যাকাত

যাকাত

8- রাসূল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা সালাত পড়ছে যেমন আমরা সালাত পড়ছি, তারা সিয়াম রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।” সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন ক’রে নিজের যৌন ক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’ তিনি বললেন, “কি রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কাম-ক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে।

12- “আমলসমূহ ছয় প্রকার ও মানুষ চার প্রকার। দুটি আবশ্যককারী কাজ এবং একটি এমন কাজ যা অপরটির সমান। একটি ভালোকাজ তার দশগুণ সমপরিমাণ আবার একটি ভালোকাজ সাতশত গুণ*। আবশ্যককারী কাজ দুটি হচ্ছে: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শিরক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তির আল্লাহর সাথে কোন কিছু শিরক করে মারা যাবে, সে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। একটি অপরটির সমান কাজ হচ্ছে: যে ব্যক্তি কোন ভালোকাজের সংকল্প করে, এমনকি তার অন্তর তা অনুভব করে এবং আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে এ নিয়তের ব্যাপারে অবগত থাকেন, তার জন্য একটি ভালোকাজ লিপিবদ্ধ করা হয়। আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ করে, তার উপরে একটি গুনাহ লেখা হয়। আর যে ব্যক্তি কোন ভালোকাজ করে, তার জন্য এর দশগুণ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু দান করে, তার জন্য সাতশতগুণ ‍বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। আর মানুষ (চার প্রকার): ১) দুনিয়ায় স্বচ্ছল কিন্তু আখিরাতে অস্বচ্ছল, ২) দুনিয়াতে অস্বচ্ছল কিন্তু আখিরাতে স্বচ্ছল, ৩) দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই অস্বচ্ছল এবং ৪) দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই স্বচ্ছল।”

13- একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মসজিদে বসা ছিলাম, এক ব্যক্তি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে সেখানে এসে তার উটকে মসজিদে বসিয়ে বাঁধলেন। তারপর সাহাবীদেরকে বললেন: “তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ কে?” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাদের মধ্যেই হেলান দেওয়া অবস্থাতে ছিলেন, আমরা বললাম: হেলান দেওয়া এই সাদা ব্যক্তিটি। তখন সে বলল: হে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন: “আমি তোমার জবাব দিয়েছি।” তখন সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলল: আমি আপনাকে কিছু বিষয় কঠিনভাবে জিজ্ঞাসা করছি, হয়ত তা আপনাকে কষ্ট দেবে, তবে আপনি আমার ব্যাপারে আপনার অন্তরে কোন কষ্ট নেবেন না। তখন তিনি বললেন: “তুমি জিজ্ঞাসা কর যা জানতে চাও।” তখন সে বলল: আমি আপনার রব এবং আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম করে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে সমগ্র মানব জাতীর কাছে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর সে বলল: আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আমরা রাতে-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করব? তিনি বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর সে বলল: আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আমরা বছরের এই মাসে সিয়াম পালন করব? তিনি বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর সে বলল: আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আপনি আমাদের ধনী ব্যক্তিদের থেকে এই সদাকাহ (যাকাত) গ্রহণ করে তা আমাদের দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে দিবেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর লোকটি বলল: আপনি যা নিয়ে আগমন করেছেন তার উপরে আমি ঈমান আনলাম আর আমি হচ্ছি আমার পিছনে থাকা কওমের প্রতিনিধি, @এবং আমি বনু সা‘দ ইবনু বকরের ভাই দ্বিমাম ইবনু ছা‘লাবাহ।

34- ১৮৬৫- আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একটি লোক বলল, ‘(আজ রাতে) আমি অবশ্যই সাদকাহ করব।’ সুতরাং সে আপন সাদকার বস্তু নিয়ে বের হল এবং (অজান্তে) এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। লোকেরা সকালে উঠে বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক চোরের হাতে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ সাদকাকারী বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই যাবতীয় প্রশংসা! (আজ রাতে) অবশ্যই আবার সাদকা করব।’ সুতরাং সে নিজ সাদকা নিয়ে বের হল এবং (অজান্তে) এক বেশ্যার হাতে তা দিয়ে দিল। সকাল বেলায় লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক বেশ্যাকে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ সে তা শুনে আবার বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই প্রশংসা যে, বেশ্যাকে সাদকা করা হল। আজ রাতে পুনরায় অবশ্যই সাদকাহ করব।’ সুতরাং তার সাদকা নিয়ে বের হয়ে গেল এবং (অজান্তে) এক ধনী ব্যক্তির হাতে সাদকা দিল। সকাল বেলায় লোকেরা আবার বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ এক ধনী ব্যক্তিকে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ লোকটি শুনে বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই সমস্ত প্রসংশা যে, চোর, বেশ্যা তথা ধনী ব্যক্তিকে সাদকা করা হয়েছে।’ সুতরাং তাকে বলা হল যে, ‘(তোমার সাদকা ব্যর্থ যায়নি; বরং) তোমার যে সাদকা চোরের হাতে পড়েছে তার দরুন হয়তো চোর তার চৌর্যবৃত্তি ত্যাগ ক’রে দেবে। বেশ্যা হয়তো তার দরুন তার বেশ্যাবৃত্তি ত্যাগ করবে। আর ধনী; সম্ভবতঃ সে উপদেশ গ্রহণ করবে এবং সে তার আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে।” এই শব্দে হাদিসটি বুখারী বর্ণনা করেছেন, আর মুসলিম বর্ণনা করেছেন তার অর্থ।