আকীদা

আকীদা

2- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হলে তিনি তাঁর একটা চাদর নিজ মুখমন্ডলের ওপর নিক্ষেপ করতে থাকেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয়, তখন মুখ হতে চাদর সরিয়ে দেন। এই অবস্থায় তিনি বললেনঃ “@ইয়াহুদী ও নাসারাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে*”। (এ বলে) তারা যে কার্যকলাপ করত তা হতে সতর্ক করেছিলেন।

6- আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পাঁচদিন আগে তাঁকে বলতে শুনেছি, “@তোমাদের কেউ আমার খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) হওয়া থেকে আমি আল্লাহর কাছে নিষ্কৃতি চাইছি; কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমাকে খলীলরূপে গ্রহণ করেছেন, যেমনিভাবে খলীলরূপে গ্রহণ করেছিলেন ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামকে*। আমি যদি আমার উম্মাতের মধ্যে কাউকে খলীলরূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবূ বকরকেই খলীলরূপে গ্রহণ করতাম। সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী ও নেককারদের কবরগুলোকে মাসজিদ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মাসজিদ বানিও না। আমি তোমাদের তা থেকে নিষেধ করছি।”

9- “মুনাফিকদের ওপর সবচেয়ে কঠিন সালাত হলো এশা ও ফজরের সালাত। তারা যদি তার ফযিলত জানতো তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত*। আর আমি ইচ্ছে করেছি, সালাতের আদেশ দিব তারপর ইকামাত দেয়া হবে তারপর একজনকে মানুষদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বলব। অতঃপর আমি কতক মানুষ যাদের সাথে লাকড়ির বোঝা থাকবে তাদেরকে নিয়ে সেসব লোকদের কাছে যাবো যারা সালাতে উপস্থিত হয় না এবং তাদের ওপর তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিব।”

13- মু‘আয ইবনু জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ইয়ামানের (শাসক নিয়োগ করে) পাঠানোর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেনঃ “@তুমি আহলে কিতাবের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে- তারা যেন সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল*। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয় তবে তাদের বলবে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয় তবে তাদের বলবে, আল্লাহ তাদের উপর সাদাকা (যাকাত) ফরজ করেছেন- যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের ফকীরদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে তাদের উত্তম মাল গ্রহণ হতে বিরত থাকবে এবং মযলুমের বদদু‘আকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদদু‘আ) এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না।”

18- “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন মাবূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। ঈসা আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর সেই কালেমা যা তিনি মারইয়ামের মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন ও তাঁর সৃষ্ট রূহ। আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য।@ তবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; তার আমল যাই হোক না কেন।”

20- নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথা বললেন, আর আমি(তার সাথে)আরো একটি বললাম। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: @“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন শরীক(ওলী ইত্যাদি) কে ডাকা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে যাবে।"* আর আমি বললামঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কোন শরীক(ওলী ইত্যাদি) কে না ডাকা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে যাবে।”(বুখারীঃ4497 ও মুসলিমঃ92)

25- “আমি যে ব্যাপারে তোমাদেরকে (বর্ণনা না দিয়ে) ছেড়ে দিয়েছি, সে ব্যাপারে তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ সে ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করো না)। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের অধিক প্রশ্ন করার এবং তাদের নবীদের সঙ্গে মতভেদ করার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে।* সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোনো জিনিস থেকে নিষেধ করব, তখন তোমরা তা থেকে দূরে থাক। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজের আদেশ দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন কর।”

26- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান রব হতে (হাদীসে কুদসী ) বর্ণনা করে বলেন যে: “@আল্লাহ ভাল-মন্দ লিখে দিয়েছেন। এরপর সেগুলোকে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করল; কিন্তু তা বাস্তবে করল না, আল্লাহ তাঁর কাছে এর জন্য পূর্ণ একটি সাওয়াব লিখবেন। আর সে ভাল কাজের ইচ্ছা করল এবং তা বাস্তবেও সম্পাদন করল, আল্লাহ তাঁর কাছে ঐ ব্যক্তির জন্য দশ গুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত, এমন কি এর চেয়ে বহুগুণ সাওযাব লিখে দেন। আর যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করল; কিন্তু তা বাস্তবায়ন করল না, আল্লাহ তাঁর কাছে তার জন্য পূর্ণ সাওয়াব লিখবেন। আর যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে, তবে তার জন্য আল্লাহ মাত্র একটা গুনাহ লিখবেন।”

28- “একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে ছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমাদের কাছে উপস্থিত হলেন। তার পরিধানের কাপড় ছিল সাদা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কালো কুচকুচে। তার মধ্যে সফরের কোন চিহ্ন ছিল না আবার আমরা কেউ তাকে চিনতে পারলাম না। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “@ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো (প্রকৃত) মাবূদ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমাযানের সাওম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহতে পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করবে*।” আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তার কথা শুনে আমরা বিস্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করেছেন আবার তিনিই-তা সত্যায়ন করছেন। আগন্তুক বললেন: আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “ঈমান হলো তুমি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনায়ন করবে, আর তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান রাখবে।” আগন্তুক বললেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন: আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “ইহসান হলো, তুমি এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে এ বিশ্বাস রাখবে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন।” আগন্তুক বললেন: আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবগত নন।” আগন্তুক বললেন: আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে এবং নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ, দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে।” উমার ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: পরে আগন্তুক প্রস্থান করলেন। আমি বেশ সময় অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন: “হে উমার ! তুমি জানো, এই প্রশ্নকারী কে?” আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সম্যক জ্ঞাত আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তিনি হচ্ছেন জিবরীল। তিনি তোমাদের কে তোমাদের দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন।”

30- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা‘আলা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “@হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার উপর জুলুম করা কে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর জুলুম-অত্যাচার করো না*। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে দিশেহারা, তবে আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে হিদায়াত প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত, তবে আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে আহার চাও, আমি তোমাদের আহার করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন; কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে পরিধেয় চাও, আমি তোমাদের পরিধান করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা রাতদিন ভুল করে থাকো। আর আমিই সব ভুল ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব।হে আমার বান্দারা তোমরা কখনো আমার অনিষ্ট করতে পারবে না, যাতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হই এবং তোমরা কখনো আমার উপকার করতে পারবে না, যাতে আমি উপকৃত হই। হে আমার বান্দারা! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের মানুষ ও জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচাইতে বেশি ভয় পায়, তোমরা সবাই যদি তার অন্তরের মতো হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব একটুও বৃদ্ধি পাবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের সকল মানুষ ও সকল জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর সবচাইতে পাপিষ্ঠ তোমরা সবাই যদি তার অন্তরের মতো হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে না। হে আমার বান্দা! তোমাদের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন যদি কোন বিশাল মাঠে দাঁড়িয়ে সবাই আমার কাছে আবদার করে আর আমি প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করি তাহলে আমার কাছে যা আছে তাতে এর চাইতে বেশী কিছু হ্রাস পাবে না, যেমন কেউ সমুদ্রে একটি সূচ ডুবিয়ে দিলে যতটুকু তাথেকে হ্রাস পায়। হে আমার বান্দারা। আমি তোমাদের ’আমলই তোমাদের জন্য সংরক্ষিত রাখি। এরপর পুরোপুরিভাবে তার বিনিময় প্রদান করে থাকি। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কল্যাণ অর্জন করে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে তা ব্যতীত অন্য কিছু পায়, তবে সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে।”

31- একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে (আরোহী) ছিলাম। তিনি বললেন: “@ওহে বালক, আমি তোমাকে কিছু কালেমা শিখিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহর (বিধানসমূহের) হিফাযত করবে। তিনি তোমার হিফাযত করবেন; আল্লাহর হিফাযত করবে, তাঁকে তোমার সামনে পাবে। যখন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে, যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে*। জেনে রাখ, সমস্ত উম্মতও যদি তোমার উপকার করতে একত্রিত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ যা তোমার তকদীরে লিখে রেখেছেন তা ছাড়া কোন উপকার করতে পারবে না। আর সব উম্মত যদি তোমার কোন ক্ষতি করতে একত্রিত হয়ে যায়, তবে তোমার তাকদীরে আল্লাহ তা‘আলা যা লিখে রেখছেন তা ছাড়া তোমার কোন ক্ষতি তারা করতে পারবে না। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, আর লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে।”

37- একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন: “@তোমরা শীঘ্রই তোমাদের রব্ব কে দেখতে পাবে, যেমনি তোমরা এ চাঁদটিকে দেখতে পাচ্ছো। তাঁকে দেখতে তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না(ভিড়ে ঠেলাঠেলিও করবেনা)।* অতএব, তোমরা যদি সক্ষম হও, সূর্য উঠার আগের সালাত ও সূর্য ডুবার পূর্বের সালাত (যথাযথভাবে) আদায় করতে পরাজিত হবে না, তাহলে তাই করো।” অতপর তিনি তিলাওয়াত করলেন: {وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ}» “কাজেই তোমার রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করো সূর্য উদয়ের আগে ও অস্ত যাওয়ার আগে।”

