ফিকহ ও উসূলে ফিকহ

ফিকহ ও উসূলে ফিকহ

8- মুনাফিকদের ওপর সবচেয়ে কঠিন সালাত হলো, ইশা ও ফজরের সালাত। তারা যদি এ দুই সালাতের ফযিলত সম্পর্কে জানতো তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হতো। আর আমি ইচ্ছা করেছি যে, সালাত আদায় করার আদেশ দিব ও ইকামাত দেয়া হবে তারপর একজনকে বলব যেন সে মানুষদের নিয়ে সালাত আদায় করে। অতঃপর আমি কতক মানুষ যাদের সাথে থাকবে লাকড়ির বোঝা তাদেরকে নিয়ে সেসব লোকদের কাছে যাবো যারা সালাতে উপস্থিত হয় না এবং তাদের ওপর তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিব।

27- তিনি প্রতিটি সালাতের পশ্চাতে যখন সালাম ফিরাতেন, তখন (এই দু'আটি) পড়তেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর। লা হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অলা না’বুদু ইল্লা ইয়্যা-হু লাহুন্নি’মাতু অলাহুল ফাযবলু অলাহুস সানা-উল হাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা অলাউ কারিহাল কা-ফিরূন।” (অর্থ : এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। [বিশাল] রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই। তাকে ছাড়া আমরা আর কারো ইবাদত করি না, তাঁরই যাবতীয় নি‘আমত, তাঁরই যাবতীয় অনুগ্রহ এবং তাঁরই যাবতীয় সু-প্রশংসা। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁরই ইবাদত করি, যদিও কাফের দল তা অপছন্দ করে।

40- এক অন্ধ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কোন রাহবার নেই, যে আমাকে মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে।’ সুতরাং সে নিজ বাড়িতে সালাত পড়ার জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। কিন্তু যখন সে পিঠ ঘুরিয়ে রওনা দিল, তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি কি আযান শুনতে পাও?’’ সে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি সাড়া দাও।’’ [অর্থাৎ মসজিদেই এসে সালাত পড়।]

98- আমার পূর্বে আল্লাহ যে কোন নবীকে যে কোন উম্মতের মাঝে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে তাঁর (কিছু) সহযোগী ও সঙ্গী হত। তারা তাঁর সুন্নতের উপর আমল করত এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের পরে এমন অপদার্থ লোক সৃষ্টি হল যে, তারা যা বলত, তা করত না এবং তারা তা করত, যার আদেশ তাদেরকে দেওয়া হত না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন। আর এর বাইরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।

104- আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু সিয়াম স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব।’ সিয়াম ঢাল স্বরূপ অতএব তোমাদের কেউ যেন সিয়ামের দিনে অশ্লীল না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি-গালাজ করে অথবা তার সাথে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি সিয়াম রেখেছি।’ সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে, নিঃসন্দেহে সায়িমের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা বেশী উৎকৃষ্ট। সায়িমের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়; [১] যখন সে ইফতার করে [ইফতারের জন্য সে আনন্দিত হয়]। আর [২] যখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, স্বীয় সিয়ামের জন্য সে আনন্দিত হবে।’’ [বুখারী ও মুসলিম, এই শব্দগুলি বুখারীর] বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, ‘সে [সায়িম] পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করে একমাত্র আমারই জন্য। সিয়াম আমার জন্যই। আর আমি নিজে তার পুরস্কার দেব। আর প্রত্যেক নেকী দশগুণ বর্ধিত হয়।’ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আদম সন্তানের প্রত্যেক সৎকর্ম কয়েকগুণ বর্ধিত করা হয়। একটি নেকী দশগুণ থেকে নিয়ে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু সিয়াম ছাড়া। কেননা, তা আমার উদ্দেশ্যে [পালিত] হয়। আর আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি আমার [সন্তুষ্টি অর্জনের] উদ্দেশ্যেই বর্জন করে।’ সায়িমের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে। একটি আনন্দ হল ইফতারের সময়, আর অপরটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎকালে। আর নিশ্চয় তার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট।”

147- রাসূল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা সালাত পড়ছে যেমন আমরা সালাত পড়ছি, তারা সিয়াম রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।” সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন ক’রে নিজের যৌন ক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’ তিনি বললেন, “কি রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কাম-ক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে।

186- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে বড় বা ছোট সেনা দলের অধিনায়ক নিয়োগ করে পাঠানোর সময় বিশেষভাবে তার জন্য আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বনের এবং তার সহ-যোদ্ধাদের সাথে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ দিতেন। তিনি বলতেন, “তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। তোমরা জিহাদ করো, বিশ্বাসঘাতকতা করো না, চুরি করো না, কারো অঙ্গহানি বা অঙ্গ বিকৃত করো না এবং শিশুদের হত্যা করো না। যখন তুমি শত্রু পক্ষের মুশরিকদের মুখোমুখী হবে, তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ের প্রতি আহবান জানাবে। তারা সেগুলোর যে কোন একটির প্রতি সাড়া দিলে তুমি তাদের থেকে তা কবুল করো এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। ১. অতঃপর তুমি তাদেরাক ইসলামের দাওয়াত দাও। তারা যদি তা কবুল করে তবে তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নাও এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। অতঃপর তাদেরকে স্বদেশ ছেড়ে মুহাজিরদের দেশে চলে আসার আহবান জানাও এবং তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তারা যদি এ কাজ করে তবে যেসব সুযোগ-সুবিধা মুহাজিরগন পাবে তারাও তা পাবে এবং মুহাজিরদের উপর যেসব দায়দায়িত্ব বর্তাবে তা তাদের উপরও বর্তাবে। তারা যদি (স্বদেশ ত্যাগ করতে) অসম্মত হয় তবে তাদের জানিয়ে দাও যে, তারা বেদুইন মুসলমানদের সমান মর্যাদা পাবে, তাদের উপর আল্লাহর সেই সব হুকুম জারি হবে যা মুমিন মুসলমানদের উপর জারী হয় এবং তারা গনীমত ও ফাই-এর কিছুই পাবে না, তবে যদি তারা মুসলমানদের সাথে মিলে জিহাদ করে। ২. তারা যদি ইসলামে দাখিল হতে অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিযয়া দিতে বলো। তারা যদি তা দেয় তবে তাদের নিকট থেকে তা গ্রহণ করো এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। ৩. তারা যদি জিযয়া দিতেও অস্বীকার করে, তবে তুমি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। আর তুমি কোন দুর্গ অবরোধ করলে পর তারা তোমার নিকট আল্লাহর যিম্মাদারি এবং তোমার নবীর যিম্মাদারি লাভের আশা করলে তুমি তাদের জন্য আল্লাহর যিম্মাদারি এবং তোমার নবীর যিম্মাদারি দান করবে না, তবে তোমার নিজের জিম্মাদারী ও তোমার সাথীদের জিম্মাদারী দান করো। কারণ, তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের সাথীদের যিম্মাদারি ভঙ্গ করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মাদারি ভঙ্গ করার চেয়ে তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ। আর তুমি কোন দূর্গ অবরোধ করলে পর তারা তোমার নিকট আল্লাহর হুকুম মানতে চাইলে তুমি তাদেরকে আল্লাহর হুকুমের ওপর রাখবে না, বরং তোমার হুকুম মানতে বাধ্য করো, কারণ তুমি জান না তাদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহর হুকুম সঠিকভাবে জানতে পারবে কি পারবে না।

215- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, কিছু লোক একটা জানাযা নিয়ে পার হয়ে গেল। লোকেরা তার প্রশংসা করল। নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “অবধারিত হয়ে গেল।” অতঃপর দ্বিতীয় আরেকটি জানাযা নিয়ে পার হলে লোকেরা তার দুর্নাম করল। নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “অবধারিত হয়ে গেল।” উমার বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘কী অবধারিত হয়ে গেল?’ তিনি বললেন, “তোমরা যে এর প্রশংসা করলে তার জন্য জান্নাত, আর ওর দুর্নাম করলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেল। তোমরা হলে পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী।” মুত্তাফাকুন আলাইহি

355- আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন একজন সহাবী এসে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলেন। তিনি বললেন, ফিরে যাও ও সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। তিনি ফিরে গিয়ে পূর্বের মত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলেন। তিনি বললেন, ফিরে গিয়ে সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার বললেন। সহাবী বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমিতো এর চেয়ে সুন্দর করে সালাত আদায় করতে জানি না। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়াবে, তখন তাক্বীর বলবে। অতঃপর কুরআন হতে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। অতঃপর রুকু‘তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ‘ করবে। অতঃপর মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর ধীরস্থীরভাবে সাজাদহ করবে ও সাজদাহ্ হতে উঠে স্থির হয়ে বসবে। আর তোমার পুরো সালাতে এভাবেই করবে।

362- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যাবতীয় কাজের জন্য ইস্তেখারা শিখাতেন। যেভাবে কুরআনের সূরা শেখাতেন। (আর) বলতেন, ‘যখন তোমাদের কারো কোন বিশেষ কাজ করার ইচ্ছা হয়, তখন সে যেন দু’ রাকআত প’ড়ে এই দুআ বলে। অর্থ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার ইলমের উসিলায় মঙ্গল প্রার্থনা করছি। তোমার কুদরতের উসিলায় শক্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার বিরাট অনুগ্রহ থেকে ভিক্ষা যাচনা করছি। কেননা, তুমি শক্তি রাখ, আমি শক্তি রাখি না। তুমি জান, আমি জানি না এবং তুমি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। হে আল্লাহ! যদি তুমি জান এই কাজটি আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের শেষ পরিণামে ভালো, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত ও সহজ করে দাও। অতঃপর তাতে আমার জন্য বরকত দান কর। আর যদি তুমি জান এই কাজ আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের শেষ পরিণামে মন্দ, তাহলে তা আমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকে ওর নিকট থেকে সরিয়ে দাও। আর যেখানেই হোক মঙ্গল আমার জন্য বাস্তবায়িত কর, অতঃপর তাতে আমার মনকে পরিতুষ্ট করে দাও। তিনি বলেন, “সে তার প্রয়োজনের বিষয়টি উল্লেখ করবে।”

367- রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সালাত আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন দ্বারা আরম্ভ করতেন। অপর বর্ণনায় বর্ণিত: আমি আবূ বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের সাথে সালাত আদায় করেছি। তাদের কাউকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়তে শুনিনি। আর সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় বর্ণিত: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর, উমার ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের পিছনে সালাত আদায় করি, তারা আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন দ্বারা সালাত আরম্ভ করতেন। তারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কিরাতের শুরুতে এবং শেষে উল্লেখ করতেন না।

371- ‘নিশ্চয় আমার উম্মাতকে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় ডাকা হবে, যে সময় তাদের ওযূর অঙ্গগুলো চমকাতে থাকবে”। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে তার চমক বাড়াতে চায়, সে যেন তা করে। অপর শব্দে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত: “আমি আবূ হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ওযূ করতে দেখেছি, তিনি তার চেহারা ধোন এবং তার দুই হাতকে বোগলের কাছাকাছি পর্যন্ত ধোন তারপর সে তার দুই পাকে ধোন এমনকি পায়ের নলা পর্যন্ত উঁচা করেন। তারপর তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, “নিশ্চয় আমার উম্মাতকে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় ডাকা হবে, যে সময় তাদের ওযূর অঙ্গগুলো চমকাতে থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে তার চমক বাড়াতে চায়, সে যেন তা করে।” সহীহ মুসলিমে অপর শব্দে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার বন্ধু সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “(পরকালে) মু’মিনের অলংকার ততদূর হবে, যতদূর তার ওযূর (পানি) পৌঁছবে।”

506- নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখাবারা (জমিনের নির্দিষ্ট অংশের উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে জমি চাষ করা, যেমন ক্ষেতের উত্তরাংশে যা উৎপাদিত হবে তা কৃষকের), মুহাকালা (গম বীজে থাকা অবস্থায় তা খড় থেকে কাটা পরিশোধিত গমের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা) ও মুযাবানা (গাছের ভেজা খেজুরের বিনিময় শুকনো খেজুর বিক্রি করা) এবং ফল খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার আগে তা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। গাছে থাকা অবস্থায় ফল দিনার বা দিরহামের বিনিময়ে ছাড়া যেন বিক্রি করা না হয়; তবে ‘আরায়্যার (শুকনো খেজুরের বিনিময় ভেজা খেজুর অনুমান— প্রবল ধারণা দ্বারা পরিমাণ নির্ধারণ করে বিক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন।

