আকীদা
28- “একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে ছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমাদের কাছে উপস্থিত হলেন। তার পরিধানের কাপড় ছিল সাদা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কালো কুচকুচে। তার মধ্যে সফরের কোন চিহ্ন ছিল না আবার আমরা কেউ তাকে চিনতে পারলাম না। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “@ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো (প্রকৃত) মাবূদ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমাযানের সাওম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহতে পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করবে*।” আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তার কথা শুনে আমরা বিস্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করেছেন আবার তিনিই-তা সত্যায়ন করছেন। আগন্তুক বললেন: আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “ঈমান হলো তুমি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনায়ন করবে, আর তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান রাখবে।” আগন্তুক বললেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন: আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “ইহসান হলো, তুমি এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে এ বিশ্বাস রাখবে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন।” আগন্তুক বললেন: আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবগত নন।” আগন্তুক বললেন: আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে এবং নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ, দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে।” উমার ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: পরে আগন্তুক প্রস্থান করলেন। আমি বেশ সময় অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন: “হে উমার ! তুমি জানো, এই প্রশ্নকারী কে?” আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সম্যক জ্ঞাত আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তিনি হচ্ছেন জিবরীল। তিনি তোমাদের কে তোমাদের দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন।”
30- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা‘আলা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “@হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার উপর জুলুম করা কে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর জুলুম-অত্যাচার করো না*। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে দিশেহারা, তবে আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে হিদায়াত প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত, তবে আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে আহার চাও, আমি তোমাদের আহার করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন; কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে পরিধেয় চাও, আমি তোমাদের পরিধান করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা রাতদিন ভুল করে থাকো। আর আমিই সব ভুল ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব।হে আমার বান্দারা তোমরা কখনো আমার অনিষ্ট করতে পারবে না, যাতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হই এবং তোমরা কখনো আমার উপকার করতে পারবে না, যাতে আমি উপকৃত হই। হে আমার বান্দারা! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের মানুষ ও জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচাইতে বেশি ভয় পায়, তোমরা সবাই যদি তার অন্তরের মতো হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব একটুও বৃদ্ধি পাবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের সকল মানুষ ও সকল জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর সবচাইতে পাপিষ্ঠ তোমরা সবাই যদি তার অন্তরের মতো হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে না। হে আমার বান্দা! তোমাদের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন যদি কোন বিশাল মাঠে দাঁড়িয়ে সবাই আমার কাছে আবদার করে আর আমি প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করি তাহলে আমার কাছে যা আছে তাতে এর চাইতে বেশী কিছু হ্রাস পাবে না, যেমন কেউ সমুদ্রে একটি সূচ ডুবিয়ে দিলে যতটুকু তাথেকে হ্রাস পায়। হে আমার বান্দারা। আমি তোমাদের ’আমলই তোমাদের জন্য সংরক্ষিত রাখি। এরপর পুরোপুরিভাবে তার বিনিময় প্রদান করে থাকি। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কল্যাণ অর্জন করে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে তা ব্যতীত অন্য কিছু পায়, তবে সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে।”
50- একবার মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি তাঁকে ডাকলেন, হে মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্ এবং আপনার আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত। তিনি ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্ এবং প্রস্তুত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্ এবং প্রস্তুত। এরূপ তিনবার করলেন। এরপর বললেন, “@যে কোনো বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।”* মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি কি মানুষকে এ খবর দিবো না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে? তিনি বললেন, তাহলে তারা এর ওপর ভরসা করে বসে থাকবে। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (জীবনভর এ হাদীসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদীসটি বর্ণনা করে গেছেন, যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়।