নবী জীবনী

নবী জীবনী

7- ”নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমি দশ রাক‘আত সালাত আমার স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে রেখেছি।* যুহরের পূর্বে দু’রাক‘আত, পরে দু’ রাক‘আত, মাগরিবের পরে দু’রাক‘আত তাঁর ঘরে, ‘ইশার পরে দু’রাক‘আত তাঁর ঘরে এবং দু’রাক‘আত সকালের (ফজরের) সালাতের পূর্বে। আর সময়টি ছিল এমন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট (সচরাচর) কোন লোককে প্রবেশ করতে দেয়া হতো না। তবে উম্মুল মু’মিনীন হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, যখন মুআয্‌যিন আযান দিতেন এবং ফজর (সুবহে-সাদিক) উদিত হতো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করতেন। অপর বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আর পরে দু’রাকা’আত সালাত আদায় করতেন।

10- “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ"। (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবূদ নেই) আরবের লোকেদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে”।* এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বললেন, “হ্যাঁ যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে”।

19- অবশ্যই আগামীকাল আমি এই পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দেব, যার হাতে আল্লাহ তা’আলা বিজয় দান করবেন, যে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসেন আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসেন। রাবী বলেন: মানুষেরা সারারাত চিন্তার মধ্যে কাটালো যে, কাকে সেটি দেওয়া হবে। ভোর হতেই লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে উপস্থিত হলো। তারা প্রত্যেকেই আশা করছিলেন যে, পতাকা তাকেই দেওয়া হবে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব কোথায়? বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল! তার চোখে অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। তিনি বললেন: তার কাছে কাউকে পাঠাও। অতপর আলী রদিয়াল্লাহু আনহুকে আনা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দু’চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তার জন্য দু‘আ করলেন। তাতে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন, যেন তার চোখে কোন ধরণের রোগই ছিল না।অতপর তিনি পতাকাটি তার হাতে প্রদান করলেন। পতাকা হাতে নিয়ে ’আলী রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! শত্রুদের বিরুদ্ধে আমি কি সেই অবধি যুদ্ধ করে যাব যে পর্যন্ত না তারা আমাদের মত হয়ে যায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি ধীরে-সুস্থে চল, যতক্ষণ না তুমি তাদের অঙ্গনে পৌঁছুবে, তারপরে সর্বপ্রথম তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করবে এবং তাদের উপরে আল্লাহ যা আবশ্যক করেছেন, তা সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করবে। @আল্লাহর কসম! তোমার দ্বারা যদি আল্লাহ একটি লোককেও হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লাল রঙের উট অপেক্ষাও উত্তম হবে।”

88- আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ তালহা (আমার মা) উম্মে সুলাইমকে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্ঠ স্বরটা খুব ক্ষীণ শুনলাম। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। তোমার নিকট কিছু আছে কি?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি কিছু যবের রুটি তার ওড়নার এক অংশ দিয়ে বেঁধে গোপনে আমার কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন। আর অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। তাঁর সাথে কিছু লোক ছিল। আমি তাদের নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “তোমাকে আবূ তালহা পাঠিয়েছে?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “খাবারের জন্যে ?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (সাথীদেরকে) বললেন, “ওঠ।” সুতরাং তাঁরা রওনা হল। আমিও তাঁদের আগে আগে চলতে লাগলাম এবং আবূ তালহার নিকট এসে খবর জানালাম। তখন আবূ তালহা বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরসহ আমাদের নিকট এসেছেন, অথচ আমাদের নিকট সবাইকে খাওয়ানোর মত খাদ্য সামগ্রী নেই (এখন কী করা যায়)?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন।’ অতঃপর আবূ তালহা (আগে) গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে আগমন করলেন এবং উভয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! তোমার নিকট যা আছে নিয়ে এসো।’ সুতরাং তিনি ঐ রুটিগুলো এনে হাজির করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলিকে টুকরা টুকরা করতে আদেশ করলেন। অতঃপর তার উপর উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঢেলে তরকারি বানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় যা বলার বললেন। তারপর বললেন, “দশজনকে আসতে বল।” তখন দশজনকে আসতে বলা হল। তারা এসে পরিতৃপ্তি সহকারে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, “আরো দশজনকে আসতে বল।” তখন আরও দশজন এসে খেয়ে তৃপ্ত হল। আগত লোকদের সংখ্যা ছিল ৭০ কিংবা ৮০ জন। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) অন্য বর্ণনায় আছে, দশজন ক’রে প্রবেশ করতে ও বের হতে থাকল। এমনকি শেষ পর্যন্ত এমন কোন ব্যক্তি বাকী রইল না, যে প্রবেশ করে পরিতৃপ্তি সহকারে খায়নি। অতঃপর ঐ খাবার জমা ক’রে দেখা গেল যে, খাওয়ার আগের মতই বাকী রয়েছে। অন্য বর্ণনায় আছে, তারা দশ দশজন ক’রে খাবার খেল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত ৮০ জন লোককে তিনি খাওয়ালেন। সবশেষে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং গৃহবাসীরা খেলেন এবং তাঁরাও কিছু (খাবার) ছেড়ে দিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, অতঃপর তাঁরা এত খাবার অবশিষ্ট রাখলেন যে, তা প্রতিবেশীদের নিকট পৌঁছে দিলেন। অন্য বর্ণনায় আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলাম, তারপর দেখলাম যে, তিনি তাঁর সাথীদের সঙ্গে বসে আছেন। তখন তিনি তাঁর পেটে পট্টি বেঁধে ছিলেন। আমি তাঁর কিছু সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তাঁর পেটে পট্টি বেঁধে আছেন।’ তাঁরা বললেন, ‘ক্ষুধার কারণে।’ অতঃপর আমি (আমার মা) উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহানের স্বামী আবূ তালহার নিকট গেলাম এবং বললাম, ‘আব্বা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পেটে পট্টি বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। আমি তাঁর কিছু সাথীকে (এর কারণ) জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেন, ক্ষুধা।’ অতঃপর আবূ তালহা আমার মায়ের নিকট গিয়ে বললেন, ‘তোমার কাছে কিছু আছে কি?’ মা বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে কয়েক টুকরো রুটি এবং কিছু খেজুর আছে। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট একাই আসেন, তাহলে তাঁকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াব; আর যদি তাঁর সাথে অন্য লোকও এসে যায়, তাহলে তাঁদের জন্য এ খাবার কম হয়ে যাবে।’ অতঃপর তিনি পূর্ণ হাদীস উল্লেখ করেন।