548- আবুল আব্বাস সাহল ইবন সা’দ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, আমর ইবন আউফ গোত্রের মাঝে অনিষ্ট (ঝগড়া-বিবাদ) সংঘটিত হয়েছে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে কিছু লোককে নিয়ে তাদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা ক’রে দেওয়ার জন্য সেখানে হাজির হলেন। সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেলেন। অপর দিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। সুতরাং বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট এসে বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি কি সালাতে লোকেদের ইমামতি করবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি চাও।’ অতঃপর বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালাতের ইকামত দিলেন আর আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এগিয়ে গিয়ে (তাহরীমার) তকবীর বললেন লোকেরাও তকবীর বলল। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম ক’রে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালাতরত অবস্থায় কোন দিকে তাকাতেন না, কিন্তু লোকেদের অধিক মাত্রায় হাততালির কারণে তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হাতের ইশারায় (নিজের জায়গায় থাকতে) নির্দেশ দিলেন। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর হাত উপরে তুলে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পিছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে গিয়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত শেষ ক’রে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, “হে লোক সকল! কি ব্যাপার যে, সালাত অবস্থায় কিছু ঘটতে দেখে তোমরা হাততালি দিতে শুরু করলে? (জেনে রেখো, সালাতে) হাততালি দেওয়া তো মহিলাদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কারণ, এটা শুনলে কেউ তার দিকে ভ্রুপেক্ষ না ক’রে পারবে না। হে আবূ বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন ইমামত করতে তোমার কিসের বাধা ছিল?” তিনি বললেন, ‘আবূ কুহাফার ছেলের জন্য সঙ্গত ছিল না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে লোকেদের ইমামত করবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

573- আবুল আসওয়াদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মাদীনায় আসলাম এবং আমি ‘উমার ইব্নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বসলাম। এ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা অতিক্রম করল। তখন জানাযার লোকটি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেলে। অতঃপর অপর একটি (জানাযা) অতিক্রম করল, তখন সে লোকটি সম্পর্কেও প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। (এবারও) তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। অতঃপর তৃতীয় একটি (জানাযা) অতিক্রম করল, লোকটি সম্বন্ধে নিন্দাসূচক মন্তব্য করা হল। তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। আবুল আসওয়াদ বলেন, আমি বললাম, হে আমীরুল মু‘মিনীন! কি ওয়াজিব হয়ে গেল। তিনি বললেন, আমি তেমনই বলেছি, যেমন নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যে কোন মুসলিম সম্পর্কে চার ব্যক্তি ভাল বলে সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন আমরা বলেছিলাম, তিনজন হলে? তিনি বললেন, তিনজন হলেও। আমরা বললাম, দু’জন হলে? তিনি বললেন, দু’জন হলেও। অতঃপর আমরা একজন সম্পর্কে আর তাঁকে জিজ্ঞেস করিনি। এটি বর্ণনা করেছেন বুখারী।

574- আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কেবলমাত্র পুরুষেরাই আপনার হাদীস শোনার সৌভাগ্য লাভ করছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্যও একটি দিন নির্ধারিত করুন। আমরা সে দিন আপনার নিকট আসব, আপনি আমাদেরকে তা শিক্ষা দেবেন, যা আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ তিনি বললেন, “তোমরা অমুক অমুক দিন একত্রিত হও।” অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এসে সে শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। তারপর তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে কোন মহিলার তিনটি সন্তান মারা যাবে, তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড় হয়ে যাবে।” এক মহিলা বলল, ‘আর দু’টি সন্তান মারা গেলে?’ তিনি বললেন, “দু’টি মারা গেলেও (তাই হবে)। মুত্তাফাকুন আলাইহি।

630- আবূ যার থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন যদি তার সামনে শিবিকার খুঁটির ন্যায় কোন জিনিস থাকে সেটা তাকে আড়াল করে রাখবে। আর যদি শিবিকার খুঁটির ন্যায় কোন জিনিস না থাকে তখন নারী, গাধা ও কালো বর্ণের কুকুর তার সলাত নষ্ট করে দেয়। আমি বললাম, হে আবূ যার! লাল ও হলদে বর্ণের কুকুর থেকে কালো বর্ণের কুকুরের পার্থক্য কি? তিনি বলেন, হে ভাতিজা, তুমি আমাকে যেরূপ জিজ্ঞেস করলে আমিও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তদ্রুপ জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, “কালো কুকুর হলো শয়তান।” সহীহ মুসলিম। অপর একটি হাদীসে এসেছে—“ঋতুবতী নারী ও কুকুর সালাত নষ্ট করে দেয়।” সুনানু আবূ দাউদ।

641- রিফা‘আহ ইবন রাফে‘ আয-যুরাকী থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগনের একজন ছিলেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আসল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বসা ছিল। সে তার কাছাকাছি স্থানে সালাত আদায় করল। তারপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে সালাম দিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি তোমার সালাত আবার পড়ো। কেননা তুমি সলাত পড়োনি। তিনি বলেন, তারপর সে ফিরে গেল এবং আগের মতো সালাত আদায় করলো। তারপর আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফিরে এলো। তিনি তাকে বললেন, তুমি তোমার সালাত আবার পড়ো। কেননা তুমি সলাত পড়োনি। সে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে শিখিয়ে দিন কীভাবে সালাত আদায় করবো। তিনি বলেন, “তুমি যখন কিবলামুখী হবে তাকবীর (তাহরীমা) বলো, এরপর তুমি সূরা ফাতিহা পড়ো। তারপর কুরআনের যে অংশ তোমার কাছে সহজ সেখান থেকে পাঠ করো। তারপর যখন তুমি রুকূ করবে তখন তুমি তোমার দুই হাত দুই হাঁটুর উপর রাখবে এবং তোমার পিটকে লম্বা করে বিছিয়ে দেবে। তুমি তোমার রুকূর জন্য ধীরস্থিরতা অবলম্বন করো। অতঃপর যখন তুমি তোমার মাথা উঠাবে তখন তুমি তোমার মেরুদন্ড সোজা কর। যাতে হাঁড়গুলো নিজ নিজ জোড়ার স্থানে ফিরে যায়। তারপর যখন সেজদা করবে তখন তুমি তোমার সেজদার জন্য ধীরস্থিরতা অবলম্বন করো। তারপর যখন তুমি তোমার মাথা উঠাবে তখন তুমি তোমার বাম উরুর ওপর বসো। অতঃপর প্রতি রুকু ও সেজদায় তা করো। মুসনাদে আহমাদ। অপর বর্ণনায় বর্ণিত। তিনি বলেন, “আল্লাহর নির্দেশ মত পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ না করলে তোমাদের কারো সালাত পরিপূর্ণ হবে না। সে তার মুখমণ্ডল ও দু’ হাত কনুইসহ ধৌত করবে, তার মাথা মাসহ করবে এবং দু’পা গোছা পর্যন্ত ধৌত করবে। তারপর তাকবীর বলবে এবং আল্লাহর প্রশংসা করবে। তারপর তাকে যতটুকু অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং তার জন্য যা সহজ হয় তা থেকে কুরআন পড়বে। তারপর তাকবীর বলবে এবং সেজদা করবে। তারপর চেহারাকে বা কপালকে যমীনে এমনভাবে রাখবে যাতে তার শরীরের জোড়াগুলো স্থীর হয়ে পড়ে এবং ঝুঁকে পড়ে। তারপর তাকবীর বলবে এবং সোজা হয়ে তার আসনে বসবে এবং মেরুদন্ডকে সোজা করবে। এভাবে চার রাকা‘আত সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এ সব কর্মসমূহ সম্পাদন করা ছাড়া তোমাদের কারো সালাত পূর্ণ হবে না।” সুনানে আবূ দাউদ। অপর বর্ণনায় বর্ণিত: “তারপর তুমি আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে ওযূ কর। তারপর তাশাহুদ পড়। ইকামত দাও এবং তাকবীর বলো। যদি তোমার কাছে কুরআন জানা থাকে তা থেকে পড়ো। অন্যথায় আল্লাহর প্রশংসা কর, তার তাকবীর বল এবং তাহলীল পড়ো।” সুনানু আবূ দাউদ।

703- একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইইহ ওয়াসাল্লামের যুগে র্সূযগ্রহণ হল, তখন তিনি ভীত অবস্থায় উঠলনে ও কিয়ামত সংঘটিত হবার ভয় করতে লাগলেন, অবশেষে তিনি মাসজিদে আসেন ও দাঁড়িয়ে যান এবং সবচেয়ে দীর্ঘ কিয়াম ও সাজদা দ্বারা সালাত আদায় করেন। আমি কখনো তাকে তার সালাতে এরূপ করতে দেখেনি। অতঃপর তিনি বললেন, এগুলো হল নিদর্শন যা আল্লাহ্ পাঠিয়ে থাকেন, তা কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত অবস্থায় আল্লাহর যিকির, দু‘আ ও ইস্তিগ্ফারের দিকে ধাবিত হবে।

704- “(প্রাচীনকালে) একটি লোক অন্য লোক হতে একটি জায়গা ক্রয় করল। ক্রেতা ঐ জায়গায় (প্রোথিত) একটি কলসী পেল, যাতে স্বর্ণ ছিল। জায়গার ক্রেতা বিক্রেতাকে বলল, ‘তোমার স্বর্ণ নিয়ে নাও। আমি তো তোমার জায়গা খরিদ করেছি, স্বর্ণ খরিদ করিনি।’ জায়গার বিক্রেতা বলল, ‘আমি তোমাকে জায়গা এবং তাতে যা কিছু আছে সবই বিক্রি করেছি।’ অতঃপর তারা উভয়েই এক ব্যক্তির নিকট বিচার প্রার্থী হল। বিচারক ব্যক্তি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের সন্তান আছে কি?’ তাদের একজন বলল, ‘আমার একটি ছেলে আছে।’ অপরজন বলল, ‘আমার একটি মেয়ে আছে।’ বিচারক বললেন, ‘তোমরা ছেলেটির সাথে তার মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দাও এবং ঐ স্বর্ণ থেকে তাদের জন্য খরচ কর এবং দান কর।”

729- আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত: সে তার স্ত্রীকে মাসিক অবস্থায় তালাক দিয়েছিল। বিষয়টি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পেশ করলেন। এতে রাসূলুল্লাহ খুব ক্ষুব্ধ হন। অতঃপর তিনি বললেন, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয় এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছেই রাখবে, অতঃপর সে ঋতুবতী হবে ও পবিত্র হবে। তারপর যদি তালাক দেওয়াকে ভালো মনে করে তাকে যেন সহবাসের পূর্বে পবিত্র অবস্থায় তালাক দেয়। এটিই ইদ্দত যেমনটি আল্লাহ আদেশ করেছেন। অপর শব্দে বর্ণিত : “যতক্ষণ না যে হায়যে তালাক দিয়েছে সে হায়েয ব্যতীত আরেকটি পরিপূর্ণ হায়েয না আসে।” অপর শব্দে বর্ণিত: “তারপর তা তার তালাক থেকে গণ্য করা হয় এবং রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী আব্দুল্লাহ তাকে ফিরিয়ে নেয়”।

733- বিদায় হজের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার রুগ্ন অবস্থায় আমাকে দেখা করতে এলেন। সে সময় আমার শরীরে চরম ব্যথা ছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার (দৈহিক) জ্বালা-যন্ত্রণা কঠিন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে--যা আপনি স্বচক্ষে দেখছেন। আর আমি একজন ধনী মানুষ; কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী বলতে আমার একমাত্র কন্যা। তাহলে আমি কি আমার মাল-সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দান করে দেব?’ তিনি বললেন, “না।” আমি বললাম, ‘তাহলে অর্ধেক মাল হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “না।” আমি বললাম, ‘তাহলে কি এক তৃতীয়াংশ দান করতে পারি?’ তিনি বললেন, “এক তৃতীয়াংশ (দান করতে পার), তবে এক তৃতীয়াংশও অনেক। কারণ এই যে, তুমি যদি তোমার উত্তরাধিকারীদের ধনবান অবস্থায় ছেড়ে যাও, তাহলে তা এর থেকে ভাল যে, তুমি তাদেরকে কাঙ্গাল করে ছেড়ে যাবে এবং তারা লোকের কাছে হাত পাতবে। (মনে রাখ,) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করবে তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও তুমি বিনিময় পাবে।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি কি আমার সঙ্গীদের ছেড়ে পিছনে (মক্কায়) থেকে যাব?’ তিনি বললেন, “তুমি যদি তোমার সঙ্গীদের মরার পর জীবিত থাক এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোন কাজ কর, তাহলে তার ফলে তোমার মর্যাদা ও সম্মান বর্ধন হবে। আর সম্ভবতঃ তুমি বেঁচে থাকবে। এমনকি তোমার দ্বারা কিছু লোক (মু’মিনরা) উপকৃত হবে। আর কিছু লোক (কাফেররা) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! তুমি আমার সাহাবীদেরকে হিজরতে পরিপূর্ণতা দান কর এবং তাদেরকে (হিজরত থেকে) পিছনে ফিরিয়ে দিও না। কিন্তু মিসকীন সা’দ ইবনে খাওলা।” তাঁর মৃত্যু মক্কায় হওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন।

