মধ্যে রেখে আমাকে এমনভাবে তাশাহহুদ শিখিয়েছেন, যেভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সূরা শিখাতেন*,তা হলো : التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ الله وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا الله وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ “সকল বড়ত্ব ও প্রশংসা,সালাতসমূহ:এমনকি সকল মৌখিক, দৈহিক,আর্থিক ও অন্তর্গত ‘ইবাদত এবং সকল পবিত্রতা-উত্তমতা আল্লাহরই জন্য। হে নবী ! আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সবধরনের নিরাপত্তা, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।বর্ষিত হোক সকল বিপদ থেকে নিরাপত্তা-সালাম আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো মা‘বূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। অপর বর্ণনায় বর্ণিত, «إِنَّ اللهَ هُوَ السَّلَامُ، فَإِذَا قَعَدَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ فَلْيَقُلْ: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، فَإِذَا قَالَهَا أَصَابَتْ كُلَّ عَبْدٍ لِلَّهِ صَالِحٍ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، ثُمَّ يَتَخَيَّرُ مِنَ الْمَسْأَلَةِ مَا شَاءَ». আল্লাহর নামই হলো সালাম। সকল বড়ত্ব-প্রশংসা,সালাতসমূহ:এমনকি সকল মৌখিক, দৈহিক,আর্থিক ও অন্তর্গত ‘ইবাদত এবং সকল পবিত্র-উত্তম আল্লাহরই জন্য। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সবধরনের নিরাপত্তা, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।সকল বিপদ থেকে নিরাপত্তা-সালাম আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর বর্ষিত হোক।” যখন সে একথাগুলো বলে তখন তা আসমানে ও জমিনের আল্লাহর প্রতিটি নেক বান্দার কাছে পৌঁছে যায়। (পরে সে বলবে:) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।” এরপর তার যা মন চায় দু’আ করবে।

71- سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: @أَيُّ العَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ؟ قَالَ: «الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا»، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «ثُمَّ بِرُّ الوَالِدَيْنِ» قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ»* قَالَ: حَدَّثَنِي بِهِنَّ، وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِي. ‘আমি নবী@ কে প্রশ্ন করলাম,আল্লাহর নিকট কোন আমলটি সর্বাধিক প্রিয়?’ তিনি বললেন, “যথা সময়ে সালাত আদায় করা।” আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ’তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, “পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।” আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ’তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।* তিনি বলেন, এতটুকু তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন। যদি আমি আরো জিজ্ঞেস করতাম তাহলে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আরো বলতেন।

74- আমি একদা ‘আমর ইবনু আবূ হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। অতঃপর তিনি পানির একটি পাত্র আনতে বললেন। @অতঃপর তিনি তাঁদের (দেখাবার) জন্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর মতো অযু করলেন।* তিনি পাত্রটি কাত করে উভয় হাতের উপর পানি ঢেলে তিনবার তা ধুয়ে ফেলেন। তারপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকালেন এবং তিন আঁজলা পানি দিয়ে তিনবার করে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে তা ঝাড়লেন। অতঃপর পুনরায় পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তিনবার মুখমণ্ডল ধুলেন। অতঃপর পুনরায় পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত দু’-দু’বার ধুলেন। অতঃপর পুনরায় পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তাঁর উভয় হাত সামনে থেকে পেছনে নিয়ে মাসেহ করলেন। তারপর টাখনুসহ দুই পা ধুলেন।

77- “আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা প্রয়োজনে বাইরে পাঠিয়েছিলেন। সফরে আমি অপবিত্র হয়ে পড়লাম এবং (পবিত্র অর্জনের জন্যে) পানি পেলাম না। এজন্য আমি জন্তুর মত মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেন: @“তোমার জন্য তো এটুকুই যথেষ্ট ছিল যে, তুমি তোমার হাত দ্বারা এরূপ করবে; তারপর তিনি দু’ হাত মাটিতে একবার মারলেন এবং তিনি বাম হাতকে ডান হাতের উপর মাসেহ করলেন। আর দুই হাতের কব্জির উপরভাগ ও চেহারা মাসেহ করলেন।”

78- আমার পূর্বে আল্লাহ যে কোন নবীকে যে কোন উম্মতের মাঝে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে তাঁর (কিছু) সহযোগী ও সঙ্গী হত। তারা তাঁর সুন্নতের উপর আমল করত এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের পরে এমন অপদার্থ লোক সৃষ্টি হল যে, তারা যা বলত, তা করত না এবং তারা তা করত, যার আদেশ তাদেরকে দেওয়া হত না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন। আর এর বাইরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।

84- আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু সিয়াম স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব।’ সিয়াম ঢাল স্বরূপ অতএব তোমাদের কেউ যেন সিয়ামের দিনে অশ্লীল না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি-গালাজ করে অথবা তার সাথে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি সিয়াম রেখেছি।’ সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে, নিঃসন্দেহে সায়িমের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা বেশী উৎকৃষ্ট। সায়িমের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়; [১] যখন সে ইফতার করে [ইফতারের জন্য সে আনন্দিত হয়]। আর [২] যখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, স্বীয় সিয়ামের জন্য সে আনন্দিত হবে।’’ [বুখারী ও মুসলিম, এই শব্দগুলি বুখারীর] বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, ‘সে [সায়িম] পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করে একমাত্র আমারই জন্য। সিয়াম আমার জন্যই। আর আমি নিজে তার পুরস্কার দেব। আর প্রত্যেক নেকী দশগুণ বর্ধিত হয়।’ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আদম সন্তানের প্রত্যেক সৎকর্ম কয়েকগুণ বর্ধিত করা হয়। একটি নেকী দশগুণ থেকে নিয়ে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু সিয়াম ছাড়া। কেননা, তা আমার উদ্দেশ্যে [পালিত] হয়। আর আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি আমার [সন্তুষ্টি অর্জনের] উদ্দেশ্যেই বর্জন করে।’ সায়িমের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে। একটি আনন্দ হল ইফতারের সময়, আর অপরটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎকালে। আর নিশ্চয় তার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট।”

91- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুক্ত গোলাম ছাউবান রদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম: আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বললেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজের ব্যাপারে, তখন তিনি চুপ থাকলেন। আমি আবার তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এবারও চুপ থাকলেন। আমি তৃতীয়বার তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন: আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন: @“তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে; কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তোমার একটি গুনাহও মাফ করে দিবেন।”* মা‘দান বলেন: অতপর আমি আবুদ দারদা রদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকেও এ কথা জিজ্ঞেস করলে, তিনি ছাউবান রদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে যা বলেছিলেন, তিনিও সেটাই বললেন।