আল-ইসলাম

আল-ইসলাম

1- মু‘আয ইবনু জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ইয়ামানের (শাসক নিয়োগ করে) পাঠানোর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেনঃ “@তুমি আহলে কিতাবের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে- তারা যেন সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল*। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয় তবে তাদের বলবে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয় তবে তাদের বলবে, আল্লাহ তাদের উপর সাদাকা (যাকাত) ফরজ করেছেন- যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের ফকীরদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে তাদের উত্তম মাল গ্রহণ হতে বিরত থাকবে এবং মযলুমের বদদু‘আকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদদু‘আ) এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না।”

4- নাজদবাসীদের মধ্য হতে এলোমেলো কেশ নিয়ে এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন। আমরা তার ফিসফিস শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম না যে তিনি কী বলছেন, এমনকি তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একেবারে কাছে চলে আসলেন। তিনি তখন ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন: “দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা।” তখন তিনি বললেন: এছাড়া কি আর কোন সালাত আমার উপরে আবশ্যক? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, তবে তুমি নফল সালাত আদায় করতে পারো। আর রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে।” তিনি বললেন: এছাড়া কি আর কোন সিয়াম আমার উপরে আবশ্যক? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “না। তবে চাইলে নফল সিয়াম পালন করতে পারো।” এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাকাতের কথা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন: এছাড়া কি আর কোন অতিরিক্ত সাদাকা আমার উপরে আবশ্যক? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না। তবে তুমি নফল সাদাকা আদায় করতে পারো। অতঃপর লোকটি এ কথা বলতে বলতে চলে গেল: আল্লাহর কসম, এর উপর আমি কোন কিছু বৃদ্ধিও করবো না এবং কমও করবো না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: @“লোকটি যদি সত্য বলে থাকে, তাহলে সফল হয়ে গেল।”

5- “আমাকে লোকেদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে; যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোনো মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর তাঁরা সালাত প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত প্রদান করবে।* যখন তারা এ কাজগুলো সম্পাদন করবে, তখন আমার পক্ষ থেকে তাদের রক্ত (জান) ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করবে; কিন্তু ইসলামের হক ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহর ওপর ন্যস্ত হবে।”

11- “নিশ্চয় আল্লাহ কোন মুমিনের ভালোকাজের ব্যাপারে জুলুম করেন না*; দুনিয়াতেও তিনি তার পুরস্কার দিয়ে থাকেন আবার আখিরাতেও তার প্রতিদান দিবেন। পক্ষান্তরে কাফির ব্যক্তিকে তার ভালোকাজ, যেগুলো সে আল্লাহর জন্য করেনি, সেগুলোর কারণে খেতে দেন এভাবে সে আখিরাতে উপনীত হবে আর তখন তার এমন কোন ভালোকাজ অবশিষ্ট থাকবে না, যার বিনিময়ে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে।”

14- একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মসজিদে বসা ছিলাম, এক ব্যক্তি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে সেখানে এসে তার উটকে মসজিদে বসিয়ে বাঁধলেন। তারপর সাহাবীদেরকে বললেন: “তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ কে?” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাদের মধ্যেই হেলান দেওয়া অবস্থাতে ছিলেন, আমরা বললাম: হেলান দেওয়া এই সাদা ব্যক্তিটি। তখন সে বলল: হে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন: “আমি তোমার জবাব দিয়েছি।” তখন সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলল: আমি আপনাকে কিছু বিষয় কঠিনভাবে জিজ্ঞাসা করছি, হয়ত তা আপনাকে কষ্ট দেবে, তবে আপনি আমার ব্যাপারে আপনার অন্তরে কোন কষ্ট নেবেন না। তখন তিনি বললেন: “তুমি জিজ্ঞাসা কর যা জানতে চাও।” তখন সে বলল: আমি আপনার রব এবং আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম করে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে সমগ্র মানব জাতীর কাছে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর সে বলল: আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আমরা রাতে-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করব? তিনি বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর সে বলল: আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আমরা বছরের এই মাসে সিয়াম পালন করব? তিনি বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর সে বলল: আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আপনি আমাদের ধনী ব্যক্তিদের থেকে এই সদাকাহ (যাকাত) গ্রহণ করে তা আমাদের দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে দিবেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর লোকটি বলল: আপনি যা নিয়ে আগমন করেছেন তার উপরে আমি ঈমান আনলাম আর আমি হচ্ছি আমার পিছনে থাকা কওমের প্রতিনিধি, @এবং আমি বনু সা‘দ ইবনু বকরের ভাই দ্বিমাম ইবনু ছা‘লাবাহ।

17- কিছু মুশরিক লাক বহু হত্যা করে এবং বেশি বেশি ব্যভিচার করে। তারপর তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, @আপনি যা বলেন এবং যেদিকে আহবান করেন, তা অতি উত্তম। আমাদের যদি অবগত করতেন, আমরা যা করেছি, তার কাফ্ফারা কী*? এ প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়: (অর্থ) “এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন মাবূদ কে ডাকে না, আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন, তাকে না-হক হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না”। [ফুরকান:৬৮] আরো অবতীর্ণ হয়ঃ ’’হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।’’ [যুমার:৫৩]