লেন-দেন বিষয়ক ফিকহ

লেন-দেন বিষয়ক ফিকহ

3- আমি একবার কতক আশ’আরী (গোত্রের) লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একটি বাহন চাওয়ার জন্য এলাম। তিনি বললেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে বাহন দিতে পারব না। আমার কাছে কিছু নেই যা বাহন হিসাবে তোমাদেরকে দিতে পারি। অতঃপর আল্লাহ্ যতক্ষণ চাইলেন আমরা অবস্থান করলাম। এমন সময় তাঁর কাছে কিছু উট আনা হল। তখন তিনি আমাদেরকে তিনটি উট দেয়ার নির্দেশ দিলেন। আমরা যখন রওনা দিলাম, তখন আমরা বলাবলি করলাম যে, আল্লাহ্ আমাদের বরকত দেবেন না। আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বাহন চাওয়ার জন্য যখন এলাম তখন তিনি আমাদেরকে বাহন দেবেন না বলে শপথ করলেন। তারপরেও আমাদেরকে বাহন দিলেন। আবূ মূসা বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলাম এবং বিষয়টি তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাদেরকে বাহন দেইনি; বরং আল্লাহ্ দিয়েছেন। @আল্লাহর শপথ! -ইনশাআল্লাহ্- আমি যখন কোন ব্যাপারে শপথ করি আর তার উল্টোটির মাঝে কল্যাণ দেখতে পাই তখন কসমের কাফ্ফারা আদায় করি। আর যেটি কল্যাণকর সেটিই করি”।

39- নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখাবারা (জমিনের নির্দিষ্ট অংশের উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে জমি চাষ করা, যেমন ক্ষেতের উত্তরাংশে যা উৎপাদিত হবে তা কৃষকের), মুহাকালা (গম বীজে থাকা অবস্থায় তা খড় থেকে কাটা পরিশোধিত গমের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা) ও মুযাবানা (গাছের ভেজা খেজুরের বিনিময় শুকনো খেজুর বিক্রি করা) এবং ফল খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার আগে তা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। গাছে থাকা অবস্থায় ফল দিনার বা দিরহামের বিনিময়ে ছাড়া যেন বিক্রি করা না হয়; তবে ‘আরায়্যার (শুকনো খেজুরের বিনিময় ভেজা খেজুর অনুমান— প্রবল ধারণা দ্বারা পরিমাণ নির্ধারণ করে বিক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন।

61- বিদায় হজের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার রুগ্ন অবস্থায় আমাকে দেখা করতে এলেন। সে সময় আমার শরীরে চরম ব্যথা ছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার (দৈহিক) জ্বালা-যন্ত্রণা কঠিন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে--যা আপনি স্বচক্ষে দেখছেন। আর আমি একজন ধনী মানুষ; কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী বলতে আমার একমাত্র কন্যা। তাহলে আমি কি আমার মাল-সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দান করে দেব?’ তিনি বললেন, “না।” আমি বললাম, ‘তাহলে অর্ধেক মাল হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “না।” আমি বললাম, ‘তাহলে কি এক তৃতীয়াংশ দান করতে পারি?’ তিনি বললেন, “এক তৃতীয়াংশ (দান করতে পার), তবে এক তৃতীয়াংশও অনেক। কারণ এই যে, তুমি যদি তোমার উত্তরাধিকারীদের ধনবান অবস্থায় ছেড়ে যাও, তাহলে তা এর থেকে ভাল যে, তুমি তাদেরকে কাঙ্গাল করে ছেড়ে যাবে এবং তারা লোকের কাছে হাত পাতবে। (মনে রাখ,) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করবে তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও তুমি বিনিময় পাবে।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি কি আমার সঙ্গীদের ছেড়ে পিছনে (মক্কায়) থেকে যাব?’ তিনি বললেন, “তুমি যদি তোমার সঙ্গীদের মরার পর জীবিত থাক এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোন কাজ কর, তাহলে তার ফলে তোমার মর্যাদা ও সম্মান বর্ধন হবে। আর সম্ভবতঃ তুমি বেঁচে থাকবে। এমনকি তোমার দ্বারা কিছু লোক (মু’মিনরা) উপকৃত হবে। আর কিছু লোক (কাফেররা) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! তুমি আমার সাহাবীদেরকে হিজরতে পরিপূর্ণতা দান কর এবং তাদেরকে (হিজরত থেকে) পিছনে ফিরিয়ে দিও না। কিন্তু মিসকীন সা’দ ইবনে খাওলা।” তাঁর মৃত্যু মক্কায় হওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন।