প্রতাপ ও সম্মানের অধিকারী আল্লাহর ওপর ঈমান

প্রতাপ ও সম্মানের অধিকারী আল্লাহর ওপর ঈমান

1- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হলে তিনি তাঁর একটা চাদর নিজ মুখমন্ডলের ওপর নিক্ষেপ করতে থাকেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয়, তখন মুখ হতে চাদর সরিয়ে দেন। এই অবস্থায় তিনি বললেনঃ “@ইয়াহুদী ও নাসারাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে*”। (এ বলে) তারা যে কার্যকলাপ করত তা হতে সতর্ক করেছিলেন।

3- আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পাঁচদিন আগে তাঁকে বলতে শুনেছি, “@তোমাদের কেউ আমার খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) হওয়া থেকে আমি আল্লাহর কাছে নিষ্কৃতি চাইছি; কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমাকে খলীলরূপে গ্রহণ করেছেন, যেমনিভাবে খলীলরূপে গ্রহণ করেছিলেন ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামকে*। আমি যদি আমার উম্মাতের মধ্যে কাউকে খলীলরূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবূ বকরকেই খলীলরূপে গ্রহণ করতাম। সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী ও নেককারদের কবরগুলোকে মাসজিদ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মাসজিদ বানিও না। আমি তোমাদের তা থেকে নিষেধ করছি।”

7- “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন মাবূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। ঈসা আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর সেই কালেমা যা তিনি মারইয়ামের মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন ও তাঁর সৃষ্ট রূহ। আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য।@ তবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; তার আমল যাই হোক না কেন।”

8- নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথা বললেন, আর আমি(তার সাথে)আরো একটি বললাম। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: @“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন শরীক(ওলী ইত্যাদি) কে ডাকা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে যাবে।"* আর আমি বললামঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কোন শরীক(ওলী ইত্যাদি) কে না ডাকা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে যাবে।”(বুখারীঃ4497 ও মুসলিমঃ92)

10- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান রব হতে (হাদীসে কুদসী ) বর্ণনা করে বলেন যে: “@আল্লাহ ভাল-মন্দ লিখে দিয়েছেন। এরপর সেগুলোকে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করল; কিন্তু তা বাস্তবে করল না, আল্লাহ তাঁর কাছে এর জন্য পূর্ণ একটি সাওয়াব লিখবেন। আর সে ভাল কাজের ইচ্ছা করল এবং তা বাস্তবেও সম্পাদন করল, আল্লাহ তাঁর কাছে ঐ ব্যক্তির জন্য দশ গুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত, এমন কি এর চেয়ে বহুগুণ সাওযাব লিখে দেন। আর যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করল; কিন্তু তা বাস্তবায়ন করল না, আল্লাহ তাঁর কাছে তার জন্য পূর্ণ সাওয়াব লিখবেন। আর যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে, তবে তার জন্য আল্লাহ মাত্র একটা গুনাহ লিখবেন।”

12- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা‘আলা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “@হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার উপর জুলুম করা কে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর জুলুম-অত্যাচার করো না*। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে দিশেহারা, তবে আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে হিদায়াত প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত, তবে আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে আহার চাও, আমি তোমাদের আহার করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন; কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে পরিধেয় চাও, আমি তোমাদের পরিধান করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা রাতদিন ভুল করে থাকো। আর আমিই সব ভুল ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব।হে আমার বান্দারা তোমরা কখনো আমার অনিষ্ট করতে পারবে না, যাতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হই এবং তোমরা কখনো আমার উপকার করতে পারবে না, যাতে আমি উপকৃত হই। হে আমার বান্দারা! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের মানুষ ও জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচাইতে বেশি ভয় পায়, তোমরা সবাই যদি তার অন্তরের মতো হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব একটুও বৃদ্ধি পাবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের সকল মানুষ ও সকল জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর সবচাইতে পাপিষ্ঠ তোমরা সবাই যদি তার অন্তরের মতো হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে না। হে আমার বান্দা! তোমাদের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন যদি কোন বিশাল মাঠে দাঁড়িয়ে সবাই আমার কাছে আবদার করে আর আমি প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করি তাহলে আমার কাছে যা আছে তাতে এর চাইতে বেশী কিছু হ্রাস পাবে না, যেমন কেউ সমুদ্রে একটি সূচ ডুবিয়ে দিলে যতটুকু তাথেকে হ্রাস পায়। হে আমার বান্দারা। আমি তোমাদের ’আমলই তোমাদের জন্য সংরক্ষিত রাখি। এরপর পুরোপুরিভাবে তার বিনিময় প্রদান করে থাকি। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কল্যাণ অর্জন করে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে তা ব্যতীত অন্য কিছু পায়, তবে সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে।”

