ফাযায়েল

ফাযায়েল

6- “নিশ্চই হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট*, আর এ উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু অস্পষ্ট বিষয়, অধিকাংশ লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এ সব অস্পষ্ট বিষয় থেকে দূরে থাকে, সে তার দীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে। আর যে লোক অস্পষ্ট বিষয়ে পতিত হবে, সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যেমন কোন রাখাল সংরক্ষিত (সরকারী) চারণভূমির আশ-পাশে পশু চরায়, আশংকা রয়েছে যে, পশু তার অভ্যন্তরে যেয়ে ঘাস খাবে। সাবধান! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে। সাবধান! আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হল তার হারামকৃত বিষয়সমূহ। জেনে রাখো, দেহের মধ্যে এক টুকরা মাংস আছে। যখন তা সুস্থ থাকে, তখন সমস্ত শরীরই সুস্থ থাকে। আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন সমস্ত শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। মনে রেখো, তা হল ’ক্বলব’ (হৃদয়)।”

8- নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান রব থেকে বর্ণনা করে বলেছেন: “@জনৈক বান্দা পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মার্জনা করে দাও*। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন: আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে, যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে ধরেন। এ কথা বলার পর সে আবার পাপ করে এবং বলে, হে আমার রব ! আমার পাপ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার এক বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে তাকে ধরবেন। তারপর সে পুনরায় পাপ করে বলে, হে আমার রব! আমার পাপ মাফ করে দাও। এ কথা শুনে আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় বলেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে, যিনি বান্দার পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল করো। আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি।”

12- “দু’আই হল ইবাদত*।” এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেন: {وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ} [غافر: 60]». “তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকেই ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকারে আমার ইবাদত বিমুখ তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]

18- একবার মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি তাঁকে ডাকলেন, হে মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং আপনার আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত। তিনি ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং প্রস্তুত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং প্রস্তুত। এরূপ তিনবার করলেন। এরপর বললেন, “@যে কোনো বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।”* মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি কি মানুষকে এ খবর দিবো না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে? তিনি বললেন, তাহলে তারা এর ওপর ভরসা করে বসে থাকবে। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (জীবনভর এ হাদীসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদীসটি বর্ণনা করে গেছেন, যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়।

19- আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ‘উফাইর নামক গাধার উপরে ছিলাম। তখন তিনি বললেন: “হে মু‘আয! তুমি কী বান্দার উপরে আল্লাহর হক (অধিকার) এবং আল্লাহর উপরে বান্দাহর হক সম্পর্কে জান?” আমি বললাম: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভালো জানেন। তিনি বললেন: “@বান্দার উপরে আল্লাহর হক হচ্ছে, তারা তাঁরই ইবাদাত করবে আর কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শিরক করবে না। আর পক্ষান্তরে আল্লাহর উপরে বান্দার হক হচ্ছে, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে শিরক করবে না, তিনি তাকে আযাব দিবেন না।*” আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কী মানুষদেরকে এটার সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন: “তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দিও না, তাতে তারা (শুধু এটার উপরে) নির্ভর করে বসে থাকবে।”

20- এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! দুটি আবশ্যককারী বিষয় কী কী? তিনি বললেন: “@যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”