38- “আল্লাহ তা’আলা যালিমদের ঢিল দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে ধরেন, তখন আর ছাড়েন না।*” (বর্ণনাকারী বলেন) এরপর তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ আয়াত পাঠ করেন: “আর এরকমই বটে আপনার রবের পাকড়াও, যখন তিনি কোন জনপদবাসীকে পাকড়াও করেন তাদের জুলুমের কারণে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড় যন্ত্রণাদায়ক, অত্যন্ত কঠিন।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১০২]

40- “সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয় (আমার উম্মাত নয়) যে শুভ- অশুভ নির্ণয় করে অথবা যার জন্য শুভ-অশুভ নির্ণয় করা হয়, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য নির্ণয় করে অথবা যার জন্য করা হয়, অথবা যে ব্যক্তি যাদু করে বা যার জন্য যাদু করা হয়,* এবং যে ব্যক্তি কোনো (সুতা-তাগা ইত্যাদিতে) গিট দেয়। আর যদি কেউ কোনো গণক-জ্যোতিষী বা অনুরূপ ভাগ্য বা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন করে এবং তার কথা বিশ্বাস করে, সে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর অবর্তীণ দ্বীনের সাথে অবশ্যই কুফরী করল।”

45- তিনি কোনো এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। আবূ বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন দূত পাঠালেন। লোকজন তখন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। (দূত এ মর্মে ঘোষণা দিলেন যে,) “@উটের গলায় সুতার বা যে কোন মালা যেন অবশিষ্ট না থাকে, এ গুলো কেটে ফেলো।”

49- কতিপয় লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গনক-জ্যোতিষীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন: “তারা কিছুই নয়।” তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! তারা কোন কোন সময় এমন কথা বলে, যা সত্য ও সঠিক হয়ে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “@ঐ কথাটি সত্য যা জিন শয়তান (ঊর্ধ্বজগৎ হতে) ত্বরিত শুনে নেয়। অতঃপর মোরগের করকরানোর মতো শব্দ করে তার বন্ধুর কানে পৌঁছিয়ে দেয়। এরপর সে একশর অধিক মিথ্যা কথা তার সাথে মিলিয়ে দেয়।”

50- একবার মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি তাঁকে ডাকলেন, হে মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং আপনার আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত। তিনি ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং প্রস্তুত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং প্রস্তুত। এরূপ তিনবার করলেন। এরপর বললেন, “@যে কোনো বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।”* মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি কি মানুষকে এ খবর দিবো না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে? তিনি বললেন, তাহলে তারা এর ওপর ভরসা করে বসে থাকবে। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (জীবনভর এ হাদীসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদীসটি বর্ণনা করে গেছেন, যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়।

53- উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর হাবশায় দেখা ‘মারিয়া’ নামক একটা গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। তিনি সেখানে যে সব ছবি দেখেছিলেন, সেগুলোর বর্ণনা দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “@এরা এমন সম্প্রদায় যে, এদের মধ্যে কোন সৎ বান্দা অথবা বলেছেন কোন সৎ লোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ নির্মাণ করত।* আর তাতে ঐ সব ব্যাক্তির ছবি তৈরী করে স্থাপন করতো। এরা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট সৃষ্টি।”

55- “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ দেখতে পাবে, সে যেন উক্ত অন্যায়কে তার হাত দিয়ে পরিবর্তন করে। যদি সে তা করতে সক্ষম না হয়, তবে সে যেন তার জিহ্বা (ভাষা) দ্বারা তা পরিবর্তন করে। যদি সে তাতেও সক্ষম না হয়, তবে সে যেন তার অন্তর দিয়ে [চেষ্টা করে এবং ঘৃণা করে]। আর এটিই হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।”

57- এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন: @আপনি কী মনে করেন , যদি আমি ফরয সালাতসমূহ আদায় করি, রমাদানের সিয়াম পালন করি, হালালগুলোকে হালাল মানি এবং হারামসমূহকে হারাম মনে করি,* আর এর থেকে বেশি কিছু পালন না করি, তবুও কি আমি জান্নাতে যেতে পারব? তিনি উত্তর দিলেন: “হ্যাঁ।” তখন প্রশ্নকারী বললেন: আল্লাহর কসম! আমি এগুলোর থেকে বেশি কিছুই করব না।

60- আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ‘উফাইর নামক গাধার উপরে ছিলাম। তখন তিনি বললেন: “হে মু‘আয! তুমি কী বান্দার উপরে আল্লাহর হক (অধিকার) এবং আল্লাহর উপরে বান্দাহর হক সম্পর্কে জান?” আমি বললাম: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভালো জানেন। তিনি বললেন: “@বান্দার উপরে আল্লাহর হক হচ্ছে, তারা তাঁরই ইবাদাত করবে আর কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শিরক করবে না। আর পক্ষান্তরে আল্লাহর উপরে বান্দার হক হচ্ছে, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে শিরক করবে না, তিনি তাকে আযাব দিবেন না।*” আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কী মানুষদেরকে এটার সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন: “তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দিও না, তাতে তারা (শুধু এটার উপরে) নির্ভর করে বসে থাকবে।”

61- এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! দুটি আবশ্যককারী বিষয় কী কী? তিনি বললেন: “@যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”

63- “আল্লাহ আমার উম্মাতের মধ্য হতে একজনকে কিয়ামাতের দিন সমগ্র সৃষ্টিজগতের সামনে উপস্থিত করবেন।* তারপরে তার সামনে নিরানব্বইটি খাতা উপস্থাপন করবেন, প্রতিটি খাতা দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। তারপরে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন: তুমি এ থেকে কোন একটিও কী অস্বীকার করবে? আমার সংরক্ষক ফিরিশতাগণ কী তোমার সাথে কোন জুলুম করেছে? ঐ ব্যক্তি বলবে: না, হে আমার রব! তখন আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করবেন: তোমার কাছে কোন ওযর আছে? সে বলবে: না, হে আমার রব! তখন আল্লাহ বলবেন: আমাদের নিকটে তোমার একটি বিশেষ ভালো কাজ রয়েছে, সুতরাং তোমার উপরে আজকে একটুও জুলুম করা হবে না। তারপরে তিনি একটি কার্ড বের করবেন, যাতে থাকবে: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।” অতপর বলা হবে: তোমার ওযন তথা পরিমাপকের কাছে উপস্থিত হও! তখন সে ব্যক্তি বলবে: এত বড় বড় খাতার সামনে এ কার্ডটি কী করতে পারবে? তখন তাকে বলা হবে: আজকে তোমার উপরে জুলুম করা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তারপরে ঐ কার্ডটি এক পাল্লাতে রাখা হবে এবং ঐ সমস্ত খাতা আরেকটি পাল্লায় রাখা হবে। তখন সমস্ত খাতা হালকা হয়ে যাবে আর উক্ত কার্ডটি ভারী হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহর নামের থেকে কোন কিছু ভারী হতে পারে না।”

64- “যখন আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি জিবরীল ‘আলাইহিস সালামকে জান্নাতে প্রেরণ করে বললেন:* তুমি জান্নাতের দিকে তাকাও এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি যা প্রস্তুত করে রেখেছি তাও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ কর। জিবরীল জান্নাত দেখে ফিরে আসলেন। তারপরে বললেন: আপনার ইজ্জতের কসম! যে কোন ব্যক্তি এটা সম্পর্কে শোনা মাত্রই সেখানে প্রবেশ করবে। তারপরে আল্লাহ জান্নাতের চারপাশে কষ্টকর বিষয় দ্বারা ঢেকে দেওয়ার জন্য আদেশ করলেন। তারপর বললেন: তুমি আবার তা দেখে এসো এবং তার অধিবাসীদের জন্য যা প্রস্তুত রেখেছি, তা পর্যবেক্ষণ কর। তারপর জিবরীল জান্নাতের দিকে নজর দিলেন, তখন সেখানে সব কষ্টকর বিষয়গুলো দেখে বললেন: আপনার ইজ্জতের কসম! আমি ভয় পাচ্ছি যে, সেখানে কেউই প্রবেশ করতে পারবে না। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন: যাও জাহান্নাম দেখে এসো এবং সেখানে আমি তার অধিবাসীদের জন্য যা প্রস্তুত করে রেখেছি, তা পর্যবেক্ষণ কর। তখন তিনি সেখানে তাকালেন আর দেখতে পেলেন যে, তার এক অংশ অন্য অংশের উপরে আছড়ে পড়ছে। তিনি ফিরে এসে বললেন: আপনার ইজ্জতের কসম! এখানে কেউ প্রবেশ করবে না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তার চারপাশে প্রবৃত্তির লালসা বা কামনা-বাসনা দ্বারা ঢেকে দেওয়ার আদেশ দিলেন। তারপরে তাকে বললেন: যাও, এবার দেখে এসো। তিনি সেখানে তাকানো মাত্র দেখলেন তার চারপাশে সব কামনা-বাসনার বস্তুগুলো দ্বারা আবৃত রয়েছে। তখন তিনি ফিরে এসে বললেন: আমি ভয় পাচ্ছি যে, যেই সেখান থেকে বাঁচার চেষ্টা করুক না কেন, সে তাতে প্রবেশ করবেই।”

66- একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এ যেন বিদায়ী ভাষণ। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন। তিনি বললেন: “@আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (আমীরের) কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো দাস আমীর হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধর এবং তা মাড়ির দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধর।* আর তোমরা দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাক। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”

71- ”নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তিনি বললেন: “@এদের ’আযাব দেয়া হচ্ছে; তবে কোন গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব হতে সতর্ক থাকত না। আর অপরজন চোগলখোরী(একের কথা অন্যজন কে লাগান) করে বেড়াত।”* তারপর তিনি একখানি কাঁচা খেজুরের ডাল নিয়ে ভেঙ্গে দু’ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরের ওপর গেড়ে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেন এমন করলেন? তিনি বললেন: “আশা করা যেতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি শুকিয়ে না যায় তাদের আযাব হালকা করা হবে।”

87- قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةَ الْعَقَبَةِ وَهُوَ عَلَى نَاقَتِهِ: «الْقُطْ لِي حَصًى» فَلَقَطْتُ لَهُ سَبْعَ حَصَيَاتٍ، هُنَّ حَصَى الْخَذْفِ، فَجَعَلَ يَنْفُضُهُنَّ فِي كَفِّهِ وَيَقُولُ: «أَمْثَالَ هَؤُلَاءِ فَارْمُوا» ثُمَّ قَالَ: @«أَيُّهَا النَّاسُ، إِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِي الدِّينِ، فَإِنَّما أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ الْغُلُوُّ فِي الدِّينِ». রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরাতুল ’আকাবার ভোরে তাঁর উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় বলেন: “আমার জন্য কঙ্কর সংগ্রহ করে আন।” আমি তাঁর জন্য সাতটি কঙ্কর সংগ্রহ করলাম। তা ছিল আকারে ক্ষুদ্র। তিনি তা নিজের হাতের তালুতে নাড়াচাড়া করতে করতে বলেন: “এই আকারের ক্ষুদ্র কঙ্কর নিক্ষেপ করবে।” অতঃপর তিনি বলেন: @“হে মানব সকল! দীনের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে তোমরা সাবধান থাকো। কেননা তোমাদের পূর্বেকার লোকেদেরকে দীনের ব্যাপারে তাদের বাড়াবাড়ি ধ্বংস করেছে।”

95- আমার পূর্বে আল্লাহ যে কোন নবীকে যে কোন উম্মতের মাঝে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে তাঁর (কিছু) সহযোগী ও সঙ্গী হত। তারা তাঁর সুন্নতের উপর আমল করত এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের পরে এমন অপদার্থ লোক সৃষ্টি হল যে, তারা যা বলত, তা করত না এবং তারা তা করত, যার আদেশ তাদেরকে দেওয়া হত না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন। আর এর বাইরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।

100- নাজদবাসীদের মধ্য হতে এলোমেলো কেশ নিয়ে এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন। আমরা তার ফিসফিস শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম না যে তিনি কী বলছেন, এমনকি তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একেবারে কাছে চলে আসলেন। তিনি তখন ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন: “দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা।” তখন তিনি বললেন: এছাড়া কি আর কোন সালাত আমার উপরে আবশ্যক? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, তবে তুমি নফল সালাত আদায় করতে পারো। আর রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে।” তিনি বললেন: এছাড়া কি আর কোন সিয়াম আমার উপরে আবশ্যক? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “না। তবে চাইলে নফল সিয়াম পালন করতে পারো।” এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাকাতের কথা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন: এছাড়া কি আর কোন অতিরিক্ত সাদাকা আমার উপরে আবশ্যক? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না। তবে তুমি নফল সাদাকা আদায় করতে পারো। অতঃপর লোকটি এ কথা বলতে বলতে চলে গেল: আল্লাহর কসম, এর উপর আমি কোন কিছু বৃদ্ধিও করবো না এবং কমও করবো না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: @“লোকটি যদি সত্য বলে থাকে, তাহলে সফল হয়ে গেল।”