14- “আল্লাহ তা’আলা যালিমদের ঢিল দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে ধরেন, তখন আর ছাড়েন না।*” (বর্ণনাকারী বলেন) এরপর তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ আয়াত পাঠ করেন: “আর এরকমই বটে আপনার রবের পাকড়াও, যখন তিনি কোন জনপদবাসীকে পাকড়াও করেন তাদের জুলুমের কারণে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড় যন্ত্রণাদায়ক, অত্যন্ত কঠিন।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১০২]

17- তিনি কোনো এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। আবূ বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন দূত পাঠালেন। লোকজন তখন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। (দূত এ মর্মে ঘোষণা দিলেন যে,) “@উটের গলায় সুতার বা যে কোন মালা যেন অবশিষ্ট না থাকে, এ গুলো কেটে ফেলো।”

21- কতিপয় লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গনক-জ্যোতিষীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন: “তারা কিছুই নয়।” তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! তারা কোন কোন সময় এমন কথা বলে, যা সত্য ও সঠিক হয়ে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “@ঐ কথাটি সত্য যা জিন শয়তান (ঊর্ধ্বজগৎ হতে) ত্বরিত শুনে নেয়। অতঃপর মোরগের করকরানোর মতো শব্দ করে তার বন্ধুর কানে পৌঁছিয়ে দেয়। এরপর সে একশর অধিক মিথ্যা কথা তার সাথে মিলিয়ে দেয়।”

22- একবার মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি তাঁকে ডাকলেন, হে মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং আপনার আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত। তিনি ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং প্রস্তুত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং প্রস্তুত। এরূপ তিনবার করলেন। এরপর বললেন, “@যে কোনো বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।”* মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি কি মানুষকে এ খবর দিবো না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে? তিনি বললেন, তাহলে তারা এর ওপর ভরসা করে বসে থাকবে। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (জীবনভর এ হাদীসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদীসটি বর্ণনা করে গেছেন, যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়।

25- উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর হাবশায় দেখা ‘মারিয়া’ নামক একটা গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। তিনি সেখানে যে সব ছবি দেখেছিলেন, সেগুলোর বর্ণনা দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “@এরা এমন সম্প্রদায় যে, এদের মধ্যে কোন সৎ বান্দা অথবা বলেছেন কোন সৎ লোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ নির্মাণ করত।* আর তাতে ঐ সব ব্যাক্তির ছবি তৈরী করে স্থাপন করতো। এরা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট সৃষ্টি।”

27- আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ‘উফাইর নামক গাধার উপরে ছিলাম। তখন তিনি বললেন: “হে মু‘আয! তুমি কী বান্দার উপরে আল্লাহর হক (অধিকার) এবং আল্লাহর উপরে বান্দাহর হক সম্পর্কে জান?” আমি বললাম: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভালো জানেন। তিনি বললেন: “@বান্দার উপরে আল্লাহর হক হচ্ছে, তারা তাঁরই ইবাদাত করবে আর কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শিরক করবে না। আর পক্ষান্তরে আল্লাহর উপরে বান্দার হক হচ্ছে, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে শিরক করবে না, তিনি তাকে আযাব দিবেন না।*” আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কী মানুষদেরকে এটার সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন: “তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দিও না, তাতে তারা (শুধু এটার উপরে) নির্ভর করে বসে থাকবে।”

28- এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! দুটি আবশ্যককারী বিষয় কী কী? তিনি বললেন: “@যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”

40- একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের নিকট নয়জন অথবা আটজন অথবা সাতজন লোক ছিলাম। তিনি বললেন, “তোমরা কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের কাছে বাই‘আত করবে না?” (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন) অথচ আমরা সদ্য বাই‘আতকারী ছিলাম। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রfসূল! আমরা তো আপনার কাছে বাই‘আত করেছি।’ পুনরায় তিনি বললেন, “তোমরা কি আল্লাহর রাসূলের কাছে বাই‘আত করবে না?” সুতরাং আমরা নিজেদের হাতগুলো বাড়িয়ে দিলাম ও বললাম, ‘হে আল্লাহর রfসূল! আমরা আপনার কাছে বাই‘আত করেছি।@ সুতরাং এখন কোন কথার ওপর আপনার কাছে বাই‘আত করব?’ তিনি বললেন, “এ কথার ওপর যে, তোমরা এক আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে এবং আল্লাহর আনুগত্য করবে।” আর একটি কথা তিনি চুপিসারে বললেন, “তোমরা লোকদের নিকট কিছু চাইবে না।”* অতঃপর আমি (বাই‘আত গ্রহণকারীদের) মধ্যে কিছু লোককে দেখেছি যে, তাঁদের কারো চাবুক যদি জমিনে পড়ে যেত, তাহলে তিনি কাউকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না।

47- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের উদ্দেশ্যে যখন যাত্রা শুরু করলেন, তখন তিনি মুশরিকদের একটি গাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই গাছটিকে যাতু আনওয়াত’ বলা হতো। তারা এর মধ্যে তাদের অস্ত্রসমূহ লটকিয়ে রাখত। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তাদের যাতু আনওয়াতের মতো আমাদের জন্য একটা যাতু আনওয়াতের ব্যবস্থা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “সুবহানাল্লাহ! এটা তো মূসা (আঃ)-এর উন্মাতের কথার মতো হলো। তারা বলেছিল, কাফিরদের যেমন অনেক উপাস্য রয়েছে তদ্রুপ আমাদের জন্যও একটি উপাস্য বানিয়ে দিন। [সূরা আল-আরাফ: ১৩৮] @সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীগণের নীতি অবলম্বন করবে।”

49- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন, তখন আমি আমার একটি তাক পর্দা দিয়ে আবৃত করে রেখেছিলাম, যাতে জীবের ছবি ছিল। তিনি তা দেখতে পেয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন: হে আয়িশা!@ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার কাছে ঐ সকল লোক কঠিন আযাব ভোগ করবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য প্রদর্শনে লিপ্ত হয়।”* আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: আমরা তখন সেটি কেটে ফেললাম এবং তা দিয়ে একটা বা দুটো বালিশ বনালাম।

50- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে বড় বা ছোট সেনা দলের অধিনায়ক নিয়োগ করে পাঠানোর সময় বিশেষভাবে তার জন্য আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বনের এবং তার সহ-যোদ্ধাদের সাথে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ দিতেন। তিনি বলতেন, “তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। তোমরা জিহাদ করো, বিশ্বাসঘাতকতা করো না, চুরি করো না, কারো অঙ্গহানি বা অঙ্গ বিকৃত করো না এবং শিশুদের হত্যা করো না। যখন তুমি শত্রু পক্ষের মুশরিকদের মুখোমুখী হবে, তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ের প্রতি আহবান জানাবে। তারা সেগুলোর যে কোন একটির প্রতি সাড়া দিলে তুমি তাদের থেকে তা কবুল করো এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। ১. অতঃপর তুমি তাদেরাক ইসলামের দাওয়াত দাও। তারা যদি তা কবুল করে তবে তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নাও এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। অতঃপর তাদেরকে স্বদেশ ছেড়ে মুহাজিরদের দেশে চলে আসার আহবান জানাও এবং তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তারা যদি এ কাজ করে তবে যেসব সুযোগ-সুবিধা মুহাজিরগন পাবে তারাও তা পাবে এবং মুহাজিরদের উপর যেসব দায়দায়িত্ব বর্তাবে তা তাদের উপরও বর্তাবে। তারা যদি (স্বদেশ ত্যাগ করতে) অসম্মত হয় তবে তাদের জানিয়ে দাও যে, তারা বেদুইন মুসলমানদের সমান মর্যাদা পাবে, তাদের উপর আল্লাহর সেই সব হুকুম জারি হবে যা মুমিন মুসলমানদের উপর জারী হয় এবং তারা গনীমত ও ফাই-এর কিছুই পাবে না, তবে যদি তারা মুসলমানদের সাথে মিলে জিহাদ করে। ২. তারা যদি ইসলামে দাখিল হতে অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিযয়া দিতে বলো। তারা যদি তা দেয় তবে তাদের নিকট থেকে তা গ্রহণ করো এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। ৩. তারা যদি জিযয়া দিতেও অস্বীকার করে, তবে তুমি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। আর তুমি কোন দুর্গ অবরোধ করলে পর তারা তোমার নিকট আল্লাহর যিম্মাদারি এবং তোমার নবীর যিম্মাদারি লাভের আশা করলে তুমি তাদের জন্য আল্লাহর যিম্মাদারি এবং তোমার নবীর যিম্মাদারি দান করবে না, তবে তোমার নিজের জিম্মাদারী ও তোমার সাথীদের জিম্মাদারী দান করো। কারণ, তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের সাথীদের যিম্মাদারি ভঙ্গ করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মাদারি ভঙ্গ করার চেয়ে তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ। আর তুমি কোন দূর্গ অবরোধ করলে পর তারা তোমার নিকট আল্লাহর হুকুম মানতে চাইলে তুমি তাদেরকে আল্লাহর হুকুমের ওপর রাখবে না, বরং তোমার হুকুম মানতে বাধ্য করো, কারণ তুমি জান না তাদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহর হুকুম সঠিকভাবে জানতে পারবে কি পারবে না।

52- নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: @ বনী আদম আমাকে মিথ্যারোপ করেছে; অথচ এরূপ করা তার পক্ষে বৈধ নয়। আর সে আমাকে গালমন্দ করেছে; অথচ এরূপ করাও তার পক্ষে বৈধ নয়।* আমাকে তার মিথ্যারোপ করার একটি রূপ হচ্ছে, যেমন সে বলে: আমাকে পুনরায় উত্থিত করা হবে না, যেমন আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ দ্বিতীয়বার উত্থিত করা থেকে প্রথমবার সৃষ্টি করা বেশি কঠিন। আর আমাকে তার গালমন্দ হচ্ছে, যেমন তার কথা: আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন; অথচ আমি এক ও অমুখাপেক্ষী, আমি সন্তান জন্ম দিই না এবং আমাকেও জন্ম দেওয়া হয় নি, আর আমার সমকক্ষ কেউ নেই।”

56- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:@ যে আমার কোনো অলীর সাথে শত্রুতা করবে, আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছি। আর আমি বান্দার উপর যা ফরয করেছি তার চেয়ে প্রিয় কোনো জিনিস নেই যার দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করবে।* আর বান্দা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, এক সময় আমি তাকে মহব্বত করি। আর আমি যখন তাকে মহব্বত করি, আমি তার কানে পরিণত হই, যার দ্বারা সে শ্রবণ করে এবং তার চোখে পরিণত হই, যার দ্বারা সে দেখে এবং তার হাতে পরিণত হই যার দ্বারা সে স্পর্শ করে এবং তার পায়ে পরিণত হই, যার দ্বারা সে হাঁটে, আর যদি সে আমার নিকট প্রশ্ন করে, আমি অবশ্যই তাকে দিব, আর যদি আমার নিকট পানাহ চায়, আমি অবশ্যই তাকে পানাহ দিব, আমি যা করতে চাই সেটা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যেরূপ দ্বিধা করি মুমিনের নফসকে গ্রহণ করতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তাকে কষ্ট দিতে অপছন্দ করি।”

59- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট (বাইআত করার উদ্দেশ্যে) (১০ জনের) একটি দল উপস্থিত হলেন। তিনি নয়জনের নিকট থেকে বাইয়াত নিলেন। আর মাত্র একজন লোকের নিকট হতে বাইআত নিলেন না। সকলে বললেন: ’হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নয় জনের বাইআত গ্রহণ করলেন; কিন্তু এর করলেন না কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন: “ওর দেহে কবচ-তাবীয রয়েছে তাই।” অতঃপর সে নিজ হাতে তা ছিঁড়ে ফেলল। সুতরাং তার নিকট থেকেও বাইআত নিলেন এবং বললেন:@ “যে ব্যক্তি কবচ-তাবীয লটকালো, সে শিরক করল।”

80- একজন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো কারো অন্তরে এমন কিছুর উদ্রেক হয় -তিনি পরোক্ষভাবে জিজ্ঞাসা করলেন- যেগুলো মুখে উচ্চারণ করার থেকে তার কাছে (জ্বলন্ত) কয়লায় রূপান্তরিত হওয়া বেশি পছন্দনীয় মনে হয়। তখন তিনি বললেন: “আল্লাহই সবচেয়ে বড়, আল্লাহই সবচেয়ে বড়। @সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি শয়তানের ষড়যন্ত্রকে ওয়াসওয়াসার মাধ্যমে দুর্বল করে দিয়েছেন।”