21- “আল্লাহ আমার উম্মাতের মধ্য হতে একজনকে কিয়ামাতের দিন সমগ্র সৃষ্টিজগতের সামনে উপস্থিত করবেন।* তারপরে তার সামনে নিরানব্বইটি খাতা উপস্থাপন করবেন, প্রতিটি খাতা দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। তারপরে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন: তুমি এ থেকে কোন একটিও কী অস্বীকার করবে? আমার সংরক্ষক ফিরিশতাগণ কী তোমার সাথে কোন জুলুম করেছে? ঐ ব্যক্তি বলবে: না, হে আমার রব! তখন আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করবেন: তোমার কাছে কোন ওযর আছে? সে বলবে: না, হে আমার রব! তখন আল্লাহ বলবেন: আমাদের নিকটে তোমার একটি বিশেষ ভালো কাজ রয়েছে, সুতরাং তোমার উপরে আজকে একটুও জুলুম করা হবে না। তারপরে তিনি একটি কার্ড বের করবেন, যাতে থাকবে: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।” অতপর বলা হবে: তোমার ওযন তথা পরিমাপকের কাছে উপস্থিত হও! তখন সে ব্যক্তি বলবে: এত বড় বড় খাতার সামনে এ কার্ডটি কী করতে পারবে? তখন তাকে বলা হবে: আজকে তোমার উপরে জুলুম করা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তারপরে ঐ কার্ডটি এক পাল্লাতে রাখা হবে এবং ঐ সমস্ত খাতা আরেকটি পাল্লায় রাখা হবে। তখন সমস্ত খাতা হালকা হয়ে যাবে আর উক্ত কার্ডটি ভারী হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহর নামের থেকে কোন কিছু ভারী হতে পারে না।”

22- একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এ যেন বিদায়ী ভাষণ। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন। তিনি বললেন: “@আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (আমীরের) কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো দাস আমীর হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধর এবং তা মাড়ির দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধর।* আর তোমরা দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাক। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”

23- “মুওয়াযযিন যখন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ বলে, তোমাদের কোন ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে তখন তার জবাবে বলেঃ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার*’। যখন মুওয়াযযিন বলে ‘আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ এর জবাবে সেও বলেঃ ‘আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্লাহ’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্লাহ’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘হাইয়্যা আলাস সলাহ’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘লা-হাওলা ওয়ালা- কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘হাইয়্যা ’আলাল ফালাহ’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহ’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ এর জবাবে সে বলেঃ ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’। আযানের এ জবাব দেয়ার কারণে সে জান্নাতে যাবে”।

24- “মহান আল্লাহ বলেছেনঃ আমার এবং আমার বান্দার মাঝে সালাতকে অর্ধেক করে ভাগ করেছি। আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়*। বান্দা যখন বলে, الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের রবের জন্য), আল্লাহ তা’আলা তখন বলেনঃআমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে,الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃবান্দা আমার প্রশংসা ও গুণগান করেছে।সে যখন বলে, مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (তিনি বিচার দিনের মালিক), তখন আল্লাহ বলেনঃআমার বান্দা আমাকে মহিমান্বিত করেছে। আল্লাহ আরো বলেনঃ বান্দা তার সমস্ত কাজ আমার উপর সমর্পণ করেছে। সে যখন বলে, إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি) তখন আল্লাহ বলেন, এটি আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। (এখন) আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়। যখন সে বলে,اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ (আমাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করুন। যেসব লোকদের উপর আপনি নি’আমাত দান করেছেন তাঁদের পথে , তাদের পথে নয় যাদের প্রতি আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে; তখন আল্লাহ বলেনঃ এসবই আমার বান্দার জন্যে এবং আমার বান্দার জন্যে রয়েছে সে যা চায়।

25- রাসূলুল্লাহ একবার তাঁর সাহাবীদের একটি হালাকার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “কিসে তোমাদেরকে উপবেশন করিয়েছে?” তারা জবাব দিয়েছিলেন: আমরা আল্লাহর যিকির করব ও তিনি আমাদেরকে ইসলামের পথ দেখিয়েছেন এবং আমাদেরকে এর মাধ্যমে নি‘আমাত প্রদান করেছেন এ কারণে তাঁর প্রশংসা করার জন্য বসেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “এটা ব্যতীত অন্য কোন কিছুই তোমাদেরকে এখানে উপবেশন করায়নি?” তারা বলেছিলেন: আল্লাহর কসম! অন্য কোন বিষয় আমাদেরকে উপবেশন করায়নি। তিনি বলেছিলেন: @“আমি তোমাদেরকে কোন অপবাদ দেওয়ার জন্য কসম করাইনি। বরং আমার নিকটে জিবরীল এসে জানিয়ে গেলেন যে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের কাছে তোমাদের ব্যাপারে গর্ব করছেন।”

34- سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: @أَيُّ العَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ؟ قَالَ: «الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا»، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «ثُمَّ بِرُّ الوَالِدَيْنِ» قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ»* قَالَ: حَدَّثَنِي بِهِنَّ، وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِي. ‘আমি নবী@ কে প্রশ্ন করলাম,আল্লাহর নিকট কোন আমলটি সর্বাধিক প্রিয়?’ তিনি বললেন, “যথা সময়ে সালাত আদায় করা।” আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ’তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, “পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।” আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ’তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।* তিনি বলেন, এতটুকু তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন। যদি আমি আরো জিজ্ঞেস করতাম তাহলে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আরো বলতেন।

36- অবশ্যই আগামীকাল আমি এই পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দেব, যার হাতে আল্লাহ তা’আলা বিজয় দান করবেন, যে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসেন আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসেন। রাবী বলেন: মানুষেরা সারারাত চিন্তার মধ্যে কাটালো যে, কাকে সেটি দেওয়া হবে। ভোর হতেই লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে উপস্থিত হলো। তারা প্রত্যেকেই আশা করছিলেন যে, পতাকা তাকেই দেওয়া হবে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব কোথায়? বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল! তার চোখে অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। তিনি বললেন: তার কাছে কাউকে পাঠাও। অতপর আলী রদিয়াল্লাহু আনহুকে আনা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দু’চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তার জন্য দু‘আ করলেন। তাতে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন, যেন তার চোখে কোন ধরণের রোগই ছিল না।অতপর তিনি পতাকাটি তার হাতে প্রদান করলেন। পতাকা হাতে নিয়ে ’আলী রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! শত্রুদের বিরুদ্ধে আমি কি সেই অবধি যুদ্ধ করে যাব যে পর্যন্ত না তারা আমাদের মত হয়ে যায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি ধীরে-সুস্থে চল, যতক্ষণ না তুমি তাদের অঙ্গনে পৌঁছুবে, তারপরে সর্বপ্রথম তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করবে এবং তাদের উপরে আল্লাহ যা আবশ্যক করেছেন, তা সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করবে। @আল্লাহর কসম! তোমার দ্বারা যদি আল্লাহ একটি লোককেও হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লাল রঙের উট অপেক্ষাও উত্তম হবে।”

39- “আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলব না, যার দ্বারা আল্লাহ গোনাহসমূহকে মোচন করবেন এবং (জান্নাতে) তার দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?”* তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) কষ্টকর অবস্থায় পরিপূর্ণরূপে অযূ করা, অধিক মাত্রায় মসজিদে গমন করা এবং এক ওয়াক্তে সালাত আদায় করে পরবর্তী ওয়াক্তের সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ। এটিই হল প্রতিরক্ষা।”

49- রাসূল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা সালাত পড়ছে যেমন আমরা সালাত পড়ছি, তারা সিয়াম রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।” সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন ক’রে নিজের যৌন ক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’ তিনি বললেন, “কি রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কাম-ক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে।

62- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, কিছু লোক একটা জানাযা নিয়ে পার হয়ে গেল। লোকেরা তার প্রশংসা করল। নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “অবধারিত হয়ে গেল।” অতঃপর দ্বিতীয় আরেকটি জানাযা নিয়ে পার হলে লোকেরা তার দুর্নাম করল। নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “অবধারিত হয়ে গেল।” উমার বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘কী অবধারিত হয়ে গেল?’ তিনি বললেন, “তোমরা যে এর প্রশংসা করলে তার জন্য জান্নাত, আর ওর দুর্নাম করলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেল। তোমরা হলে পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী।” মুত্তাফাকুন আলাইহি