773- ১৮৬৫- আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একটি লোক বলল, ‘(আজ রাতে) আমি অবশ্যই সাদকাহ করব।’ সুতরাং সে আপন সাদকার বস্তু নিয়ে বের হল এবং (অজান্তে) এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। লোকেরা সকালে উঠে বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক চোরের হাতে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ সাদকাকারী বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই যাবতীয় প্রশংসা! (আজ রাতে) অবশ্যই আবার সাদকা করব।’ সুতরাং সে নিজ সাদকা নিয়ে বের হল এবং (অজান্তে) এক বেশ্যার হাতে তা দিয়ে দিল। সকাল বেলায় লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক বেশ্যাকে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ সে তা শুনে আবার বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই প্রশংসা যে, বেশ্যাকে সাদকা করা হল। আজ রাতে পুনরায় অবশ্যই সাদকাহ করব।’ সুতরাং তার সাদকা নিয়ে বের হয়ে গেল এবং (অজান্তে) এক ধনী ব্যক্তির হাতে সাদকা দিল। সকাল বেলায় লোকেরা আবার বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ এক ধনী ব্যক্তিকে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ লোকটি শুনে বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই সমস্ত প্রসংশা যে, চোর, বেশ্যা তথা ধনী ব্যক্তিকে সাদকা করা হয়েছে।’ সুতরাং তাকে বলা হল যে, ‘(তোমার সাদকা ব্যর্থ যায়নি; বরং) তোমার যে সাদকা চোরের হাতে পড়েছে তার দরুন হয়তো চোর তার চৌর্যবৃত্তি ত্যাগ ক’রে দেবে। বেশ্যা হয়তো তার দরুন তার বেশ্যাবৃত্তি ত্যাগ করবে। আর ধনী; সম্ভবতঃ সে উপদেশ গ্রহণ করবে এবং সে তার আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে।” এই শব্দে হাদিসটি বুখারী বর্ণনা করেছেন, আর মুসলিম বর্ণনা করেছেন তার অর্থ।

786- সা‘ঈদ ইব্নু হারিস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ-কে একটি কাপড়ে সালাত আদায় করা সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কোন এক সফরে বের হয়েছিলাম। এক রাতে আমি কোন দরকারে তাঁর নিকট গেলাম। দেখলাম, তিনি সালাতে রত আছেন। তখন আমার শরীরে মাত্র একখানা কাপড় ছিল। আমি কাপড় দিয়ে শরীর জড়িয়ে নিলাম আর তাঁর পার্শ্বে সালাতে দাঁড়ালাম। তিনি সালাত শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, জাবির! রাতের বেলা আসার কারণ কী? তখন আমি তাঁকে আমার প্রয়োজনের কথা জানালাম। আমার কাজ শেষ হলে তিনি বললেন, এ কিরূপ জড়ানো অবস্থায় তোমাকে দেখলাম? আমি বললাম, কাপড় একটিই ছিল (তাই এভাবে করেছি)। তিনি বললেন, কাপড় যদি বড় হয়, তাহলে শরীরে জড়িয়ে পরবে। আর যদি ছোট হয় তাহলে লুঙ্গি হিসেবে ব্যবহার করবে। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় বর্ণিত: যদি বড় হয় তবে তার দুই কিনারা দুই দিকে ছাড়বে। আর যদি ছোট হয় তাহলে সেটি তোমার কোমরে বেঁধে নিবে।”