82- “নিশ্চয় আল্লাহ কোন মুমিনের ভালোকাজের ব্যাপারে জুলুম করেন না*; দুনিয়াতেও তিনি তার পুরস্কার দিয়ে থাকেন আবার আখিরাতেও তার প্রতিদান দিবেন। পক্ষান্তরে কাফির ব্যক্তিকে তার ভালোকাজ, যেগুলো সে আল্লাহর জন্য করেনি, সেগুলোর কারণে খেতে দেন এভাবে সে আখিরাতে উপনীত হবে আর তখন তার এমন কোন ভালোকাজ অবশিষ্ট থাকবে না, যার বিনিময়ে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে।”

84- একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মসজিদে বসা ছিলাম, এক ব্যক্তি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে সেখানে এসে তার উটকে মসজিদে বসিয়ে বাঁধলেন। তারপর সাহাবীদেরকে বললেন: “তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ কে?” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাদের মধ্যেই হেলান দেওয়া অবস্থাতে ছিলেন, আমরা বললাম: হেলান দেওয়া এই সাদা ব্যক্তিটি। তখন সে বলল: হে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন: “আমি তোমার জবাব দিয়েছি।” তখন সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলল: আমি আপনাকে কিছু বিষয় কঠিনভাবে জিজ্ঞাসা করছি, হয়ত তা আপনাকে কষ্ট দেবে, তবে আপনি আমার ব্যাপারে আপনার অন্তরে কোন কষ্ট নেবেন না। তখন তিনি বললেন: “তুমি জিজ্ঞাসা কর যা জানতে চাও।” তখন সে বলল: আমি আপনার রব এবং আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম করে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে সমগ্র মানব জাতীর কাছে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর সে বলল: আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আমরা রাতে-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করব? তিনি বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর সে বলল: আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আমরা বছরের এই মাসে সিয়াম পালন করব? তিনি বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর সে বলল: আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহ কী আপনাকে আদেশ করেছেন যে, আপনি আমাদের ধনী ব্যক্তিদের থেকে এই সদাকাহ (যাকাত) গ্রহণ করে তা আমাদের দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে দিবেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আল্লাহুম্মা (হে আল্লাহ!), অবশ্যই।” তারপর লোকটি বলল: আপনি যা নিয়ে আগমন করেছেন তার উপরে আমি ঈমান আনলাম আর আমি হচ্ছি আমার পিছনে থাকা কওমের প্রতিনিধি, @এবং আমি বনু সা‘দ ইবনু বকরের ভাই দ্বিমাম ইবনু ছা‘লাবাহ।

85- আমাদেরকে আনাস ইবনু মালিক রদিয়াল্লাহু আনহু হাদীস বর্ণনা করেছেন, একব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর নবী! কিভাবে কাফির ব্যক্তিকে তার মুখের উপরে ভর করে হাশরের ময়দানে নিয়ে আসা হবে? তিনি বললেন: “@যিনি তাকে দুনিয়াতে দুই পায়ে ভর করে হাটাচ্ছেন, তিনি কি তাকে কিয়ামাতের দিনে মুখের উপরে ভর করিয়ে হাটাতে সক্ষম নন?*” কাতাদাহ বলেন: অবশ্যই, আমাদের রবের ইযযতের কসম! (তিনি তাতে সক্ষম)।

89- ইয়াহুদীদের একজন জ্ঞানী ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ, আমরা পেলাম যে, আল্লাহ আসমানসমূহ একটি আঙ্গুলের উপর, যমীনসমূহ একটি আঙ্গুলের উপর, গাছ-পালা একটি আঙ্গুলের ওপর, পানি একটি আঙ্গুলের ওপর, মাটি একটি আঙ্গুলের ওপর এবং সমস্ত মাখলুক একটি আঙ্গুলের উপর রাখবেন। তারপর তিনি বলবেন, আমিই বাদশাহ। এ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদী আলেমের কথাকে স্বীকার করে হেঁসে দিলেন, যাতে তার দাঁতগুলো প্রকাশ পেল। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন, তারা আল্লাহকে তার সম্মান অনুযায়ী সম্মান দিতে পারেনি। কিয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তার হাতের মুঠোর মধ্যে হবে। সহীহ মুসলিমের হাদিসে বর্ণিত: পাহাড়সমূহ ও গাছ-পালা এক আঙ্গুলের উপর থাকবে। তারপর তিনি এগুলোকে নাড়া দিয়ে বলবেন, আমিই বাদশাহ আমিই আল্লাহ। সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় বর্ণিত: আসমানসমূহ এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের ওপর এবং সমগ্র মাখলুক একটি আঙ্গুলের ওপর থাকবে।”