66- “আমলসমূহ ছয় প্রকার ও মানুষ চার প্রকার। দুটি আবশ্যককারী কাজ এবং একটি এমন কাজ যা অপরটির সমান। একটি ভালোকাজ তার দশগুণ সমপরিমাণ আবার একটি ভালোকাজ সাতশত গুণ*। আবশ্যককারী কাজ দুটি হচ্ছে: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শিরক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তির আল্লাহর সাথে কোন কিছু শিরক করে মারা যাবে, সে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। একটি অপরটির সমান কাজ হচ্ছে: যে ব্যক্তি কোন ভালোকাজের সংকল্প করে, এমনকি তার অন্তর তা অনুভব করে এবং আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে এ নিয়তের ব্যাপারে অবগত থাকেন, তার জন্য একটি ভালোকাজ লিপিবদ্ধ করা হয়। আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ করে, তার উপরে একটি গুনাহ লেখা হয়। আর যে ব্যক্তি কোন ভালোকাজ করে, তার জন্য এর দশগুণ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু দান করে, তার জন্য সাতশতগুণ ‍বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। আর মানুষ (চার প্রকার): ১) দুনিয়ায় স্বচ্ছল কিন্তু আখিরাতে অস্বচ্ছল, ২) দুনিয়াতে অস্বচ্ছল কিন্তু আখিরাতে স্বচ্ছল, ৩) দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই অস্বচ্ছল এবং ৪) দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই স্বচ্ছল।”

70- “আল্লাহ তা‘আলা সিরাতে মুস্তাকীমের একটি উদাহরণ পেশ করেছেন*। যার দু’দিকে দু’টি দেয়াল রয়েছে। যাতে অনেকগুলো খোলা দরজা রয়েছে এবং তাতে ঝুলানো পর্দা রয়েছে। আর দরজায় একজন আহবায়ক আহবান করছে: হে লোকেরা! সোজা পথে এসো বাঁকা পথে যেও না। আর একজন আহবানকারী উপরে রয়েছেন। যখনই কোন বান্দা সে দরজাগুলোর কোন একটি দরজা খুলতে চায়, তখনই তিনি তাকে বলেন, সর্বনাশ! এ দরজা খুলো না। যদি তুমি এটা খুলে ফেলো, তাহলে ভিতরে ঢুকে যাবে। সরল-সুদৃঢ় পথটি হলো ইসলাম। দেয়াল দুটি হচ্ছে: আল্লাহর সীমা রেখা, খোলা দরজার অর্থ হচ্ছে ঐ সব জিনিস যা আল্লাহ তা’আলা হারাম করেছেন। পথের মাথার আহবানকারী হচ্ছে: আল্লাহর কিতাব। আর উপরের আহবানকারী হচ্ছে: আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত নাসীহাতকারী, যা প্রত্যেক মু’মিনের অন্তরে রয়েছে।”

74- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহবীদের মধ্য হতে আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন, এমন একজন আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, @তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দশটি করে আয়াত পাঠ করতেন, তারপরে তারা পরবর্তী দশটি আয়াত আর গ্রহণ করতেন না, যতক্ষণ না এ আয়াতগুলোর মধ্যে থাকা ইলম ও আমল সম্পর্কে তারা জানতে পারতেন*। তারা বলতেন: এভাবেই আমরা ইলম ও আমল (একত্রে) শিক্ষা করতাম।

77- “তোমরা যখন মুওয়াযযিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বল। অতঃপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ কর*। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্যে আল্লাহর কাছে ওসীলাহ প্রার্থনা কর। কেননা, ওসীলাহ জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আমি আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্যে ওসীলাহ প্রার্থনা করবে তার জন্যে (আমার) শাফাআত অর্জন হয়ে যাবে”।

78- তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন- হে আল্লাহর রসূল ! শয়তান আমার মাঝে , আমার সালাতের মাঝে ও কিরাআতের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং গোলমাল বাধিয়ে দেয় । তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “@এটা এক (প্রকারের) শয়তান— যার নাম ’খিনযিব’। যে সময় তুমি তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে তখন (আউয়ুবিল্লাহ পড়ে) তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে তিনবার তোমার বাম পাশে থুথু ফেলবে*”। তিনি বলেন, তারপরে আমি তা করলাম আর আল্লাহ আমার হতে তা দূর করে দিলেন।