793- আবূ হুরাইরাহ্ রাদয়িাল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বিকালের এক সfলাত দু’রাকাত আদায় করলেন। মুহাম্মাদ বলেন, আমার অধিক ধারণা আসরের সালাত। অতঃপর সালাম ফিরালেন। অতঃপর মাসজিদে অগ্রাভাগে রাখা এক টুকরা কাঠের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন এবং তার ওপর তার হাত রাখলেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্যে আবূ বকর ও ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-ও ছিলেন। কিন্তু তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের-এর সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেলেন। যাদের তাড়া ছিল তারা বের হয়ে পড়ল। তারা বলল, সালাত কি সংক্ষেপ করা হয়েছে? একজন লোককে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘যুল-ইয়াদাইন’ বলে ডাকতেন। সে বলল, আপনি কি ভুলে গেছেন, নাকি সালাত সংক্ষেপ করা হয়েছে? তিনি বললেন, আমি ভুলিনি এবং সালাত সংক্ষেপও করা হয়নি। সে বলল, অবশ্যই, আপনি ভুলে গিয়েছেন। তারপর তিনি দু্ই রাকা‘আত সালাত আদায় করলেন, সালাম ফিরালেন ও তাকবীর বললেন এবং স্বাভাবিকভাবে সাজদাহ’র মতো বা একটু দীর্ঘ সাজদাহ করলেন। অতঃপর তার মাথা তুললেন ও তাকবীর বললেন। অতঃপর তার মাথা রাখলেন ও তাকবীর বললেন এবং স্বাভাবিকভাবে সাজদাহ’র মত বা একটু দীর্ঘ সাজদাহ করলেন। অতঃপর তার মাথা তুললেন ও তাকবীর বললেন।” সহীহ বুখারী।

798- বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবন ওয়ালিদকে ইয়ামনের দিকে প্রেরণ করেন যাতে তিনি তাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়। কিন্তু তারা তাকে সাড়া দেয়নি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠালেন এবং তাকে নির্দেশ দিলেন যে, খালিদ এবং তার সাথে আরও যারা আছে তাদের ফেরত পাঠাতে। তবে যদি খালিদের সাথে থাকা কোন লোক আলীর সাথে থাকতে চায় সে যেন তার সাথে থাকে। বারা বলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম সে তার সাথে রয়ে গেল। তারপর যখন আমরা সম্প্রদায়ের লোকদের কাছাকাছি গেলাম, তারা আমাদের কাছে বের হয়ে আসল। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের সালাত পড়ালেন এবং এক কাতার করে দাড়ালাম। তারপর তিনি আমাদের সামনে অগ্রসর হলেন। তারপর তাদেরকে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি পড়ে শুনালেন, ফলে হামদান গোত্রের সব লোক ইসলাম গ্রহণ করে ফেলল। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাদের ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জানিয়ে চিঠি লিখলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন চিঠিটি পড়লো সেজদায় লুটে পড়ল। তারপর তিনি তার মাথা তুললেন এবং বললেন, হামদান সম্প্রদায়ে ওপর শান্তি। হামদান সম্প্রদায়ে ওপর শান্তি। সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী।

800- আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত পড়বে, তখন সে যেন তার ডান পার্শ্বে শুয়ে যায়।” মারওয়ান ইবন হাকাম তাকে বলল, আমাদের কারো মসজিদের দিকে গমন করা ডান পার্শ্বে শুয়ার জন্য যথেষ্ট হবে না। উবাউদুল্লাহ স্বীয় হাদীসে বলেন: তিনি বললেন, না, তিনি বলেন: বিষয়টি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ওপর বাড়াবাড়ি করল। তখন ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলা হলো, তিনি যা বলেন তার কোন কিছু কি আপনি অস্বকীর করেন। সে বলল, “না, তবে সে সাহস দেখিয়েছে আর আমরা ভীরুতা প্রদর্শন করেছি।” তিনি বলেন, বিষয়টি আবূ হুরায়রার নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, আমার কি অপরাধ যদি আমি স্মরণ রাখি এবং তারা ভুলে যায়। সুনানে আবূ দাউদ।